মেরিন ড্রাইভওয়ে ইকো রিসোর্ট-নানা পরিকল্পনা- পর্যটন নগরী কক্সবাজার-৪

'হাই ভ্যালুড টুরিস্ট' আকর্ষণই এখন পর্যটনের মূল লৰ্য। 'ভিশন ২০২১'-এর আওতায় আগামী এক দশকের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ বিদেশী পর্যটকের লৰ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
মেরিন ড্রাইভওয়ে সংস্কারের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের ১২০ কিলোমিটারব্যাপী অভগ্ন সৈকত ও পাহাড়ের নান্দনিক রূপ একসঙ্গে দেখার সুযোগ, ড্রাইভওয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সময় সাশ্রয়, মনখালিতে বিদেশীদের জন্য এক্সকুসিভ টুরিস্ট জোন নির্মাণ, সহজাত জীববৈচিত্র্য সংরৰণের জন্য সৈকতের ১০টি জোনে ইকো রিসোর্ট তৈরি, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ, সৌন্র্দযবর্ধনের জন্য স্থাপতশৈলী নির্মাণ, সৈকত ঘিরে নারকেল বীথি করা এবং সর্বোপরি অপরিকল্পিত হোটেল-মোটেলসহ বহুতল ভবন নির্মাণে লাগাম টেনে ধরার পদৰেপ নেয়া হচ্ছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপৰ নামে একটি পৃথক সংস্থা গঠন করে সেখানে ভবন নির্মাণসহ সব কিছু তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়ারও চিনত্মাভাবনা আছে সরকারের।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী জিএম কাদের তাঁর কার্যালয়ে জনকণ্ঠকে দেয়া একানত্ম সাৰাতকারে কক্সবাজারকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা পর্যটকদের কাছে নতুন কক্সবাজার উপহার দিতে চাইছি। সেখানের মানুষদের আমরা উপলব্ধি করাবার চেষ্টা করছি যে, 'এ বিচ বাঁচলে আমরাও বাঁচব'। স্থানীয়দের বুঝতে হবে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিলে তাদেরই পেটে লাথি পড়বে। তিনি জানান, পর্যটক আকর্ষণ ও পর্যটনের গুরম্নত্ব তুলে ধরার জন্যই চলতি বছরের যে কোন একটি মাসকে 'পর্যটন মাস' হিসেবে উদ্যাপন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সে লৰ্য থেকেই ফেব্রম্নয়ারিকে পর্যটন মাস হিসেবে পালন করা হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচীর মাধ্যমে। আর ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে উপলৰ করে দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার, প্রসার ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য 'পর্যটন বর্ষ' উদ্যাপন করা হবে।
এরশাদ সরকারের সময়ে সর্বপ্রথম কক্সবাজারকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপকভাবে একটি মাস্টারপস্নান নেয়া হয়। কিছু কাজ হলেও তা সফলভাবে বাসত্মবায়ন হয়নি। পরের সরকারগুলো কক্সবাজারকে ঘিরে বড় ধরনের কোন পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কক্সবাজারসহ কম-বেশি সব জেলার জন্য একটি মাস্টারপস্নান তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। তত্ত্বাবধানে থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মাস্টারপস্নান তৈরির কাজ দেয়া হয় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে। তবে কোনটিই শেষ পর্যনত্ম আলোর মুখ দেখেনি। সেসব মহাপরিকল্পনার 'পরি' উড়ে গিয়ে শুধু 'কল্পনা'ই পড়ে রয়েছে। সর্বশেষ মহাজোট সরকার আরেকটি মাস্টারপস্নান তৈরির কাজ শুরম্ন করেছে। তা তৈরি করতে দেয়া হয়েছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান শেলটেককে।
কক্সবাজারকে ঘিরে ইতোমধ্যে কিছু কিছু কাজ শুরম্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়র। জেলা প্রশাসক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, মেরিন ড্রাইভওয়ে তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৮০ কিলোমিটার লম্বা ও ৫ দশমিক ৪৮ ফুট চওড়া এ হাইওয়েটির নির্মাণ শেষ হলে এটি কক্সবাজার-টেকনাফের সময় সাশ্রয়ী বিকল্প রাসত্মা হবে। এ ড্রাইভওয়ে হলে পর্যটকরা একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম অভগ্ন সৈকত ও পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ পাবেন। তিনি জানান, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশের ভারসাম্য রৰায় উখিয়া, টেকনাফ, রামু ও কক্সবাজার সদর-এ চারটি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নারকেল বীথি করা হচ্ছে। লাবণী পয়েন্ট থেকে গাছ লাগানোর কাজ শুরম্ন হয়েছে। ২০১৩ সালে গাছ লাগানোর কাজ শেষ হবে। তিনি জানান, ঝাউবনের মতো এ গাছগুলোও যেন কেটে উজাড় করে ফেলা না হয় সে কারণে নারকেল বীথি প্রকল্পের সঙ্গে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এলাকার লোকজনই গাছগুলো দেখাশোনা করবে এবং লাভের এটি অংশ ভোগ করবে। তিনি জানান, সৈকতের ১০টি জোনে ইকো রিসোর্ট তৈরির কাজ শুরম্ন হবে চলতি বছরের জুন মাসে। সৈকতের পাশে একটি থিম পার্ক, চিলড্রেন পার্ক, আনত্মর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও কেবল কার নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বিদেশী পর্যটকদের কথা চিনত্মা করে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হচ্ছে। ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে ৩০২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ উন্নয়ন কাজ শেষ হবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, কক্সবাজারের পর্যটকদের 'জল ও বালি দর্শন আর হোটেলে ঘুম'-এর ঘেরাটোপ থেকে বের করে আনতে বিচে উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
এ ছাড়া লাবণী পয়েন্টে জেলা পরিষদের উদ্যোগে বিচ পার্ক হচ্ছে। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আকর্ষণীয় মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অপেৰা এখন বিনিয়োগকারীর। এ ছাড়া ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০ ফুট উঁচু তিমি মাছের স্থাপত্য নির্মাণ করা হবে। হবে বিশালকায় এ্যাকুরিয়াম।

No comments

Powered by Blogger.