ফিরে দেখা ২০১০-বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর জাতির দায়মুক্তি by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়াটা বিদায়ী বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রায় তিন যুগ পর মামলার রায় কার্যকর হয় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে। এ রায় কার্যকর করার মাধ্যমে দেশ হয়েছে দায়মুক্ত।
কলঙ্কমুক্ত হয়েছে জাতি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে দেশ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আ�স্বীকৃত পাঁচ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার ক্ষণটির জন্য উ��ুখ ছিল জাতি। ইতিহাসের জঘন্যতম ও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ৩৪ বছর পর ঘাতকদের দণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদ, শিল্পী, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তবে বিদেশে পালিয়ে থাকা অপর ছয় খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াও দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়েছে তাঁদের পক্ষ থেকে।
গত ২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে ফাঁসি কার্যকর করা হয় মেজর (অব.) বজলুল হুদা, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি)। এ ছাড়া এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য সাত আসামির মধ্যে রয়েছে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, মেজর (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এফ এইচ এম বি নুর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন পলাতক। লে. কর্নেল (অব.) আবদুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন বলে জানা যায়। তবে বর্তমান মহাজোট সরকারের তরফ থেকে এ ছয় খুনিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে অবৈধ ক্ষমতা দখল, সংবিধান পরিবর্তন, হত্যা, ক্যুর রাজনীতি শুরু হয়। সে বছরই ৩ নভেম্বর কারাগারে খুন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার ঘটনাকে �জাতির ললাটে আঁকা কলঙ্কতিলকের অবসান� বলে আখ্যায়িত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, �হত্যাকারীদের ফাঁসির মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত, পাপমুক্ত হয়েছে।�
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে, এটা বড় ব্যাপার। তিনি বলেন, �ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা রোধে এই বিচারের রায় কার্যকর করার প্রয়োজন ছিল।�
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, �ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।�
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, �দীর্ঘদিন পর আদালতের রায় কার্যকর হয়েছে এবং যারা অপরাধী তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। আশা করি বাংলাদেশ অতীতের বিভীষিকাময় ইতিহাস পেছনে রেখে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।�
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, �ফাঁসির রায় কার্যকর করার মাধ্যমে জাতির দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। কিন্তু বাকি আসামিদের ফিরিয়ে এনে রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনো করা যায়নি। ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের আকাক্সক্ষা�বাকি আসামিদের ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।� এ রায় কার্যকর করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াও সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, �ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে এবং দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এটা একটা মাইলফলক।� তিনি আরো বলেন, �কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে বিচার হয় তা প্রমাণিত হয়েছে এ রায় কার্যকরের মাধ্যমে।�
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, �বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যত বড় ব্যক্তিই হোক না কেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তার বিচার হবেই, সেটা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে।� তিনি বলেন, �এ ঘটনা থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং এর মাধ্যমে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়বে।�

No comments

Powered by Blogger.