বাইন্ডিংয়ের অপেৰায় বহু বই, নতুন আরও ৯২- বইমেলা প্রতিদিন

 অন্য কোন মেলার সঙ্গে একুশে বইমেলার তুলনা চলে না। এ মেলা বাঙালীর প্রাণের মেলা। যে কেউ কথাটির সত্যতা পাবে একুশে বইমেলায় এলেই। একুশ যতই এগিয়ে আসছে, মেলায় ততই বাড়ছে প্রাণের জোয়ার।
মঙ্গলবারও শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। যতই দিন যাচ্ছে, বাড়ছে বই বিক্রির পরিমাণ। জানালেন সূচীপত্রের প্রকাশক সাঈদ বারী। তবে পাঠকদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, বাইন্ডারের অভাবে অনেক বই তাঁদের (পাঠক) হাতে তুলে দিতে পারছেন না বলেও জানালেন তিনি। এদিন একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছিলেন এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। আরও দেখা গেছে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, কবি বেলাল চৌধুরী, বশীর আল হেলালসহ অনেককেই। এদিন নতুন বই এসেছে ৯২টি।

মোড়ক উন্মোচন
মেলায় এদিন ১৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে শামীমা জাফরিনের তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। শিশুতোষ এই তিনটি গল্পের বইয়ের নাম অর্থির যত কথা, পিউলীর খালার বাড়ি চাঁদে চাচ্চুর বাড়ি মঙ্গল গ্রহে এবং পাখিদেরও ফ্যাট চাই। বইগুলো এনেছে যথাক্রমে উৎস, অঙ্কুর ও টইটুম্বর। বইগুলো প্রসঙ্গে মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের দেশে বাচ্চাদের উপযোগী বইয়ের বেশ অভাব। সুকুমার রায়ের পর শিশুদের উপযোগী করে বই লিখবে এমন লেখকও আমরা পাইনি। আমি আশা করব শামীমার বইগুলো বাচ্চাদের ভাল লাগবে। বইমেলা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাঙালীর সংস্কৃতির তীর্থস্থান এই বইমেলা। ভাষার এই মাসটির জন্য সারা বছর অপেৰা করে বাঙালী। নতুন বই সংগ্রহ আর ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সবাই ছুটে আসে এখানে। বই তিনটির লেখক শামীমা জাফরিন বলেন, আমি শুধু শিশুদের নিয়েই নয়, মহিলা ও প্রকৃতি নিয়েও লেখালেখি করি। অর্থাৎ আমাদের সমাজে যে তিনটি বিষয় আগ্রাসনের শিকার, সেগুলো নিয়ে লেখালেখি করি। আমি লেখার মাধ্যমে চেষ্টা করি শিশুদের কোমলমতি মনের বিকাশ ঘটাতে। এদিন কবি বেলাল চৌধুরী মোড়ক উন্মোচন করেন শুভ্রা রহমানের 'দ্বিতীয়া তোমার সঙ্গে' কাব্যগ্রন্থটির। বাংলার প্রধান কবি প্রয়াত শামসুর রাহমানকে নিয়ে এই শুভ্রা রহমান ১০০টি সনেট লিখেছেন, তার ১৪টি এই বইয়ে স্থান পেয়েছে।

প্রকাশকের কথা
মেলা যত শেষের দিকে যাচ্ছে, পাঠকরাও তত বই কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রকাশকরা পাঠকদের চাহিদা মতো বই সাপস্নাই দিতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে সূচীপত্রের সাঈদ বারী বলেন, বাইন্ডারদের অভাবে বই বাইন্ডিং করতে পারছি না। বছরের প্রথম দিক হওয়ায় বোর্ডের পাঠ্যপুসত্মক, গাইড বই, এইচএসসির টেস্ট পেপার এসব নিয়ে এখন ব্যসত্ম বাইন্ডাররা। আমাদের বইয়ের প্রতি এখন তাঁদের আগ্রহ কম। কারণ আমরা কোন কবি-সাহিত্যিকের বই বড়জোর ৫০০ থেকে ৮০০ কপি বাঁধাই করি, প্রয়োজনে পরে আবার ছাপাই ও বাঁধাই করি। কিন্তু বোর্ডের পাঠ্যপুসত্মক ও গাইড বই হয় হাজার হাজার বা লাখ লাখ কপি, সে কারণে সেসব বইয়ের প্রতি বাইন্ডারদের এ সময়ে আগ্রহ থাকে বেশি। কারণ পাঠ্যপুসত্মক ও গাইড বইয়ের বাইন্ডিংয়ের কাজ করলে যে ছাঁট বের হয়, তা বিক্রি করে বাইন্ডাররা লাখ লাখ টাকা আয় করে। মজুরি তো বাকিই থাকে। তাই আমাদের কাজ তখন তারা করতে খুব আগ্রহী হয় না। অনেক বই-ই এখন পাঠকরা চাচ্ছেন, কিন্তু দিতে পারছি না।

নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯২টি। কবিতার বই সবচেয়ে বেশি, ২২টি। উপন্যাস ও গল্প এসেছে ১৪টি করে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য জনকণ্ঠের মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের স্টাফ রিপোর্টার মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বলের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই 'মুক্তিযুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর' এনেছে সোনারং। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেলার বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ কাগজ (৪১৭ নম্বর) স্টলে। জনকণ্ঠের চট্টগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার হাসান নাছিরের প্রবন্ধ গ্রন্থ 'অপাশবিক' এসেছে এদিন মেলায়। বইটি এনেছে বলাকা, পাওয়া যাচ্ছে বলাকার ৮৮ নম্বর স্টলে। হুমায়ূন আহমেদের রূপা এনেছে অন্বেষা, নির্মলেন্দু গুণের 'গীনসবার্গের সঙ্গে' এনেছে শ্রাবণ, সৈয়দ শামসুল হকের নিনাদ ও মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ভার এনেছে প্রথমা, সেলিনা হোসেনের নীল টুনির বন্ধু এনেছে বিজয়, নির্মলেন্দুর নির্বাচিত ১০০ কবিতার বই এনেছে বিভাস, আব্দুল মান্নান সৈয়দের সত্যের মত বদমাস এনেছে পাঠক, হাসনাত আব্দুল হাইয়ের পানেছার বানুর নকশী কাঁথা এনেছে অন্যপ্রকাশ ও কবি নূরম্নল হুদার ঝাউদরিয়ার ডানা এনেছে অ্যাডর্ন।

No comments

Powered by Blogger.