অগ্নিঝরা মার্চ

২০ মার্চ, ১৯৭১। ১৫ তারিখ থেকে শুরম্ন হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পথে। বন্ধ হয়ে যায় সমঝোতার সমস্ত পথ।
সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা ছাড়া বাঙালীর সামনে কোন পথ খোলা ছিল না। নরঘাতক জেনারেল টিক্কা খানরা গোপন বৈঠক করে নির্বিচারে বাঙালী নিধনে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।
যদিও চতুর্থ দফা বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু বলেন, আলোচনা আরও হবে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য আনা হচ্ছে- এই মর্মে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'বাংলাদেশের সব খবর আমার জানা আছে।
বাঙালী বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আলোচনায় বসাটা ছিল সম্পূর্ণ লোক দেখানো, প্রহসন মাত্র।
আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানে স্বৈরশাসকরা বাঙালীদের স্বাধীনতার সমস্ত আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার কৌশলে ব্যস্ত ছিল। এরই মধ্যে পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা নির্বাচনে বাঙালী নিধনে অপারেশন সার্চলাইটের সমসত্ম পরিকল্পনা করে ফেলে। এদিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হামিল ও জেনারেল টিক্কা খানের এক বৈঠক থেকেই অপারেশন সার্চ লাইটের সিদ্ধানত্ম চূড়ানত্ম করা হয়।
একাত্তরের ২০ মার্চ ছিল ঘটনাবহুল উত্তেজনাপূর্ণ একটি দিন। আন্দোলনে শানত্মিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, 'একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য জনগণ যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তাই মুক্তির লৰ্য অর্জিত না হওয়া পর্যনত্ম সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। শানত্মিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে এ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে আমি বাংলাদেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাই। এবারের সংগ্রাম প্রতিটি শহর, নগর, বন্দর ও গ্রামে। আবালবৃদ্ধবনিতা বাংলাদেশের দাবির পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ, সারা বিশ্বের স্বাধীন জাতি কিভাবে স্বীয় লৰ্যপানে এগিয়ে যেতে পারে, বিশ্বের সামনে বাংলার মানুষ আজ তার উজ্জ্বল দৃষ্টানত্ম স্থাপন করেছে।'
অসহযোগ আন্দোলনের ঊনবিংশ দিবসে একাত্তরের অগি্নঝরা এদিনই বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতি দিয়ে ২৩ মার্চ লাহোর প্রসত্মাব উপলৰে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এদিন বিহারী ও পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাঙালীর সংঘর্ষ হয়েছে মিরপুর, চট্টগ্রাম, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক।
সারাদেশে এক উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে। ৰুব্ধ বাঙালীরা পথে নেমে আসে। যুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে দেশজুড়ে। কিন্তু তখনও পূর্ব পাকিসত্মানবাসী বুঝতে পারেনি যে অতর্কিতেই তাদের ওপর চালানো হবে অপারেশন সার্চলাইট। জেনারেল ইয়াহিয়া খান এদিন তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর প্রমুখকে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক প্রস্তুতির পূর্ণ রূপ দেন। ওদিকে প্রতিদিনই ৬ থেকে ১৭টি পর্যনত্ম ফাইটে পাকিসত্মান থেকে সৈন্য ও যুদ্ধের রসদ নিয়ে আনা হচ্ছিল পূর্ব পাকিসত্মানে। স্থল ও বিমান শক্তি দ্বিগুণ করা হয়।
একাত্তরের এদিন ছাত্র ইউনিয়ন এক ভিন্ন রকমের কর্মসূচী পালন করে। তাদের উদ্যোগে গঠিত গণবাহিনী ১০ দিনের প্রশিৰণ শেষ করে রাজপথে এক শোভাযাত্রা বের করে। এতে প্রতিটি সদস্য সেদিন ড্যামি রাইফেল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন নুরম্নল ইসলাম নাহিদ (বর্তমান শিৰামন্ত্রী)। তাঁর নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রা বের হয়। সে সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও সর্বৰণিক বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে ও ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেদের সংগঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.