ডাকাত শহীদ কলকাতায় গ্রেফতার, ফেরত আনা হচ্ছে? by ফজলে নোমানী

 ভাঙ্গা ৩.২ বোরের পিসত্মল দিয়ে সন্ত্রাসী জীবন শুরম্ন করা ডাকাত শহীদের নেশা ছিল কেরামবোর্ড খেলা। পুরনো ঢাকার শাবিসত্মান সিনেমা হল বেদখল হয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এখানে ভাড়ায় কেরামবোর্ড খেলা যেত।
সেখানে কেরামবোর্ড নিয়ে ছোটখাটো জুয়ার আসরের মধ্যমণি ছিল এই ছোটখাটো গড়নের ডাকাত শহীদ। কয়েক বছর আগেও নিমতলীতে যখন কেরামবোর্ড খেলতে আসত তখনও তার কাছে অস্ত্র বলতে থাকত প্রায় ভাঙ্গা সেই ৩.২ বোরের পিসত্মলটি। তখন সে ছোটখাটো অপারেশনে যোগ দিলেও কেরাম খেলার নেশা ছাড়তে না পারায় প্রকাশ্যে যে কোন জায়গায় কেরাম খেলতে দাঁড়িয়ে যেত। বর্তমান পুরনো ঢাকায় ত্রাস সুষ্টিকারী ডাকাত শহীদের উত্থানকালীন এই কাহিনী নিমতলী এলাকার জনগণের মুখে মুখে। অথচ সম্প্রতি পুরনো ঢাকায় কমিশনার আহম্মদ হত্যা এবং একই দিনে বাবুবাজারে চাল ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিনকে হত্যা করে ২৫/৩০ লাখ টাকা ছিনতাইসহ ব্যবসায়ীদের একের পর এক হত্যার হুমকি ও চাঁদা দাবির নেপথ্য নায়ক নাকি এই শহীদ। পুরনো ঢাকার অন্যতম ত্রাস তনাই মোলস্নার নজরে পড়েই দ্রম্নত শহীদ ভয়ঙ্কর 'ডাকাত শহীদ' বনে যায় বলে তথ্য রয়েছে।
সিআইডির একটি উর্ধতন সূত্রমতে, ডাকাত শহীদ কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সে কলকাতায় গ্রেফতার এবং তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সিআইডির সিনিয়র এ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার আব্দুলস্নাহ আরেফ মঙ্গলবার জনকণ্ঠের কাছেও এ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, আহসানউলস্নাহ মাস্টার হত্যা মামলার আসামি দিপু এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী হারেসের সঙ্গে ডাকাত শহীদ ও কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছে। তাদের শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজ, ইমন এবং লম্বু সেলিমদের মতো পুশব্যাক কায়দায় দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ইতোপূর্বে এই কায়দায় ভারতে অবস্থানকারী ৫ সন্ত্রাসীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলেও অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরম্নল ইসলাম জয় ভারতীয় পাসপোর্ট আইনে গ্রেফতার হবার পর তাকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হলেও সে ছাড়া পেয়ে ভারতেই আত্মগোপনে চলে যায়।
কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ে এখন আন্ডারওয়াল্ডে সবচেয়ে এগিয়ে কারাগারের ১০ সেলে থাকা একদার ছাত্রদল ক্যাডার মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল এবং পরুনো ঢাকার ডাকাত শহীদ। কারাগারে আটক থাকলেও পিচ্চি হেলালের কোন মামলাতেই অদ্যাবধি কোন সাজা হয়নি। তার ওপর প্রতিমাসেই ৭/৮টি মামলায় আদালতে হাজিরা থাকায় পিচ্চি হেলাল আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে অঢেল অর্থের বিনিময়ে ফ্রি মুভমেন্ট করার সুযোগে কন্ট্রাক্ট গ্রহণ এবং এ্যাসাইনমেন্ট বাসত্মবায়ন করে চলেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়। অন্যদিকে, ভারতে আত্মগোপনে থাকা ডাকাত শহীদ তার লোকাল কিলার বাহিনীর মাধ্যমে মোবাইলে যোগাযোগ রৰা করে চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক অপারেশন। এই দুজনের পেছনে নেপথ্য কোন রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন থাকতে পারে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আহাম্মদ হত্যার পেছনে অনেক কারণে যুক্ত হলেও ডাকাত শহীদের কিলার বাহিনীই অপারেশন করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনেকখানি নিশ্চিত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার এবং মহানগর (দৰিণ) যুবদলের সভাপতি আহাম্মদ হোসেন (৫০) নিহত হবার ঘটনায় অপারেশনে অংশ নেয় ভাড়াটে কিলার গ্রম্নপ। গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মনিরম্নল ইসলাম জানান, ঢাকা মহানগর দায়রা জজের আদালত এলাকার সন্ত্রাসী গ্রম্নপ এবং ডাকাত শহীদের 'বি' টিম বলে পরিচিত বাবু ওরফে টাক বাবুসহ তার দলের আরও কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ। বাবুবাজারে মঙ্গলবার দিনদুপুরে চাল ব্যবসায়ী আফিল উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে ২৫/৩০ লাখ টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের অভিযোগে এই বাবু গ্রম্নপের সঙ্গে সক্রিয় শাহীন এবং আব্দুল খালেক সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এর ক'দিন আগেই বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেনের ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও ডাকাত শহীদের লোকজন যুক্ত বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদ গ্রম্নপের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে কমিশনার আহাম্মদের দীর্ঘ বিরোধ ছিল। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের কতর্ৃত্ব নিয়ে বিরোধ ও এক সময় সাংঘর্ষিক অবস্থানে পেঁৗছায়। এ ব্যাপারে আহাম্মদ হাজীকে বাগে না পেয়ে ডাকাত শহীদ আহাম্মদ হাজীর নবাবপুরের বাড়িঘরেও হামলাও করেছিল। এছাড়া ৮৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শহীদের সঙ্গেও কমিশনার আহাম্মদের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বও ছিল। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) নেতা জাহাঙ্গীর শিকদারের সঙ্গে তার জমি সংক্রানত্ম বিরোধ ছিল।
কমিশনার শহীদের প্রতিবাদ
রাজধানীর ৮৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার সইদুর রহমান সহিদ স্বাৰরিত এক প্রতিবাদলিপিতে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় প্রকাশিত "মাঠে নামানো হয়েছে কিলার গ্রম্নপ" শীর্ষক সংবাদটির আংশিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিবাদলিপিতে তিনি দাবি করেন, কখনও তিনি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সবসময় দেশের আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আইনজীবী হবিবুর রহমান ম-ল হত্যা মামলায় সুপ্রীমকোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে আদালতের বৈধ আদেশ বলে ফরিদপুর কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। যুগানত্মরসহ কয়েকটি পত্রিকায় ওই সংবাদ প্রকাশেরও দাবি করা হয়। উলেস্নখ্য, প্রকাশিত সংবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কতর্ৃপৰের বরাত দিয়ে আইনজীবী হাবিবুর রহমান ম-ল হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি কমিশনার শহীদ এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তনাই মোলস্নার কোন হদিস কারা কর্তৃপৰের জানা নেই বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.