প্রেমকৃষ্ণ হত্যায় ডাকাত শহীদের কিলিং স্কোয়াড জড়িত!- রিমান্ডে নান্টুর চাঞ্চল্যকর তথ্য

শাঁখারী বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রেম কৃষ্ণ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পলাতক ডাকাত শহীদের কিলিং স্কোয়াড জড়িত বলে তথ্য মিলেছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন পার হলেও নতুন কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে দুর্ধর্ষ ডাকাত শহীদের অন্যতম সহযোগী নান্টুকে আগের দিন, তিন দিনের পুলিশী রিমান্ডে নেয়ার পর মঙ্গলবার সে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে মামলার তদনত্ম কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি 'হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া পুরো কিলিং স্কোয়াডকে চিহ্নিত করা গেছে' মনত্মব্য করে শীঘ্রই তাদের ধরে ফেলবেন বলেও দাবি করেন ।
কেরানীগঞ্জের সুপারি মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজী শওকতের দোকানে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে দুইবার হামলা এবং গুলি করে আসলাম ও এমদাদ নামক দুই কর্মচারীকে আহত করার অভিযোগে ২৬ ফেব্রম্নয়ারি ডাকাত শহীদের অন্যতম সহযোগী নান্টুকে গ্রেফতার করে কেরানীগঞ্জ থানাপুলিশ। কারাগারে আটক নান্টুর দ্বিতীয় দফায় পুলিশী রিমান্ড চলাকালেই ব্যবসায়ী প্রেম কৃষ্ণ ৪ মার্চ হত্যাকান্ডের শিকার হন। প্রেম ও তার ভাই স্বর্ণব্যবসায়ী অমল রায়ের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পর দিতে বিলম্ব করায় সেদিন সকাল পৌনে আটটায় ভাতিজিদের নিকটের স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ফিল্মি স্টাইলে উপর্যুপরি গুলি করে প্রেমকে হত্যা করা হয়। ব্যবসায়ী প্রেমকে হুমকি দেয়ার জন্য যে মোবাইলটি ব্যবহার হতো সেটি ছিল নান্টুর। সেই সূত্র ধরেই কারাগারে থাকলেও নান্টু এই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে তাকে এই মামলায়ও গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশী রিমান্ডে আনা হয়েছে। নান্টু জিজ্ঞসাবাদে সে নিজে জেলে থাকায় এই হত্যার দায়িত্ব ডাকাত শহীদের দুই সহযোগীর কাছে অর্পণ করার তথ্য দিলেও কোথায় তাদের যোগাযোগ হয়েছে এ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে থানা পুলিশের একটি সূত্র মতে, নান্টুকে পুলিশী রিমান্ডের জন্য আদালতে নেয়া হলেই সে সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকতে পারে।
ব্যবসায়ী প্রেমকৃষ্ণ ২০ নং কৈলাশ ঘোষ লেন, শাঁখারী বাজারের যে চার তলা বাড়িতে ভাড়া থাকত তার বাড়িওয়ালার বিরম্নদ্ধে পুলিশের অভিযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের জিজ্ঞসাবাদ করা হয়নি বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রের অভিযোগ রয়েছে। নিহতের পারিবারিক সূত্র মতে, বিগত কোরবানির ঈদের আগে ও এই চক্রটি চাঁদা দাবি করে বাড়িওয়ালার এক ছোটভাই মারফত তাদের কাছে টাকা পেঁৗছে দিতে বলে। এবারও এমনই নির্দেশনা ছিল বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিকটাত্মীয়ের অভিযোগ। এ সম্পর্কে মামলার তদনত্ম কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার দারোগা জাহাঙ্গীর কবির খান জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি এমন কোন অভিযোগ পাননি। তবে বিষয়টি তদনত্ম করে দেখবেন।
নান্টুকে গ্রেফতার করা কেরানীগঞ্জ থানার দারোগা মাঈনুদ্দিন বলেন, নান্টুকে প্রেমকৃষ্ণ হত্যা মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নান্টুর তথ্য মতে, সে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে চলে আসায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রেম কৃষ্ণের বিষয়টি সমাধা করতে অনুরোধ করে কোতোয়ালি ও সূত্রাপুর এলাকার ডাকাত শহীদের চিহ্নিত চাঁদাবাজ বিদু্যত ও কাওসারকে। টাকা ওঠানো না গেলে তাকে হত্যার দায়িত্বও পড়ে তাদের ওপর। ব্যবসায়ী প্রেমকে যে দুটি মোবাইল ফোন থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় তার একটির নম্বর '০১৭৩৪৪৮৩০০০' যেটি ব্যবহার করত কেরানীগঞ্জ এলাকার ডাকাত শহীদের চাঁদাবাজির কমান্ডার ওমর ফারম্নক ওরফে আল-আমিন ওরফে নান্টু এবং অন্যটি ছিল আননোন নম্বর অর্থাৎ বিদেশ থেকে আসা ফোনকল। সেই কলদাতা স্বয়ং ডাকাত শহীদ নিজে বলেই পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে। কেরানীগঞ্জ থানার দারোগা মঈনুদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, নান্টু তার ওই মোবাইল থেকেই ডাকাত শহীদের নামে একাধিক ব্যক্তিকে চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেছে। গুলিতে টার্গেট ছাড়া অন্য ব্যক্তিকে আহত করে ভীতি সঞ্চার করেছে। এক টার্গেটের ডান হাতে গুলি করার পর চাঁদা পেয়ে গেলে তাকে আর হামলা করা হয়নি এমন ঘটনাও ঘটিয়েছে। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী নুরম্নল ইসলাম নিজে এবং কেরানীগঞ্জের সুপারি মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজী শওকতের দোকান কর্মচারী আসলাম ও এমদাদ আহতদের তালিকায় রয়েছে। এজন্য পৃথক দুটি মামলায় আসামিও হয় নান্টু। তার সহযোগী আসলাম শাহীন, রাজিব জাহাঙ্গীরকেও গ্রেফতার করা হয়। প্রতিটি ঘটনায় প্রেম কৃষ্ণকে চাঁদা দাবি করা মোবাইল থেকেই চাঁদা দাবির রেকর্ড রয়েছে। সেই মোবাইল নম্বর ট্রেস করেই ২৬ ফেব্রম্নয়ারি নান্টুকে তিনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কান্দলকা গ্রাম থেকে উক্ত মোবাইল ফোন এবং অন্য একটি ফোনসহ সশস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার করেন। নান্টু জিজ্ঞাসাবাদে শহীদ ভারতে গ্রেফতার নয় বরং দুবাই থেকে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে বলেও জানিয়েছে। নান্টুর সঙ্গে ডাকাত শহীদের নিয়মিত যোগাযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় সিআইডির সিনিয়র পুলিশ সুপার আব্দুলস্নাহ আরেফের কাছে। ইতোপূর্বে আরেফের দাবি মতে, আহসানউলস্নাহ মাস্টার এমপি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি দিপু, শীর্ষ সন্ত্রাসী হারেস এবং ডাকাত শহীদ ভারতে গ্রেফতার হওয়ায় তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরম্নল ইসলাম জয় ভারতে গ্রেফতার হবার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলা অবস্থায় সে ছাড়া পেয়ে গা-ঢাকা দেয়। শহীদের বেলায় তেমনটি ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি জানেন এখনও ভারতে গ্রেফতার শহীদ। এছাড়া অন্য কোন তথ্য এ মুহূর্তে তার হাতে নেই।

No comments

Powered by Blogger.