বিশ্বব্যাংকের বিদায়-স্বপ্নের পদ্মা সেতু কিভাবে হবে!

অবশেষে চূড়ান্ত হয়ে গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে না এবং বাংলাদেশও সেই ঋণ নেবে না। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে কয়টি বিকল্প প্রস্তাব আছে, এ মাসের মধ্যেই তার কোনো একটি চূড়ান্ত করা হবে। বিকল্প প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, চীন ও ভারতের প্রস্তাব।
এ ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের চিন্তাভাবনাও আছে। তবে বিকল্পগুলোর উপযোগিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। এদিকে বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে এক বছরেরও কম। এখন দেখার পালা, এই স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার বাস্তব কী অগ্রগতি দেখাতে পারে।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে অনেক টানাপড়েন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয় এবং ব্যবস্থা নিতে বলে। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে গত বছরের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলে বিশ্বব্যাংক শর্তসাপেক্ষে তা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ঋণের অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে বাস্তব কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সরকার চিঠি দিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ ফিরিয়ে নিয়েছে। অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঋণ না নিয়ে পদ্মা সেতু করা গেলেই সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু সেই সংগতি বর্তমানে আমাদের আছে কি? বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় শিল্পের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে গিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? সে ক্ষেত্রে হয়তো তিনটি দেশের কোনো একটির কাছ থেকে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এসব দেশের ঋণের সুদের হার, পরিশোধের সময় এবং অন্যান্য শর্ত বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে কি না, তা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। বিশ্বব্যাংককে 'না' বলার পেছনে যুক্তি দেখানো হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের জন্য আর অপেক্ষা করা হলে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতি সরকারের এই আগ্রহ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু এ কারণে যদি বাংলাদেশের ঘাড়ে একটি বিশাল অঙ্কের অতিরিক্ত সুদের বোঝা চাপে, তাহলে সেটি কোনোক্রমেই ভালো কাজ হবে না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা এবং এর দায়ভার বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের দায়ভার দেশের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করাটা মোটেও উচিত হবে না। অন্যদিকে খরচ কমাতে সেতুর নকশা বদল করে কেবল সংযোগ করার যে কথা হচ্ছে, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পদ্মা সেতু বারবার করা যাবে না, যা করতে হয় একবারেই করতে হবে।
আমরা চাই, দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হোক। কিন্তু কেবল প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রয়োজনে আরো সময় নিয়ে সঠিক পদক্ষেপটি নিশ্চিত করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.