চীনের আরও বিনিয়োগ চাই, সব সহায়তা দেয়া হবে- বেজিংয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রতি শেখ হাসিনা

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বিদ্যুত, গ্যাস, জ্বালানি, আইসিটি, বস্ত্র, পেট্রো-কেমিক্যাল, সিরামিকস, ওষুধ, ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি,
অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি এবং একই সঙ্গে বিনিয়োগের জন্য আপনাদের সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস প্রদান করছি। বাংলাদেশে আপনাদের এ বিনিয়োগ হবে লাভজনক এবং তা দু'দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।'
চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের আমন্ত্রণে বেজিংয়ে পাঁচদিনের সরকারী সফরে এসে শুক্রবার সকালে চীনা শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে চীনের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে রয়েছে উচ্চ মুনাফাসম্পন্ন বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত এবং নমনীয় আর্থিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব নীতির মধ্যে রয়েছে কর অবকাশ, আমদানিকৃত মেশিনারির ওপর হ্রাসকৃত শুল্ক, দ্বৈতকর পরিহার, রয়েলটি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, প্রযুক্তিগত ফি-এর রেমিটেন্স সুবিধা, শতকরা ১শ' ভাগ বৈদেশিক ইকুইটি বরাদ্দ, যেকোন সময় বিনিয়োগ প্রত্যাহার সুবিধা, প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিনিয়োগ এবং ডিভিডেন্ড ফেরতের সুযোগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীন উভয়দেশের এয়ারলাইন্সের মাল্টি ডেজিগনেশনস এবং মাল্টি ডেস্টিনেশনস ব্যবস্থা চালু করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, 'চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আমরা বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ ও সুরৰা এবং দ্বৈতকর পরিহার বিষয়ে দু'টি চুক্তি সই করেছি।'
বাংলাদেশকে বিনিয়োগবান্ধব স্থান হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে রয়েছে ১৫০ মিলিয়ন জনসংখ্যার এক বিশাল বাজার, প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে সহজলভ্য শ্রমিক, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা শ্রেণীর উপস্থিতি, শক্তিশালী আইনগত কাঠামো এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাজারে জিএসপি সুবিধা। তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা তাঁদের উদ্বৃত্ত শিল্প কারখানাসমূহ যেমন বস্ত্র, ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকস ইত্যাদি শ্রমঘন শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক নৈকট্য, অভিন্ন মূল্যবোধ এবং প্রাচীনকাল থেকে দু'দেশের মধ্যে সফর বিনিময় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে উৎসাহ যুগিয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫৩ ও ১৯৫৭ সালে চীন সফরের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি প্রায় সময়ই চীনের অফুরনত্ম সম্ভাবনা এবং আমাদের দুই দেশের গভীর সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা কীভাবে পরস্পর লাভবান হতে পারি, সে সম্পর্কে বলতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়নের ৰেত্রে চীনের সহযোগিতাকে সব সময়ই স্বাগত জানায়। দু'দেশের মধ্যে ৩৫ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে উভয়দেশের বাণিজ্য অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাৰরের কারণে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ করে ১৯৯২ সালে স্বাৰরিত মুদ্রা বিনিময় সংক্রানত্ম বাণিজ্য চুক্তির কথা উলেস্নখ করেন। তিনি আরও বলেন, 'আমাদের রফতানিকে উৎসাহিত করতে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে চীন বাংলাদেশের ৮৪টি পণ্য শুল্কমুক্ত এবং এশিয়া প্রশানত্ম মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির আওতায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রবেশাধিকার প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ অর্থবছরে আমাদের দ্বিপাৰিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরে এই পরিমাণ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, দৰিণ এশিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও বাণিজ্যিক ভারসাম্য তীব্রভাবে চীনেরই অনুকূলে।
তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশের রফতানিজাত পণ্য হচ্ছে মূলত চামড়া, পাটজাত পণ্য, রাসায়নিক সার, চিংড়ি, চা ইত্যাদি। দু'দেশের আগ্রহ এবং ঐকানত্মিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই তালিকাকে আরও সমপ্রসারণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনা উদ্যোক্তারা ২০১০ সালের জানুয়ারি পর্যনত্ম বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডে ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ১৮৬টি প্রসত্মাব নিবন্ধন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রফতানি প্রত্রিয়াকরণ অঞ্চলে চীনের ৫৫টি সংস্থায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রসত্মাব প্রক্রিয়াধীন । ইতোমধ্যে চীনের উদ্যোক্তাগণ ২৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন যা প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
এর পর চীনা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দু'দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যকে আরও উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ও চীনের কুনমিংয়ের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরম্নত্বারোপ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি দু'দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে চীনের সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর হি কাঙ, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, চীনা ব্যবসায়ী ঝিয়ে ওয়ে, চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কপের্ারেশনের সহ-সভাপতি মিজ ডানিলানও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাংলাদেশের ব্যবসায়ী দল।

No comments

Powered by Blogger.