কবীর চৌধুরী স্মরণ ও রবীন্দ্রস্মারক গ্রন্থমেলা প্রকাশনার বর্ষপূর্তি

 শনিবার ছিল মুক্তচিন্তার প্রতিনিধি জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর ৯১তম জন্মবার্ষিকী। বিকেলে প্রয়াত এই বরেণ্য শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদককে স্মরণের আয়োজন করা হয় ঢাকা ক্লাব প্রাঙ্গণে।
একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র-স্মারক গ্রন্থমালা প্রকাশনার বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়। আর রবীন্দ্রনাথের জীবন, কাজ, অবদান, চিন্তাসহ নানা দিক নিয়ে লেখা ১৫১টি বইয়ের এ স্মারক গ্রন্থমালার উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ছিলেন কবির চৌধুরী।
পড়ন্ত বিকেলে ক্লাবের সুইমিং পুল আঙিনায় বসে এ আয়োজন। এতে কবির চৌধুরীর জীবনের নানা বিষয়সহ রবীন্দ্র-স্মারক গ্রন্থমালা নিয়ে কথা বলেন তিন বিশিষ্টজন। তাঁরা হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ও গ্রন্থমালার সম্পাদক মনজুরে মওলা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি মাকিদ হায়দার, কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই, লেখিকা আনোয়ারা সৈয়দ হক, অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রমুখ। আনিসুজ্জামান বলেন, কবির চৌধুরীর জীবন ছিল বর্ণময়। একইসঙ্গে ভালো ছাত্র ও ক্রীড়াবিদ ছিলেন। নানা বিষয়ে ঝোঁকপ্রবণ মানুষটি জীবনটাকে উপভোগ করতে চেয়েছেন সব সময়। এ কারণেই শুধু সাহিত্য-সংস্কৃতি নয়, শিক্ষা কিংবা রাজনীতি সবখানেই ছিল তাঁর মনোযোগ। বাঙালির যে কোনো জাতীয় সংকটে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। এসব গুণের কারণেই জাতির অভিভাবক হতে পেরেছিলেন। আর তিনি না থাকলে হয়তো এই রবীন্দ্র-স্মারক গ্রন্থমালা প্রকাশিত হতো না। তাঁর সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশনার কারণেই গ্রন্থমালাটি সমৃদ্ধ হয়েছে। সব সময় লেখকদের উপদেশ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, সময়ের নির্ভীক কণ্ঠস্বর ছিলেন কবির চৌধুরী। তিনি থাকলে আজ নিশ্চয়ই শাহবাগের তারুণ্যের সমাবেশে শরিক হতেন। লেখালেখির বিষয়েও ছিলেন দারুণ পরিশ্রমী। তাঁর অনুবাদের কারণেই বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে হয়েছে অনেক বেশি পরিচিত হয়েছে দেশের পাঠক।
মনজুরে মওলা বলেন, কবির চৌধুরী ছিলেন আমার শিক্ষক। তাঁর কাছ থেকে যা শিখেছি তার তুলনা নেই। ক্লাসে শেখার পাশাপাশি ক্লাসের বাইরে তিনি আমার মূল্যবোধ তৈরি করেছেন।
শিল্পী-যুগলদের চিত্রকলা প্রদর্শনী সমীকরণে প্রেম ॥ চলছে ফেব্রুয়ারি মাস। পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে ভালোবাসা দিবস। আর দিবসটির ঠিক কয়েকদিন আগে ভালোবাসা নিয়ে চিত্রশিল্পীদের অনন্য এক আয়োজনের দেখা মিলল। ভালোবাসাসহ নানা বিষয়কে উপজীব্য করে চিত্রপট সাজিয়েছেন একঁঝাক শিল্পী। রং ও রেখায় নানা আঙ্গিকে ক্যানভাসে হৃদয়ের কথা বলেছেন ২৭ শিল্পী দম্পতি। এঁকেছেন অনেক ছবি। চিত্রপটে ভালোবাসার পাশাপাশি উদ্ভাসিত হয়েছে চলমান জীবন, সমাজ, পরিবেশসহ নানা বিষয়। সেসব ছবি নিয়ে শনিবার থেকে প্রগতি সরণির অ্যাথেনা গ্যালারিতে শুরু হলো শিল্পী যুগলদের চিত্রকলা প্রদর্শনী। শিরোনাম সমীকরণে প্রেম।
সন্ধ্যায়প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। উদ্বোধনী আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সালমা খান। সভাপতিত্ব করেন অ্যাথেনা গ্যালারির চেয়ারম্যান নীলু রওশন মুরশেদ।
প্রদর্শনীর চিত্রকর্মে শিল্প দম্পতিদের পারস্পরিক শিল্পপ্রেমের প্রকাশের দেখা মিলেছে। কাজের মধ্যে জীবনসঙ্গী হিসেবে পারস্পরিকভাবে প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে তাঁদের ছবিতে। উঠে এসেছে শিল্পীদের দাম্পত্য জীবনের বিবর্তনের দৃশ্যকাব্য। রঙের সঙ্গে রঙের সংযোগে সেসব ছবি হয়েছে বৈভবময়। বৈচিত্র্যময় এ প্রদর্শনীতে রয়েছে ছাপচিত্র, তেলরং, জলরং, অ্যাক্রেলিক, কাঠখোদাই, লিথোগ্রাফি, মনোপ্রিন্ট ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ২৭ শিল্পী যুগল হলেন কাইয়ুম চৌধুরী ও তাহেরা খানম, হামিদুজ্জামান খান ও আইভি জামান, আবুল বারক আলভী ও শামিনা শারমিন, রণজিৎ দাস ও তন্দ্রা দাস, ঢালি আল মামুন ও দিলারা বেগম জলি, খালিদ মাহমুদ মিঠু ও কনক চাপা চাকমা, মোহাম্মদ ইউনুস ও রিফাত ইউনুস, মোহাম্মদ ইকবাল ও মাকসুদা ইকবাল নীপা, আবুল মনসুর ও নাজলী মনসুর, আবুল এইচ ঢালি ও ফারজানা ববি, মো. মনিরুজ্জামান ও রুখসানা পপি, আবদুস সালাম ও জয়া হক, নাসিম আহমেদ নাদভি ও নাইমা হক, আহমেদ নাজির ও নাহিদা শারমিন, ওমর খালিদ ও রোকেয়া সুলতানা, বিশ্বজিৎ গোস্বামী ও তানিয়া সুলতানা, রেজাউল লাভলু ও শাহিন লিপি, জামাল আহমেদ ও সেলিনা আহমেদ, রেজাউন নবী ও সোহানা শাহরীন, কাজী সৈয়দ আহমেদ ও সরকার নাহিদ নিয়াজী, সাইদুল হক জুইস ও ফারেহা জেবা, শুভ সাহা ও জিনাত জুলফিকার, মাহাদি মাসুদ ও তাহমিনা হক লিসা, সৈয়দ হাসান মাহমুদ ও আতিয়া ইসলাম অ্যানি, মাহবুবুর রহমান ও তৈয়বা বেগম লিপি, সৈয়দ জাহেদ ইকবাল ও ফারজানা উর্মি এবং ইলিয়াস হোসেন ও ফাহমিদা খাতুন।
প্রদর্শনীতে ঠাঁইপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা একানব্বই। আঠারো দিনের এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
জোটের একুশের অনুষ্ঠানমালায় সেমিনার ॥ একুশ আছে জয়োদ্ধত/ একুশ বাঁচে অবিরত ¯োগানে শুক্রবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে জোটের দুই সপ্তাহব্যাপি একুশের অনুষ্ঠানমালা। শনিবার বিকেলে দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের শুরুতে ‘একুশের চেতনা ও আমাদের নাটক’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মান্নান হীরা। আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য ও নাট্যতত্ত্বের শিক্ষক আফসার আহমেদ ও অভিনয় শিল্পী ত্রপা মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
সেমিনার শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। একক আবৃত্তি করেন নাসরিন গীতি ওসৈয়দ শহীদুল ইসলাম। দলীয় আবৃত্তি করে স্বরূপ আবৃত্তি সংসদ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যশ্রী। একক কণ্ঠে গান শোনান আবু বক্কর সিদ্দিক,তানজিলা তমা ও শহীদ খান। সব শেষে ছিল ইউনির্ভাসেল থিয়েটার ও সেন্টার ফর বাংলাদেশ থিয়েটারের পথনাটক প্রদর্শনী।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলবে একুশের অনুষ্ঠানমালা। উনিশ, বিশ ও একুশ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান হবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের উš§ুক্ত মঞ্চে। অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় থাকবে গান, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন। এবারের অনুষ্ঠানে আংশগ্রহণ করবে দেশের প্রথম সারির বাইশটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানমালায় থাকবে ছয়টি সেমিনার।
স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ॥ ভাষাসংগ্রামী অধ্যাপক আফজালুন্নেসা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক এম আর মাহবুব সম্পাদিত ‘প্রথম শহীদ মিনারের স্থপতি ডা.বদরুল আলম স্মারকগ্রন্থ’র মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে শনিবার বিকেলে। গ্রন্থটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও অনিন্দ প্রকাশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পীকার কর্ণেল অব.শওকত আলী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাষাসংগ্রামী কর্ণেল অবসরপ্রাপ্ত ডা.এস.ডি.আহমদ ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার অব.ডা.আবদুল মালিক। ভাষাসংগ্রামী ও গবেষক আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ভাষাসৈনিক শামসুল হুদা, ফুলে হোসেন, রেজাউল করিম পাঠান প্রমূখ।
পঞ্চগড়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সম্মেলন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় থেকে জানান, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের পঞ্চগড় জেলা শাখার ১ম সম্মেলন শনিবার পঞ্চগড় নজরুল পাঠাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কানাইলাল কুন্ডু। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আমিনুল হক।
সম্মেলনে এমএ হান্নানকে সভাপতি ও সহকারি অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চগড় জেলা রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠন করা হয়। শেষে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র সঙ্গীত বিষয়ক কর্মশালা।
নারায়ণগঞ্জে নাট্যোৎসব শুরু ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত স্থানীয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সহযোগিতায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতীয় পথনাট্যোৎসব। শনিবার সন্ধ্যায় শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতিম-লীর সদস্য শাহাদাৎ হোসেন হিলু। ময়মনসিংহের বহুরূপী নাট্য সংস্থা, কিশোরগঞ্জের একতা নাট্য গোষ্ঠী, নরসিংদীর বাংলা নাট্যম, মুন্সীগঞ্জের থিয়েটার সার্কেল, মুন্সীগঞ্জ থিয়েটার, সঞ্চালক নাট্যচর্চা কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জের ঐকিক থিয়েটার, সংশপ্তক নাট্য দল, উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদ ও এই বাংলায় উৎসবে নাটক মঞ্চস্থ করবে।

No comments

Powered by Blogger.