টেক্সটাইল কলেজের অধ্যক্ষ অপসারিত- ফলোআপ

 রিপোর্ট প্রকাশের পর অবশেষে টনক নড়ল কর্তৃপক্ষের। শিৰার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতনসহ নানা অনিয়মের দায়ে আব্দুর রহমান খানকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যৰের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে উপাধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ারকে দেয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, অভিযুক্ত অধ্যৰসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অধ্যক্ষকে অবশ্যই চাকরিচ্যুত করা হবে। এদিকে কেবল এই প্রতিষ্ঠানেই নয়, জনকণ্ঠের রিপোর্ট প্রকাশের পর রীতিমতো তোলপাড় চলছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ এর অধীন বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
এর আগে বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় 'কারিগরি শিৰার নামে রমরমা বাণিজ্য' শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত দেশের প্রথম বেসরকারী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিৰাদানের নামে চলা ভয়াবহ তথ্য। অধ্যৰ আব্দুর রহমান খানের বিরম্নদ্ধে ছাত্রীরাও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করে বলেন, 'এটা শিৰা প্রতিষ্ঠান না, এটা একটা টর্চার সেল। শিৰার নামে এখানে কেবল অর্থ আদায় করা হয়। হাজার হাজার টাকা নিয়ে ভর্তি করিয়ে একেক সময় একেক কথা বলে ফি আদায় করা হয় এখানে। জারিমানা হিসেবে হাজার হাজার টাকা আদায়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে পরীৰার্থীদের ফেল দেখানো হয়। প্রতিবাদ করলে অথবা অভিভাবকদের জানালে কাসে নানা ছুতো তুলে লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। অনেক ছাত্রী অধ্যৰের বর্বরতার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। ছাত্ররা বর্বরতা শিকার হচ্ছে অহরহ।' শিৰার্থীদের অভিযোগ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে রৰা পেতে এই কলেজ থেকে কেউ চলে যেতে চাইলেও সহসা ছাড়পত্র দেয়া হয় না। তার পরেও কর্তৃপৰের রোষানল থেকে বাঁচতে ছাড়পত্র ছাড়াই চলে গেছেন অনেক ছাত্রছাত্রী।' এ ছাড়া প্রতিবেদনে এই প্রতিষ্ঠানের মতো বেরিয়ে এসেছে আরও অসংখ্য কারিগরি শিৰা প্রতিষ্ঠানের শিার আড়ালে চলা অবৈধ শিা বাণিজ্যের চিত্র। ক্যাম্পাস, শিক বলতে গেলে কিছুই নেই। ভাড়া করা একটি-দু'টি কৰে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চলছে ব্যবসা। টাকা হলেই ভর্তি, ভর্তির সময়ে উচ্চতর ডিগ্রীধারী ব্যক্তিদের শিৰক হিসেবে দেখিয়ে আকর্ষণীয় প্রোসপেক্টাস ধরিয়ে দেয়া, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বেতন-ভাতার ফিরিসত্মি, কাস না করিয়ে কোর্স শেষ। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই ৰুব্ধ শিৰার্থীরা কলেজে এসে জড়ো হয়। তারা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে সকল অনিয়মের বিরম্নদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার দাবি জানান। প্রতিবেদন সত্য কিনা চেয়াম্যান জানতে চাইলে শিৰার্থীরা হঁ্যাসূচক উত্তর দেন। একই সঙ্গে তাঁরা রেজিস্ট্রার গিয়াস উদ্দিন, গণিতের শিৰক রম্নমী মলিস্নক এবং হিসাববিজ্ঞানের এক শিৰকের বিরম্নদ্ধে অধ্যৰের অনিয়মে প্রত্যৰভাবে সহযোগিতার অভিযোগ আনেন। অবিলম্বে দায়ীদের বিরম্নদ্ধে কঠোর পদৰেপ নেয়া হবে বলে কথা দিলে শানত্ম হন শিৰার্থীরা। সন্ধ্যায় পরিচালনা পর্ষদের সভায় অধ্যৰের পদ থেকে আব্দুর রহমান খানকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। বর্তমান উপাধ্যৰ গোলাম সারওয়ারকে দেয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যৰের দায়িত্ব। এদিকে বিদায়ী অধ্যৰসহ কয়েকজনের বিরম্নদ্ধে উত্তরায় কলেজ ভবন নির্মাণের কথা বলে কয়েক লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। সকল বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। শুক্রবার বিকেলে চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জনকণ্ঠকে কলেজের সমস্যা তুলে ধরিয়ে দেয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, দেশের বাইরে ছিলাম। কলেজে এসব হচ্ছে আমি জানতাম না। আমরা উপাধ্যৰকে অধ্যৰের দায়িত্ব দিয়েছি। অবশ্যই বিদায়ী অধ্যৰকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.