এটা পাকি কণ্ঠস্বর- স্বদেশ রায়

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খোন্দকার মাহবুব হোসেন তাঁর চেয়ারপার্সন ও দলের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের যে ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে ওই ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেবার দাবি জানিয়েছেন।
এবং দাবি করেছেন জাতিসংঘের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। বিএনপির এই দাবি মনে করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যখন চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে সেই ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান অনুরূপ দাবি করেছিল। তারা যুদ্ধ বন্ধ করে জাতিসংঘের অধীনে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য বলেছিল। এবং এমন প্রস্তাব তারা ও তাদের মিত্ররা সেদিন জাতিসংঘেও এনেছিল। কিন্তু তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে সেদিন জাতিসংঘ সে প্রস্তাব পাস করতে পারেনি। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা এবং বাংলাদেশ সরকার ওই প্রস্তাবে বিন্দুমাত্র কান দেয়নি। কোনরূপ বিভ্রান্ত হয়নি। বরং তারা বুঝতে পারে, পাকিস্তান মানসিকভাবে পরাজিত হয়ে গেছে। তাই আরও বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে বিজয়ের দিকে এগুতে থাকে।
আজ খন্দকার মাহবুব যে প্রস্তাব দিয়েছেন এটাও মূলত ওই পাকিস্তানী ফর্মুলা। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে এ দেশের নতুন প্রজন্ম জেগে উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে। তাদের ফাঁসি রোধ করার আর কোন উপায় নেই। এখন কাদের মোল্লাসহ প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ, যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমাণিত ১৯৭১ সালে। তাদের রায় হয়ে গেছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। নানান ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ সেটা বাস্তবায়িত করতে পারেনি। আজ আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তরুণ প্রজম্ম এটা বাস্তবায়ন চায়। তারা গত পাঁচ দিন এই দাবিতে ঢাকার প্রজন্ম স্কোয়ার সহ সারা দেশে অবস্থান নিয়েছে। তারা ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম মহাসমাবেশ করে জানিয়ে দিয়েছে যাদের বিচার চলছে তাদের প্রত্যেককে ফাঁসি দিতে হবে। এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। অন্যদিকে তারা দৃপ্ত শপথ নিয়েছে দেশকে রাজাকার মুক্ত করবে। এছাড়া বাংলাদেশে নতুন করে রাজাকার তৈরি করছে যে ফ্যাক্টরি সেই জামায়াত ইসলামীকে আইন করে নিষিদ্ধ করার দাবি সরকারের কাছে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ইতোমধ্যে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার যাবতীয় আইনগত দিক নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কাজ শুরু করেছেন। অবশ্য ট্রাইবুনালের দুটি রায়ের অবজারভেশনে বলা হয়েছে, দল হিসেবে জামায়াত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছে। তাই জামায়াতকে এখন নিষিদ্ধ করতে অত আইন খোঁজার দরকার নেই। দেশের বিরুদ্ধে যে দল যুদ্ধ করেছে ওই দল কোন মতেই ওই দেশে রাজনীতি করতে পারে না। তাই ট্রাইব্যুনালের রায়ের এই অবজারভেশন নিয়ে কেউ সুপ্রীমকোর্টে গেলেই বিষয়টি ফয়সালা হয়ে যায়। নিষিদ্ধ ঘোষণা করতেই হবে জামায়াতকে। কারণ তারা এ দেশের বিরুদ্ধে দল হিসেবে যুদ্ধ করেছে।
তাই তরুণ প্রজম্ম রাস্তায় ও সারাদেশে নামার পরে এখন বিচারাধীন সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির বিষয়টি যে সময়ের ব্যাপার মাত্র এটা দেশবাসী বুঝে গেছে। অন্যদিকে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়াও এখন সময়ের বিষয় মাত্র। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সপ্তাহে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল এখন প্রজম্ম স্কোয়ারের তরুণ প্রজন্মও সেই রকম বিজয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে। এই সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়া ও জাতিসংঘের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাবের সঙ্গে ১৯৭১ সালের ইয়াহিয়ার প্রস্তাবের শতভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেদিন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ইয়াহিয়া বিভ্রান্ত করতে পারেনি। শাহবাগের এই তরুণ টেকনোলজি প্রজন্মকেও তাই ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা বিভ্রান্ত করতে পারবে না। বরং শুধু এই কয়জন যুদ্ধাপরাধী ফাঁসি নয়। বাকি ১১ হাজারের বিচার ও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তারা বিজয়ী হবে। ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা কোন জাতিসংঘ দেখিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
তরুণ প্রজন্ম তাদের থেকে অনেক বুদ্ধিমান এবং অনেক যোগ্য। তাদের মা-বোন-ভাইকে যারা হত্যা করেছে। এ দেশের মা-বোনের যারা ইজ্জত লুটেছে তাদের বিচার করার জন্য তাদের অগ্রজ শহীদের রক্তে কেনা দেশটিই যথেষ্ট। কোন জাতিসংঘের প্রয়োজন নেই।

No comments

Powered by Blogger.