'জামায়াতকে কোটি কোটি টাকা ছড়ানোর সুযোগ দেয়া যাবে না'

জামায়াতে ইসলামীর অর্থলগি্নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন করতে এ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে দলটির নেতারা বলেন,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ছড়াবে। তাদের এই সুযোগ দেয়া যাবে না। বরং জামায়াতের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে দেশকে গণতন্ত্র ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হবে।
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিােভ সমাবেশে নেতারা এ দাবি জানান। জামায়াত আমির নিজামীকে মহানবী (স.)-এর সমক দাবি করায় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারসহ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদীর কুশপুতুলসহ একটি বিােভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদণি করে। এই সময় কুশপুতুলগুলো দাহ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্য আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, জামায়াতী চক্র জনগণকে বিভ্রানত্ম করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে চায়। তিনি বলেন, জামায়াত মহানবী (স.)-এর সঙ্গে তাদের নেতা নিজামীর তুলনা করে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। অতীতে বিএনপিও মহানবী (স.)-এর সঙ্গে তাদের নেতা জিয়াউর রহমানকে তুলনা করেছিল। অর্থাৎ সব রসুনের গোড়াই এক। এরা ইসলাম মানে না, কোরান মানে না। ধর্মের নামে ব্যবসা করে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে তাঁর সরকারের দৃঢ় পদৰেপের কথা উলেস্নখ করে বলেন, জামায়াত সৃষ্ট জেএমবি-বাংলা ভাইরা ফাঁসি এড়াতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী এবং নিজামী-মুজাহিদরাও আইনের দড়ি এড়াতে পারবে না। জনগণের রায় নিয়েই নিজামী গংকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ করা জনগণের দাবি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দেশকে গণতন্ত্র ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, জামায়াতকে আর সময় দেয়া যাবে না। সময় দিলেই তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র চালাবে। তাই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এদের রাজপথে মোকাবেলা করতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম বলেন, জামায়াত শত শত এনজিও ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করবে। তাই বিচার নিষ্কন্টক করতে জামায়াতের অর্থলগি্নকারী এসব প্রতিষ্ঠানকে অবিলম্বে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হাবিবুর রহমান সিরাজ, ফয়েজউদ্দিন মিয়া, শেখ বজলুর রহমান, মুকুল চৌধুরী, গাজী লুৎফুল কবির রেনু, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, আওলাদ হোসেন, শাহে আলম মুরাদ, আসলামুল হক আসলাম এমপি, ডা. দিলীপ রায়, ইমতিয়াজ খান বাবুল, সুফী সুলতান আহমেদ প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে জনাব পারভেজ বলেন, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো কম মূল্যে তৈরি পোশাক রফতানি করতে পেরেছে মূলত ওই দেশগুলোর সরকার তাদের নীতি সহায়তা দিয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে ওই দেশগুলোর সরকার তাদের উদ্যোক্তাদের কম মূল্যে তৈরি পোশাক রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা তৈরি পোশাকের মূল্য কমাতে পারিনি, কারণ আমরা সরকারের কাছ থেকে কোন সহায়তা পাইনি। উল্টো জ্বালানি সঙ্কট আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে মার্কিন আমদানিকারকরা সসত্মায় তৈরি পোশাক আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছে, বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছে।
দেশের রফতানিমুখী খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বৈশ্বিক মন্দার চেয়েও ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছে গ্যাস সঙ্কটের কারণ। গ্যাস সঙ্কটের কারণে নিট ও ওভেন পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে গ্যাসচালিত জেনারেটর ব্যবহারকারী তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। দিনে সাত থেকে আট ঘন্টা বিদু্যত না থাকার কারণে এ সকল কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে ওই কারখানাগুলোর অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আবার কারখানা বন্ধ করে দিলেও তাদের মুক্তি মিলবে না। বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণের কারণে তাদের সর্বস্বানত্ম হয়ে যেতে হবে। তাঁরা বলেন, তীব্র গ্যাস ও বিদু্যত সঙ্কটের কারণ দেশে তৈরি পোশাক ও তার সহযোগী কোন শিল্প হচ্ছে না। বিদ্যমান উৎপাদন হ্রাসের কারণে কেউ সাহস করছে না। ফলে এ খাতে নতুন শিল্পায়ন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। এতে দেশ নতুন কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ সরকার প্রথম দফায় তিন হাজার কোটি টাকর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তাতে তৈরি পোশাক খাতকে অনত্মভর্ুক্ত করেনি। দ্বিতীয় দফায় এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে তৈরি পোশাকের জন্য কিছু নীতি সহায়তা প্রদানের কথা ঘোষণা করা হলেও তা আজও বাসত্মবায়িত হয়নি।
চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি লৰ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩৯৮ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রফতানি আয়ের লৰ্যমাত্রা ছিল ৭৮৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৬৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ লৰ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে প্রায় ১১৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে গত বছরের চেয়ে নিট ও ওভেন পোশাকের রফতানি কমেছে সাত শতাংশ হারে। এ প্রসঙ্গে আনোয়ারম্নল আলম চৌধুরী পাভেজ বলেন, চলতি বছর তৈরি পোশাক রফতানির লৰ্যমাত্রার ওপর সরকার যদি দেড় শতাংশ হারে সুবিধা প্রদান করে, তাহলে উদ্যোক্তারা দুই থেকে তিন শতাংশ কম মূল্যে তৈরি পোশাক রফতানি করতে সৰম হবে। তাহলে বাংলাদেশ আর তার রফতানি বাজার হারাবে না। এ ব্যাপারে সরকারের উচিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আস্থায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদৰেপ গ্রহণ করা।
তিনি বলেন, একদিকে বৈশ্বিক মন্দা অন্যদিকে গ্যাস বিদু্যত সঙ্কটে তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দেশ প্রত্যৰভাবে বছরে প্রায় তিন লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আরও প্রায় সাড়ে দশ পরোৰ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.