মাদার রক্তমান্দার হরেক নাম, লাল টকটকে- অনন্য সৌন্দর্যের পারিজাত by তাহমিন হক ববি

ফুল পবিত্র। শুভ্রতা, সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক। চিরকাল ধরেই ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে। বাংলাদেশে দিন দিন ফুলের প্রতি ভালবাসা বাড়ছে। বিশ্বের সব মানুষের কাছেই ফুল অতি প্রিয়।
ফুলকে সবাই ভালবাসে। আগে আমাদের দেশে ফুলের তেমন কদর ছিল না। বর্তমানে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। বিয়ের বাড়ি ও গাড়ি সাজাতে, গুণীজনদের বরণ করে নিতে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে, পুজো-পার্বণে, গায়ে হলুদে, একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, সভা-সমিতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করা হচ্ছে। এতে অনেকে লাভবানও উহচ্ছেন।
আমাদের দেশে গোলাপ, গাদা, চামেলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, রঙ্গন, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, টগর, জবা, মালতি, কামিনী, ইত্যাদি ফুল রয়েছে। এর ভেতরে কিছু আছে বর্ষজীবী এবং কিছু মৌসুমী। তবে এমন কিছু ফুল আছে যার নাম হয়ত আমরা অনেকেই জানিনা। এমন একটি ফুলের জাত হলো মান্দার। বইয়ের ভাষায় এর নাম পরিজাত আর স্থানভেদে এর নাম মাদার, মান্দর, মন্দার, রক্তমান্দার ইত্যাদি । যে নামেই ডাকা হোক না কেন, গাছ কিন্তু সেই একটাই।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা তাঁর ‘ফুলগুলি যেন কথা’ নামক বইতে এই মান্দার স¤পর্কে বলেছেন পরিজাত মাঝারি আকারের দেশী গাছ। গায়ে কাঁটা থাকে। পত্রমোচী। বসন্তে ফুল ফোটে। মঞ্জরিতে অনেক ফুল থাকে। ফুল শিমুল ফুলের মতো, ১০ সেন্টিমিটার লম্বা, গাঢ় লাল। বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে। ডাল কেটে লাগালেও বাঁচে। মাঝারি আকারের এই গাছটি সাধারণত ১৫ মিটারের মতো উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের গায়ে কালো কালো গোটাগোটা কাঁটা থাকে। গাছের গোড়ারদিকের কাঁটাগুলো গাছ বড় হলে ঝরে যেতে দেখা যায় অনেক সময়। অনেকটাই পলাশ ফুলের মত দেখতে এই ফুলগুলো টকটকে লাল।
পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায় ‘মান্দার স্বর্গের ফুল, মর্ত্যরে রাজা শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের কাছ থেকে অনেকটা জোরজবরদস্তি করেই এই পরিজাতকে তার মর্ত্যরে বাগানে এনে লাগান।’ দেখতে যেমন পলাশের মতো তেমনি ফাগুন হাওয়ার পলাশ যখন ডালে ডালে আগুন ঝরায় তখন পরিজাতও ফুটতে শুরু করে। গাছের পাতা ঝরে যায় ফুল ফোটার সময় হলেই। পাতাহীন গাছে ফোটে টকটকে লাল পরিজাত।
এক সময় অবহেলায় বেড়ে ওঠা কাঁটাযুক্ত এই গাছটি গ্রাম অঞ্চলে যত্রতত্র চোখে পড়ত। এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। রাজধানী ঢাকা শহরে আমেরিকান দূতাবাসের সামনে কয়েকটি মান্দার গাছে প্রতিবছর মান্দার ফুল ফোটে। এ ছাড়া গত দুই বছর আগে রামপুরা টিভি সেন্টারে দুটি মান্দার গাছে ফুল এবং রাজধানীর তেজগাঁয়ের ভূমি রেজেস্ট্রি অফিসের গেটে বিশাল একটি পরিজাত গাছে প্রচুর ফুল ফুটতে দেখেছে অনেকে।
জানা যায়, মান্দারের বিচি দেখতে অনেকটা তেঁতুলের মতোই। তেঁতুলের চেয়ে একটু বড় আর গোটা গোটা। পরিজাত খুই নরম কাঠের গাছ হওয়াতে তেমনভাবে কোথাও এর কাঠের ব্যবহার নেই। তবে শোনা যায়, গাছের নরম অংশ কাগজ তৈরিতে সহায়ক।

No comments

Powered by Blogger.