আইনের সংশোধনী প্রস্তাব আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে- সর্বোচ্চ ৬০ দিনে আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ ও রায়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরও আপিলের সুযোগ রাখা হচ্ছে। আপিলের ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।
এ সময়ে না পারলে গ্রহণযোগ্য কারণ দেখিয়ে আপিল বিভাগ আরও ১৫ দিন সময় পাবেন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৬০ দিনে আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনের প্রস্তাবে এসব বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবটি আজ সোমবার মন্ত্রিসভায় উঠছে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গতকাল রোববার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
এর আগে আইন সংশোধনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী তাঁর কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী এবাদুল হক, আবদুর রশীদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আইন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম শাহ আলম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানসহ আইন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। গতকালই আইন কমিশন বর্তমান আইনের আপিলের অধিকার-সংক্রান্ত দুটি ধারায় শব্দগত সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়।
আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের মতামত বা প্রত্যাশা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও আইন সংশোধন করা হয়। এ আইনও জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংশোধন করা হচ্ছে।
এই সংশোধনী হলে তা হবে বর্তমান সরকারের সময়ে এ আইনে তৃতীয় সংশোধনী। ২০০৯ সালের ৯ জুলাই প্রথম সংশোধনীতে আসামি খালাস পেলে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মূল আইনে কেবল আসামিপক্ষের আপিলের বিধান ছিল। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সংশোধনীতে আপিল আবেদনের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এর পর থেকে বিক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম কাদের মোল্লাসহ মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে লাগাতার আন্দোলন করছে। এ কর্মসূচিতে প্রতিদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছে। রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন। এ পরিস্থিতির মধ্যে আইনটি সংশোধন হচ্ছে।
শফিক আহমেদ বলেন, সংশোধনীর প্রস্তাব সোমবার (আজ) মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পেলে এ সপ্তাহের মধ্যেই প্রয়োজনীয় কাজ শেষে প্রস্তাবটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে। তিনি আশা করছেন, এই অধিবেশনেই এটি পাস হবে। তিনি বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে আসামিপক্ষের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ ও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপিল করার বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সমতা আসছে।
বিকেলে আইনমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী আগের মতোই ৩০ দিনের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। আপিলের পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে এ সময়ের মধ্যে যদি আপিল নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে এর গ্রহণযোগ্য কারণ দেখিয়ে আরও ১৫ দিন সময় পাবেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যেই আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে।
তবে দুপুরে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রস্তাব করার কথা জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ৬০ দিনের মধ্যে না পারলে গ্রহণযোগ্য কারণ দেখিয়ে আরও ৩০ দিন সময় পাবেন আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা আপিল নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময় ৬০ দিনের প্রস্তাব করেছি।’
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রস্তাবে আইনের ২১(২) ধারায় ‘সরকার’ শব্দের পর ‘অথবা যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ ও খালাস শব্দের সঙ্গে ‘অপর্যাপ্ত দণ্ড’ এবং ২১(৩) ধারায় দণ্ডের সঙ্গেও ‘অপর্যাপ্ত দণ্ড’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, আসামি যে অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন, কেবল ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধেই সরকার আপিল করতে পারবে। আইনটি সংশোধন হলে পুরো রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.