৪শ’ বিদেশী লাপাত্তা- এরা নাইজিরিয়া ও ঘানার নাগরিক- এ্যারাইভ্যাল ভিসায় ঢাকায় ঢুকেই by আজাদ সুলায়মান

আগমনী ভিসায় ঢাকায় আসার পর প্রায় ৪শ’ বিদেশী নাগরিক লাপাত্তা হয়ে গেছে। পুলিশ তাদের কোন হদিস পাচ্ছে না। পুলিশের ধারণাÑ এসব বিদেশী নাগরিক রাজধানীতেই ঘাপটি মেরে আছে এবং নানা ধরনের অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।
এরা সবাই আফ্রিকার ঘানা ও নাইজিরিয়ার নাগরিক। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এদের ব্যাপারে জোর তদন্তে নেমেছে। এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান না পেলেও রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বিপুলসংখ্যক বিদেশী নাগরিক বসবাস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশ।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের একটি সূত্র জানায়, গত এক বছরে আগমনী ভিসায় প্রায় চার হাজার বিদেশী দেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বেশিরভাগই আফ্রিকার ঘানা ও নাইজিরিয়ার। এসব নাগরিক সরাসরি বিমানবন্দরে এসে আগমনী ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। বাংলাদেশের কোন ভিসা নীতিমালা না থাকায় তাদের বিনা কারণে প্রত্যাখ্যানও করা যায় না। যাদের নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকেÑ কেবল তাদেরই প্রত্যাখ্যান করা হয়। গত এক বছরে এমন প্রায় ২৫ জনকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, চার হাজার আফ্রিকান ত্রিশ দিনের আগমনী ঢাকায় এলেও তাদের বেশিরভাগই পরে পর্যায়ক্রমে পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। ব্যবসায়িক ও লেখাপড়ার জন্য যারা থাকার প্রয়োজন উল্লেখ করে তাদের বিশেষ বিবেচনায় নেয় পাসপোর্ট অধিদফতর। এদের মধ্যে ফিরে গেছে প্রায় তিন হাজার। ছয় শ’ নাগরিক ঢাকাতেই বৈধভাবে অবস্থান করছে। কিন্তু এখনও ৪শ’ নাগরিকের কোন হদিস মিলছে না। এ ব্যাপারে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ তদন্তে নেমেছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হারিয়ে যাওয়া এসব নাগরিক ঘানা ও নাইজিরিয়া থেকে আগত। তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশে প্রবেশ করলেও পরে আর ভিসার মেয়াদও বাড়ায়নি। সরকারের কোন সংস্থাকেও তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেনি। এদের গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ার পর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ তদন্তে নামে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের খোঁজে গোয়েন্দারা প্রায়ই হানা দেয়।
কোথায় গেল এসব আফ্রিকান জানতে চাইলে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেনÑ এসব নাগরিক সবাই কৃষ্ণাঙ্গ। উত্তরা, মোল্লারটেক, আশকোনা ও নিকুঞ্জ এলাকায় বেশ কিছু আফ্রিকান নাগরিকের সন্ধান মিলেছে। তবে তারা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় শনাক্ত করতে জটিলতা দেখা দেয়। এতে ধারণা করা হচ্ছে এরা বিশেষ উদ্দেশ্যেই গা-ঢাকা দিয়ে থাকছে। গত মে মাসে উত্তরা থানা পুলিশ একটি মেস থেকে কয়েকজনকে প্রতারণা ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেফতার করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, মাদক ব্যবসা, আদম পাচার, অসামাজিক কার্যকলাপ ও প্রতারণার মতো জঘন্য অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি এলসি খুলে আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির আশ্বাসে বেশ ক’জন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকেও প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও রয়েছে এদের যোগাযোগ। এ চক্রের নারী সদস্যরাও উত্তরার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের আস্তানায় গিয়ে অনেকে নিরীহ বাংলাদেশী প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় এখন বিভিন্ন ক্লাবে বেশ ক’জন নাইজিরিয়া ও ঘানার খেলোয়াড় নিয়মিত খেলছে। খেলার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অনেক খেলোয়াড় নিজ দেশে ফেরেনি। তারা রাজধানীতেই আত্মগোপন করে রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে ধরা পড়লে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হয়। এরপর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘানা ও নাইজিরিয়ার খেলোয়াড়দের আগমনী ভিসা প্রদান বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে বেশ ক’জন নাইজিরিয়ান ফুটবলারকে গত সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দরে ভিসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
উত্তরা থানা পুলিশ জানায়, গত এক বছরে প্রায় ৩০ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। বাকিরা জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।
পুলিশ জানায়, জুলাইয়ে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিন নাইজিরীয় তরুণী ও ৬ যুবককে গ্রেফতার করে। প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীকে প্রতারণার অভিযোগে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তারা স্বীকার করেÑ রাজধানীতে কম করে হলেও ৫শ’ নাইজিরিয়ান ও ঘানার নাগরিক সরকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে বসবাস করছে।

No comments

Powered by Blogger.