এসেই আশা দিলেন ডি ক্রুইফ by মাসুদ আলম

বয়স ৪৩। বেশ চনমনে। কথাবার্তায় সপ্রতিভ। ইংরেজি বলেন সাবলীলভাবে। লোডভিক ডি ক্রুইফকে প্রথম দেখায় এমনই লাগল। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে কাল কয়েক মিনিটের দর্শন। সংক্ষিপ্ত কথাবার্তায় ‘বাংলাদেশে ভালো লাগছে’ ‘ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে এ দেশ সম্পর্কে ভালো একটা ধারণাই পেয়েছি, বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে চাই’—জাতীয় আশাবাদ।
নতুনত্ব কিছু নেই এতে। বিদেশি কোচরা প্রথম দিন এসে বরাবরই এসব কথা বলেন। শেষটা হয় তিক্ততার, এই আরকি! তবে এবারের গল্পটা ভিন্ন হওয়ার আশাবাদ বাফুফের। আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে এই ডাচ জুটির হাতেই যে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব। সবকিছু ঠিক থাকলে ডি ক্রুইফ হতে যাচ্ছেন লাল-সবুজের ১৬তম বিদেশি কোচ। ৩৬-৩৭ বছরের রেনে কোস্টার ক্রুইফের সঙ্গেই ঢাকায় এসেছেন, যিনি জাতীয় দলে ডি ক্রুইফের সহকারী এবং বাফুফের একাডেমির প্রধান কোচ। ডাচ ফুটবল মানেই এক নস্টালজিয়া। সত্তরে রাইনাস মিশেল ছিলেন টোটাল ফুটবলের জনক। তাঁর দেশের এক লোকের সূত্রেই বাংলাদেশে উচ্চারিত হতে যাচ্ছে ‘টোটাল ফুটবল’। এই টোটাল ফুটবলের আরেক বড় বিজ্ঞাপন ইয়োহান ক্রুইফের সঙ্গেও নাকি এই ক্রুইফের যোগাযোগ আছে, সেটি তিনি নিজেই জানিয়েছেন গাড়িতে উঠতে উঠতে। কেমন শিহরণ জাগানো ব্যাপার!
‘আমার কোচিং-দর্শন চিরায়ত ডাচ-দর্শন। আক্রমণাত্মক ফুটবলই আমার পছন্দ। ডাচ ফুটবল মানে তিনজন স্ট্রাইকার। এটা খুবই আকর্ষণীয়। এখানে আমরা আগে খেলোয়াড়দের কোয়ালিটি দেখি। তারপর বুঝব কী করা সম্ভব’—ভিড়ে ঠাসা পাঁঁচ মিনিটের সংবাদ ব্রিফিংয়ে বললেন ডি ক্রুইফ।
লন্ডনে দুই কোচের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনার আধঘণ্টা পর এই প্রতিবেদককে ফোনে বাফুফের সভাপতি বলেছিলেন, ‘কোচকে বলেছি, বাংলাদেশে এসে খাতির-যত্ন শুরুতে খুব ভালো পাবেন। কিন্তু রেজাল্ট না পেলে আপনার-আমার চেয়ার নিয়ে টান পড়বে। কথাটা মনে রাখবেন। সাফে কিন্তু ফাইনাল খেলতে হবে।’
সেই মিডিয়া কাল কোচের অপেক্ষায় ঘণ্টা তিনেক বিমানবন্দরের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে। এদিন ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হয়নি সাংবাদিকদের। বাইরে সাংবাদিকদের জটলা দেখে এক বৈমানিকের উদ্বিগ্ন জিজ্ঞাসা, ‘সোনার কেস নাকি? মানে সোনা চোরাচালানের খবর নিতে এই ভিড়?’
ঘটনা তা নয়, বলাই বাহুল্য। ডাচ কোচরা হয়তো এমন ভিড় দেখে অবকা হয়ে থাকবেন। যাই হোক, ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা নিয়ে বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে দুই কোচ বেরিয়ে আসতেই ক্যামেরার মুহুর্মুহু ফ্লাশব্যাক! গোটা বিশেক টিভি ক্যামেরা ফুটেজ নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামল।
যে মানুষটার ওপর সবচেয়ে বেশি আলো, তিনি খেলোয়াড় হিসেবে কেমন ছিলেন? কোচিং ক্যারিয়ারই বা কেমন? কৌতূহল মেটালেন ডি ক্রুইফ নিজেই। হল্যান্ডে ছোট্ট পেশাদার ক্যারিয়ার, দুই বছর বেলজিয়ামে পেশাদার ফুটবল লিগ, সংক্ষিপ্ত সময় জার্মানি-চীনে কাটিয়ে হল্যান্ডের একটা প্রিমিয়ার লিগের দলে এসেছেন।
কোচিং ক্যারিয়ার আট বছরের। সর্বশেষ নাইজেরিয়ায় ১৮-১৯ মাস কাজ করেছেন। গত বছর আফ্রিকার সেরা ক্লাব কোচের তালিকায় নাম উঠেছিল। ডি ক্রুইফের অধীনে নাইজেরিয়ার এফএ কাপ জিতেছে স্থানীয় হার্টল্যান্ড ক্লাব। এই ফাঁকে দিলেন চমকপ্রদ এক তথ্য, ‘নাইজেরিয়ায় আমার ক্লাবে খেলা তিনজন ফুটবলার এখন ঢাকায় খেলছে’ (মুক্তিযোদ্ধার ওজুরুম্বা, মোহামেডানের উদে ড্যামিয়েন, শেখ জামালের এজিমুরা)।
এই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও কিছু হয়তো জানবেন। এই প্রথম কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন। লক্ষ্য কী হবে? ‘বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মান ভালো করতে চাইব। বাংলাদেশ ফিফা র্যা ঙ্কিংয়ে এখন ১৬৫ বা এর কাছাকাছি। এক বছর পর ১০০-১২০ এর মধ্যে দেখতে চাই’—চ্যালেঞ্জটা জেনে-বুঝেই নিচ্ছেন ডি ক্রুইফ।
রেনে কোস্টার বোঝালেন, ‘ক্রুইফের কথাই আমার কথা’। তাঁর কথা ছিল সামান্যই, ‘হল্যান্ডে কয়েকটি একাডেমির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছিলাম আয়াক্সের একাডেমির সঙ্গেও।’
স্ত্রী-পরিবার নিয়েই বাংলাদেশে থাকতে চান দুই কোচ। ডি ক্রুইফের তিন ছেলেমেয়ে। তাদের ঢাকায় থাকা, পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক সব ব্যবস্থা যাচাই করে দুজন আপাতত দেশে ফিরবেন ১২ জানুয়ারি। তবে শুরুতেই এসে যেভাবে আশা দেখালেন, ফুটবলে আশার পালে হাওয়া সত্যিই লাগবে তো?

No comments

Powered by Blogger.