ব্রহ্মপুত্রের চরে মায়াবী জ্যোৎস্না দেখবেন থাই রাজকুমারী- সঙ্গে রাত কাটাবেন আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাজ সাজ রব by সোহেল রহমান , আবু জাফর সাবু,
এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানানোর মতোই আরেক কাহিনী। গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষাপাড়া। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বতীরের রম্ন, ধূসর ধু ধু বালুময় এক চর।
চরের কুঁড়েঘরে আজ রাত কাটাবেন এক রাজকন্যা। গ্রামীণ পরিবেশে উপভোগ করবেন রাতের মায়াবী জ্যোৎস্না। আর বাংলাদেশের নদী তীররর্তী বঞ্চিত অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে নেবেন সম্যক ধারণা। এই রাজকন্যা উড়ে এসেছেন থাইল্যান্ড থেকে। তিনি থাই রাজকুমারী মহাচাক্রী সিরিনধর্ন। আজ মঙ্গলবার তিনি যাবেন গাইবান্ধায়। জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ভাষারপাড়া চরে বাঁশের বেড়া ও ছনের তৈরি কুড়েঘরে তিনি কাটাবেন দু'রাত। তার সঙ্গে রাতযাপন করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনিও।রাজকন্যার স্বপ্নকে বাসত্মবে রূপ দিতে পাল্টে ফেলা হয়েছে চরের চেহারা। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গাগড়ার খেলায় জেগে ওঠা চরকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। ছনের চালা ও বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৫টি কুঁড়েঘর। যেখানে থাকবেন রাজকুমারী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। কুঁড়েঘরে থাকবে অত্যাধুনিক থ্রিস্টার হোটেলের সকল সুযোগ-সুবিধা। কুঁড়েঘরগুলোর মাঝখানে রয়েছে গোলাকৃতির একটি বৈঠকখানা। পাশে আছে পিঠাঘর। যেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হরেক স্বাদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়িত করা হবে রাজকুমারীকে। বাদ যায়নি গোয়ালঘরও। ঘরের আঙিনায় দাঁড়িয়ে রাজকুমারী দেখবেন গাভী থেকে দুধ দোহন। প্রতিটি ঘরেই রয়েছে বাঁশের তৈরি ড্রেসিং টেবিল ও খাট। বারান্দায় পাতা রয়েছে খেজুরপাতার তৈরি নকশীপাটি। কুঁড়েঘরের বারান্দাজুড়ে টাঙ্গানো হয়েছে হারিকেন। তবে শুধু হারিকেনের আলো নয়, প্রথমবারের বিজলী বাতির আলোয় হাসবে গোটা চর। এজন্য বসানো হয়েছে ২৫ মেগাওয়াট মতাসম্পন্ন একটি জেনারেটরও। রয়েছে সৌর বিদু্যত সরবরাহ ব্যবস্থাও। কুঁড়েঘরের বাঁশের খুঁটিতে নকশী শিকায় ঝোলানো হয়েছে নানা গ্রামীণ কারম্নকার্য। চরজুড়ে বালুর ওপর পলিমাটি কেটে কেটে বসানো হয়েছে । পলির ওপর ঘাসের আসত্মরণে বানানো হয়েছে ফুলের বাগান। বসনত্মের মাতাল হাওয়ায় চরের বাগানে বাঁশের জংলায় দোল খাবে লাউ ও শিমের ডগা। হলুদ রঙের সরিষা েেত মাঝখানে রয়েছে নানা শাকসবজির বাগান। প্রতিটি কুঁড়েঘরের অত্যাধুনিক ফিটিংসের টয়লেট ও বেসিন। অবহেলিত চর এখন চিত্রকরের ছবির মতোই সুন্দর। গত প্রায় দু'মাস ধরে বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কুটির শিল্পের কারিগররা ছবির মতো করে সাজিয়েছেন চরকে। আর এই এলাহী কারবার দেখে নিজেদের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না নদীপারের বাসিন্দারা। পুরো বিষয়টিকেই যেন তাদের কাছে এখন ঘোরের মতো মনে হচ্ছে। তাদের চরে রাত কাটাবেন ভিন্দেশের এক রাজকুমারী। এ যেন কল্পনারও বাইরে। রাজকুমারীর আগমন তাদের কাছে গরিবের দুয়ারে হাতির পা দেয়ার মতোই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং এ্যাডভায়জরি বোর্ডের ৩৫ সদস্য নিয়ে রাজকুমারী মহাচাক্রী সিরিনধর্ন মঙ্গলবার সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামবেন। পরে তিনি রংপুরের তাজহাট ও মাধিগঞ্জে বেসরকারী সংস্থা জীবিতা বাংলাদেশের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে রাজকুমারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের সতিরজান প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কুমারপাড়া এবং বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রাম পরিদর্শনে যাবেন। বিকালে তিনি ফুলবাড়ি উপজেলার বালাসীঘাটে পেঁৗছবেন। নৌকায় করে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে তিনি সন্ধ্যায় চরে পেঁৗছবেন। রাজকুমারীর সঙ্গে চরে রাত কাটাতে বুধবার সকালে আনত্মঃনগর ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেসযোগ গাইবান্ধায় আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিাজীবনে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. মাইকেল কাগের ছাত্রী ছিলেন দীপু মনি। রাজকুমারীর সফরসঙ্গী হয়ে এবার বাংলাদেশে এসেছেন ড. কাগ। রবিবার পর্যনত্ম নতুন রূপে সাজানো চরটি জনসাধারণের প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে রাজকুমারী ও সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তার জন্য সোমবার থেকে সর্বসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। চরে অবস্থানকালে রাজকুমারীকে ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, শাকসবজিসহ দেশী খাবারে আপ্যায়িত করা হবে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্নুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের উপদেষ্টা বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির তত্ত্বাবধানে জীবিতা বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার ১৯ ইউনিয়নে ১৯৯৯ সাল থেকে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য এবং পুষ্টি বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্প বাসত্মবায়ন করছে। মা ও শিশুর পুষ্টি এবং মাতৃ ও শিশু মৃতু্যর হার কমানোর উপায় খুঁজে বের করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্যই জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্নুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্যরা বাংলাদেশে এসেছেন। রাজকুমারী মহাচাক্রী এই উপদেষ্টা বোর্ডের অন্যতম সদস্য।
সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটায় মহাচাক্রী সিরিনধর্ন হযরত শাহজালাল আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। দুপুরে তিনি রাজধানীর মহাখালী আইসিডিডিআরবি পরিদর্শনে যান। তিনি আইসিডিডিআরবি হোস্টেল ও ল্যাবরেটরী পরিদর্শনে যান। রাতে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি গাইবান্ধা ও রংপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সফরকালে থাই রাজকুমারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য দেখা করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির দেয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি। এছাড়া পুরনো ঢাকার শাঁখারীবাজার ও ঐতিহাসিক লালবাগ কেলস্না পরিদর্শন করবেন থাইরাজকুমারী। পাঁচদিনের সফরশেষে শুক্রবার ঢাকা ছাড়বেন রাজকুমারী মহাচাক্রী সিরিনধর্ন।
No comments