'নাউ আমরা চলে যাবে ছংয়ে' এমনই এফ এম বাংলা! by বিভাষ বাড়ৈ

নাউ আমরা চলে যাবে ছংয়ে, এখন শুন্বেন্ ছং নাম্বার ফাইব, সো লিসেনার্স এবার স্টে কড়ুন আমাদের রেডিও স্টেশন ৮৮.৪ এফএম।" _কথাগুলো শুনতে অদ্ভুত শোনালেও অনত্মত শহরকেন্দ্রিক কেউই এসব কথা শুনে এখন আর অবাক হচ্ছেন না।
অতি আধুনিকতার নামে অদ্ভুত উচ্চারণে বাংলা ইংরেজী মিশ্রিত ভুলে ভরা এ কথা শোনা যায় এখন ২৪ ঘণ্টাই। কেবল নির্দিষ্ট কোন একটি বা দু'টি নয়, দেশের সকল বেসরকারী রেডিও চ্যানেলের বদৌলতে অধিকাংশ ৰেত্রেই জগাখিচুড়ি এই বাংলা শোনা যায় ২৪ ঘণ্টা। তবে অদ্ভুত উচ্চারণের মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিকৃতির যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল বেসরকারী টেলিভিশনে প্রচারিত একটি নাটকের মাধ্যমে। অনেক ভাল কিছুর দাবিদার হলেও খোদ গণমাধ্যমে ভাষার এই বিকৃতিকে আমাদের ভাষা তথা সংস্কৃতির জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন ভাষাসৈনিক, ভাষা বিজ্ঞানী, অধ্যাপকসহ দেশের বিশিষ্টজন। শুদ্ধ, সুন্দর ও সঠিক ভাষা প্রয়োগের স্বার্থে তারা বিষয়টিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের হসত্মৰেপ কামনা করেছেন।
সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এফএম রেডিও চ্যানেলের সংবাদ ও বেশকিছু অনুষ্ঠান মানসম্মত হওয়ায় দ্রম্নতই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাটা অধিকাংশই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে তরম্নণ-তরম্নণীদের মধ্যে। আবার তরম্নণ-তরম্নণীদের আগ্রহের যে স্থানটি নিয়ে অনেক বেশি সমালোচনাও আছে সেটি হলো চ্যানেলগুলোর অনেক আরজে বা রেডিও জকিদের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় অদ্ভুত ভাষা প্রয়োগ। তবে সুন্দর উপস্থাপনার জন্য জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন কেউ কেউ। রেডিও টুডের হেড অব প্রোগাম ও জনপ্রিয় আরজে নীরব তাদের অবস্থান তুলে ধরে বললেন, সব সমালোচনাকেই ইতিবাচক ভাবে দেখি। কারণ যখন আমরা এফএম এর যাত্রা শুরম্ন করি তখন সামনে কেউ ছিল না যার কাছে প্রেরণা পেতে পারি। নিন্দাকে আশীর্বাদ মনে করে নিজেকে আরও সফল করার জন্য অপেৰা করব। এদিকে আছে সংবাদ প্রচারেও অশুদ্ধ উচ্চারণের ব্যাপক অভিযোগ। জানা গেল, অদ্ভুত উচ্চারণের মাধ্যমে ভাষার বিকৃতির যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল বেসরকারী টেলিভিশনে প্রচারিত একটি নাটকের মাধ্যমে। তখনও এফএম রেডিও চ্যানেল যাত্রা শুরম্ন করেনি। ' আনিসুল হকের রচনায় মোসত্মফা সরয়ার ফারম্নকীর পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক '৫১বর্তী' প্রচার হলে এর সংলাপে ভাষার বিকৃতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরম্ন হয়। পুরোপুরি বাংলা ইংরেজি মেশানো না হলেও এই নাটকে ছিল ভাষার আরেক ধরনের বিকৃত ব্যবহার। নাটকে চলিত বাংলার পরিশীলিত ও সর্বজনগ্রাহ্য কথ্যরূপকে বিকৃত করে সংলাপ বলার রীতি প্রবলভাবে দেখা যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাষাসৈনিক, কলামিস্টরা বিষয়টির প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন তখন। যদিও প্রতিবাদ তেমন কোন কাজে আসেনি। বরং অদ্ভুত এই ভাষা প্রয়োগে তরম্নণ সমাজের একটি অংশকে আকৃষ্ট করতে পারায় এরপর থেকে আরও অনেকের বহু নাটকে আরও প্রবল হয়ে ওঠে বাংলা ভাষার এই যথেচ্ছ ব্যবহার। অনেক নাটক, টেলিফিল্মে শোনা যাচ্ছে বিকৃত উচ্চারণের কথা। আঞ্চলিক ভাষার মতো মনে হলেও মূলত এই ভাষা কোন বিশেষ অঞ্চলের ভাষা নয় (অর্থাৎ আঞ্চলিক ভাষায় নয়) বরং কিছু কিছু শব্দ এবং ক্রিয়াপদকে বিকৃত করে (যেমন করসি, খাইসি ইত্যাদি) বলা হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, বাংলা ভাষা উচ্চারণ করার এই প্রবণতা এখন স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক তরম্নণ-তরম্নণীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রয়েছে নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা। তেমনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা। কিন্তু বাংলা ভাষার সর্বজনস্বীকৃত প্রমিত কথ্যরূপ বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠীর েেত্র একই রকম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক টিভি চ্যানেলের উপস্থাপককে হিন্দী বাক্যরীতিতে বাংলা বলতে শোনা যায়। তেমনি বাংলাদেশের রেডিও চ্যানেলের উপস্থাপকদের কণ্ঠেও শোনা যাচ্ছে ইংরেজী ঢংয়ে বাংলায় কথা বলতে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বিজ্ঞাপনেও নির্বিচারে ব্যবহৃত হচ্ছে এই জগাখিচুড়ি ধরনের ভাষা। বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছেন, একই বাক্যে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে এমন উদ্ভট ও হাস্যকর বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে যে, তাতে কোন ভাষারই কৌলীন্য ও মর্যাদা রা হচ্ছে না। এসব ভাষা থেকে শিারও কিছু নেই। বেসরকারী রেডিও'র বিজ্ঞাপনেও বাংলা নাম ব্যবহার করা হয়েছে ইংরেজীতে। আসলে বাংলা ব্যবহারের কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাকরণ ও নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। একইভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থাপনা ও সংবাদ পাঠের েেত্রও অহরহ ভুল ও অশুদ্ধ উচ্চারণের প্রাধান্য ল্য করা যায়। বিশেষ করে 'স' 'শ' ও 'ছ' উচ্চারণের েেত্র ধ্বনিততেত্বর সহজাত নিয়মটিও মেনে চলা হচ্ছে না। র-ফলা, য-ফলা ও রেফসহ তৎসম ও তদ্ভব শব্দের ব্যবহারের েেত্র কোন প্রকার বানান নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। ইংরেজী ভাব জাগাতে 'ছ' এর পরিবর্তে বেসরকারী রেডিও ও টেলিভিশনে অধিকাংশ ৰেত্রেই 'শ' ব্যাবহার করে কথা বলা হচ্ছে নির্বিঘ্নে।

No comments

Powered by Blogger.