খালেদার সমালোচনায় সংসদে ঝড়

বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হ¯স্তক্ষেপ কামনাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতা হিসেবে উল্লেখ করে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন মহাজোটের এমপিরা।
তারা বিরোধী নেত্রীকে  ওই বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলেছেন। এমপিরা বলেন,ওয়াশিংটন টাইমসে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্য তার জনগণের উপর আস্থাহীনতা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ পেয়েছে। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীসহ মহাজোটের এমপিরা এসব কথা বলেন। এ সময় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।  প্রথমে ফ্লোর নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমন অনির্ধারিত বির্তকের সূচনা করেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী, তারানা হালিম, বেবী মওদুদ, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী,নাজমা আক্তার ও অপু উকিল। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন,ওয়াশিংটন টাইমস অনলাইনে খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করাই তার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছেন। জন-সমর্থন নেই বলেই পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে দেশ ও আন্তজার্তিকভাবে ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে আন্তজার্তিকমানের। এ বিচারে সমর্থণ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। খালেদা জিয়া দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সরকার র‌্যাব দিয়ে ৩০০ লোককে হত্যা করেছে। এমন অসত্য তথ্য দিয়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই সরকার তা করতে পারে না। বরং জিয়াউর রহমনই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামীদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি আইন করেছিলেন। আর খালেদা জিয়া ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে বিনা-বিচারে মানুষ হত্যা করেছিলেন। এই হত্যার জন্য খালেদা জিয়ার বিচার না হয় তিনিও এই সংসদে ইনডেমনিটি পাস করেছিলেন। বিরোধী দলীয় নেতা বাংলাদেশকে লিবিয়া, মিশর ও আফগানিস্তান বানাতে চান বলেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশে তত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থার সমর্থন করবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কারণ তিনি ক্ষমতায় থেকে পুন:নির্বাচিত হয়েছেন। মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের নির্বাচিত সরকারের ৪বছর এবং আগের তত্ত্বাবধায় সরকারের ২বছরকে পরিবারতান্ত্রিক অবস্থায় চলছে, এটা বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন পোষ্টে পাঠানো প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,  শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তারা দু’জনই উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে নিজ উপার্জনের মাধ্যমে জীবন চালাচ্ছেন। অথচ খালেদা জিয়া এরশাদ সরকারের সময়ে তার কাছ থেকে ভাতা নিয়ে তার সন্তানদের পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার এবং সন্তানদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন হদিস নেই। মতিয়া চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘জজ ওয়াশিংটন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে বলেছিলেন, সৈন্যদের সম্পর্কে কিছু বলবো না। যারা দেশের মানুষ হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগীতা করেছেন তাদের জন্য বুলেটও খরচ করতে চাই না। গরম আলকাতরায় চুবিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, জাতি যখন জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তখন তিনি এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে আসুন। এটা যেন মাকির্নীদের প্রতি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তানের আহবানের মতো মনে হয়েছে। খালেদা জিয়ার এ আবেদন অকল্পনীয় অপরাধ। এটা রাষ্ট্রদ্রোহীতা। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টার কারণে দেশের মানুষের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি মানবাধিকারের কথা বলেছেন, অথচ তিনি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী আপনার কোন অধিকারে রাজনীতি করেন। আপনিও তো জিয়া পরিবারের হয়ে রাজনীতি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কী পরিবার থেকে রাজনীতে আসেনি? যদি কোন পরিবার যোগ্যতা রাখে তাহলে তারা অবশ্যই রাজনীতিতে আসার অধিকার রাখে। সাংবিধানিকভাবে শেখ হাসিনা তিলে তিলে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তিনি বাতিল করেছেন। জাতির কাছে আমাদের যে ৪১ বছরের ঋণ, যারা হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য ওই হত্যাকারীদের বিচারের লক্ষ্যে আর্ন্তজাতিকভাবে অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আপনারা বলছেন বিচারের মান থাকতে হবে। প্রত্যেক দেশেই বিচারের আইনগত সংস্কৃতি রয়েছে। সে অনুযায়ী বিচার হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করারও বিধান রাখা হয়েছে। আপনি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বিশ্বাস করলে আপনি সংসদে এসে এসব কথা বলতে পারতেন। অথচ তা না করে চিঠি দিয়ে বিদেশে যে নালিশ করেছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহীতা। তাকে এ কারণে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়ার ওয়াশিংটন পোষ্টে লেখা পড়লাম তখন উপলদ্ধি করার চেষ্টা করলাম এমন লেখার যোগ্যতা তিনি কোথা থেকে অর্জন করলেন। এই বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের ইতিহাসকে বিবৃত করেছেন। পাকিস্তান সরকারকে ৭১সালে অস্ত্র দিয়ে মার্কিন প্রশাসন সাহায্য করেছেন। পশ্চিমা দুনিয়া মৃত্যুদন্ডকে ঘৃণা করে এমনটি ভেবে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য স্বাধীনতা বিরোধীদের  পক্ষে কথা বলছেন তা স্পষ্ট করেছেন। তার যে চক্রান্ত ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। আমার বিশ্বাস বিদেশীদের সাহায্য কামনা করে কোন লাভ হবে না। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ওই নিবন্ধ খালেদা জিয়ার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী সত্যিই ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। তবে সেই গৃহযুদ্ধ দেশে নয়, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের গৃহে গৃহে শুরু হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে সংসদকে অস্বীকার করে বিদেশে নালিশ করে প্রমাণ করলেন বিদেশে তাঁর প্রভু রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হউক। জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাকে ওই নিবন্ধ যারা লিখে দিচ্ছে, তারা আপনাকে কিসের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন তা হয়তো আপনি বুঝতেও পারছেন না। মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘পাগলা কুত্তা’ কামড়ায়নি যে আপনার নিবন্ধের প্রতি তারা সমর্থন দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.