পাগলা মাঠে ফিরতে পাগল by মিথুন আশরাফ

পুরো নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। ডাক নাম কৌশিক। বাংলাদেশ কোচ জেমি সিডন্স থেকে শুরু করে ভিনদেশী সবাই তাকে ডাকেন 'ম্যাশ' নামে। নড়াইলে বাড়ি, সঙ্গে বোলিং গতি।
খেতাব পেয়ে গেলেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস' নামে। আর বন্ধুরা আপন করে ডাকেন 'পাগলা' বলে। এই পাগলা আমাদের বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেস সত্মম্ভ। যাকে ছাড়া পেস এ্যাটাক কল্পনাই করা যায় না। সেই পাগলা মাঠে ফিরতে এখন পাগল হয়ে আছেন। ২০০৯ সালের জুলাই মাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরম্নদ্ধে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে নেমেছিলেন মাশরাফি। প্রথম টেস্টেই পায়ে আঘাত পান। সেই যে মাঠ থেকে বের হতে হলো, এখন পর্যনত্ম মাঠে ফিরতে পারেননি। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিরম্নদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ হলো। তিন জাতি টুনর্ামেন্টেও অংশ নিল বাংলাদেশ। ভারতের বিরম্নদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও শেষ হলো। এখন চলছে নিউজিল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে সিরিজ। সিরিজের একমাত্র টেস্টটি চলছে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ ও ভারতের বিরম্নদ্ধে টেস্ট সিরিজ ছাড়া প্রতিটি সিরিজের দলে ছিলেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস।' কিন্তু খেলতে পারেননি। তিন জাতি টুনর্ামেন্টে শেষ মুহূর্তে দল থেকে বাদ পড়েছেন। মাঠে খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট না থাকায়। আর নিউজিল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে শেষমুহূর্তে ঠা-ার কারণে ওয়ানডে সিরিজে অংশ নিতে পারেননি। এন্টিবায়োটিক খেয়ে এখন সুস্থ। কিন্তু মাঠে ফিরতে পারছেন না। কারণ, কোন আনত্মর্জাতিক ওয়ানডে হচ্ছে না।
৮ মাস হয়ে গেল। তাই আর সহ্য হচ্ছে না মাশরাফির। এবার মাঠে ফিরতে চান। আর সেই আশা শেষ পর্যনত্ম পূরণ করেই ছাড়তে চান ইংল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে। তাঁর কথাতেই আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে, 'ইংল্যান্ডের বিরম্নদ্ধেই মাঠে ফিরতে চাই। ফিরব সেই আত্মবিশ্বাস আছে। মনোবলও চাঙ্গা। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ফিরবই আশা করি।' গত বছর জুলাইয়ে ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি। আগস্টে অস্ত্রোপচার হয় দুই পায়ের হাঁটুতেই। সেই থেকে মাঠের বাইরে। তিন জাতি টুনর্ামেন্ট শুরম্নর আগে মাঠে ফিরেছিলেন। নিজে কতটুকু প্রস্তুত আনত্মর্জাতিক ম্যাচ খেলতে সেটা দেখার জন্যই তাঁর মাঠে নামা। খেলেছেন প্রস্তুতি ম্যাচ। ধীরে ধীরে রান আপও বাড়িয়েছেন। আশা জাগানিয়া বোলিংও উপহার দিয়েছেন। বোলিং গতিতেও তেমন পার্থক্য ছিল না। সবার প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। মানসিক দিক দিয়েও মাঠে ফেরার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু আনত্মর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। মাঠে খেলার জন্য ফিট ছিলেন না। আর তাই শেষমুহূর্তে চূড়ানত্ম স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারেননি। বাদ পড়েছেন। মাঠে ফেরার হতাশা থেকেই গেছে। দর্শক হয়েই তিন জাতি টুনর্ামেন্ট উপভোগ করেছেন। বাংলাদেশ দল এখন নিউজিল্যান্ডে। খেলছে সিরিজের শেষ ম্যাচটি। সফরের এ একমাত্র টেস্ট শেষেই দেশে ফিরবে দল। এ সফরের ওয়ানডে দলেও ছিলেন মাশরাফি। এবার মাঠে ফেরার জন্য ফিটও ছিলেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস।' কিন্তু এবারও শেষ সময়ে ঘটে অঘটন। ঠা-ায় আক্রানত্ম হন। আর নিউজিল্যান্ডে যাওয়া হয়নি। মাঠেও ফেরা হয়নি। জুলাইয়ের পর এ সফর দিয়েই মাঠে ফেরার অনেক স্বাদ ছিল। কিন্তু তাও পূরণ হয়নি। এবার ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের অপেৰা। ইংলিশরা বাংলাদেশ সফরে আসবে ২১ ফেব্রম্নয়ারি। খেলবে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য এ সফরে ফিরতে মরিয়া মাশরাফি। কিন্তু কিভাবে? মাশরাফি কি সত্যিই ফিট? উত্তর দিচ্ছেন মাশরাফি নিজেই, 'হঁ্যা আমি পুরোপুরি ফিট। মনোবলের দিক দিয়েও। মাঠে খেলার দিক দিয়েও। তবে ওয়ানডে খেলার জন্য। সিরিজে ওয়ানডে খেলব। এখনই টেস্ট খেলতে চাচ্ছি না। আগে ওয়ানডে খেলে নিজেকে ঝালাই করে নিতে চাই। এরপর টেস্ট খেলব। ইংল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে ওয়ানডে সিরিজেই অংশ নিতে চাই। এ সপ্তাহেই আবার অস্ট্রেলিয়া যাব। চিকিৎসকের (ডেভিড ইয়াং) শরণাপন্ন হব। উনি কি বলেন দেখব। মাঠে ফেরার বিষয়ে তার মতামতও গুরম্নত্ব বহন করে। শুধু এজন্যই তার কাছে যাওয়া। আগেই এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখব। ইংল্যান্ড সফর শুরম্নর আগেই চলে আসব। তবে আমার বিশ্বাস আছে এবার মাঠে ফিরবই।' মাশরাফি নেই, দলের পেস এ্যাটাকই যেন পঙ্গু। সেই ২০০৯ সালের জুলাই থেকেই। দলের অন্য পেসাররা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মাশরাফির অভাব প্রতি মুহূর্তেই অনুভূত হচ্ছে। পেস এ্যাটাক সামলানোর সঙ্গে মাশরাফির উপস্থিতিতে ব্যাটিংয়ে নিচের সারিও মজবুত হয়। এখন সেই দু'টি জায়গায়ই একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। মাশরাফির ফেরা তাই আরও বেশি জরম্নরী। মানছেন মাশরাফিও, 'দলে যাঁরা আছেন তাঁরাও ভাল। চেষ্টার কোন ত্রম্নটি করছেন না। তবে হঁ্যা, আমি যোগ হলে দলের পেস এ্যাটাক আরেকটু শক্তিশালী হতো। সঙ্গে ব্যাটিংয়ে নিচের সারির দিক একটু মজবুতও হতো।' এর আগে মাশরাফি আরও একাধিকবার ইনজুরির কবলে পড়েন। কয়েকবার অনেকদিন যাবত দলের বাইরেও ছিলেন। আত্মবিশ্বাসে চাঙ্গা মাশরাফি বার বারই আবার ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি সময় মাঠের বাইরে ছিলেন ২০০২ সালে। মার্চে নড়াইলে গাছ থেকে পড়ে বা পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল মাশরাফির। ভারতের চেন্নাইয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। ১৪ মাস মাঠের বাইরে ছিলেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস।' এর পর সময় হিসেবে ছিলেন ২০০৩ সালে মাঠের বাইরে। সে সময় ৯ মাস দলের বাইরে থেকে কাটাতে হয়েছে মাশরাফিকে। অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টে ডান পায়েন্ট লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল তার। এবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ডানহাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। সেই সময় বা হাঁটুতেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ডান হাঁটু কিছুটা ঠিক হওয়ায় পরে বা হাঁটুতেও অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এর পরই ২০০৬ সালে পিঠের ইনজুরিতে পড়ে ৩ মাস, ২০০১ সালে পাঁজরে টান পড়ে ও ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে এ্যাংকেল ইনজুরিতে পড়ে এক মাস করে মাঠের বাইরে ছিলেন বাংলাদেশ দলের এ পেসার। এবারের ইনজুরি তাঁকে এরই মধ্যে ৮ মাস মাঠের বাইরে রেখেছে। সময়ের হিসেবে মাঠের বাইরে থাকার তৃতীয় সবের্াচ্চ সময়টুকু অতিক্রম করে ফেলেছেন মাশরাফি। পারবেন কি আর সেই সময়কে বাড়তে না দিতে? মাশরাফির আত্মবিশ্বাস এবারও চাঙ্গা, 'পারব। ইংল্যান্ডের বিরম্নদ্ধেই ফিরব। ২০০৩ সালে একবার ৯ মাস মাঠের বাইরে ছিলাম। এবার আর তা হতে দিব না। শেষ মুহূর্তে শরীর অসুস্থ না হলে অবশ্য নিউজিল্যান্ড সফরেই ওয়ানডে সিরিজে খেলতাম। ভাগ্য সহায় হয়নি। এবার আত্মবিশ্বাস পরিপূর্ণ আছে। ইংলিশদের সঙ্গেই মাঠে ফিরব। তবে ভাগ্যের সহায়তা অবশ্যই জরম্নরী। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার মাঠে ফিরবই। সেই অপেৰাতেই আছি। কতদিন হলো মাঠের বাইরে। ম্যাচ খেলতে মন ছটফট করছে।'

No comments

Powered by Blogger.