৬ জানুয়ারি মেলবোর্নের দুই দল রেনেগেডস ও স্টারসের ম্যাচে কুিসত এক ‘যুদ্ধে’ জড়িয়েছিলেন ওয়ার্ন ও স্যামুয়েলস- স্যামুয়েলস এখন কিংবদন্তি!

ক্যারিয়ার রেকর্ড এখনো গড়পড়তা। তবে ওসব পারফরম্যান্স-পরিসংখ্যানের হিসাব চুলায় যাক। মারলন স্যামুয়েলসের হিসাব পরিষ্কার, তিনি এখন কিংবদন্তি! বিগ ব্যাশের এক রাতই তাঁকে কিংবদন্তি করে তুলেছে।
শেন ওয়ার্নের মতো একজন কিংবদন্তির কাছ থেকে এত বড় ‘সম্মান’ পান যিনি, তিনিও তো এক কিংবদন্তি! সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ জানলে স্যামুয়েলসের খোঁচাটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ৬ জানুয়ারি মেলবোর্নের দুই দল রেনেগেডস ও স্টারসের ম্যাচে কুিসত এক ‘যুদ্ধে’ জড়িয়েছিলেন ওয়ার্ন ও স্যামুয়েলস। স্টারসের ইনিংসে একবার দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় আচমকা ডেভিড হাসির শার্ট খামচে ধরেন বোলার স্যামুয়েলস। হতভম্ব হাসি দ্বিতীয় রানটা নিতে পারেননি। পরে রেনেগেডসের ব্যাটিংয়ের সময় স্যামুয়েলস একবার দ্বিতীয় রান নিতে উদ্যত হতেই ওয়ার্ন এগিয়ে গিয়ে গালি দিয়ে বলেন, ‘আরও কাউকে খামচে ধরতে চাও?’ এরপর স্যামুয়েলসের শার্ট খামচে ধরে ওয়ার্ন দেখান, এভাবেই স্যামুয়েলস খামচে ধরেছিলেন হাসির শার্ট। আঙুল বাগিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিতও করেন। খানিক পর স্যামুয়েলসের একটি ড্রাইভে ফিল্ডিং করে খুব কাছ থেকে তাঁর গায়ে আলতো করে বল ছুড়ে মারেন ওয়ার্ন। ক্ষিপ্ত স্যামুয়েলস ওয়ার্নের দিকে ছুড়ে মারেন ব্যাট, ওয়ার্নের মাথার ওপর দিয়ে ব্যাট গিয়ে পড়ে আম্পায়ারের কাছে। গজরাতে গজরাতে ফিরে যান ওয়ার্ন, হাঁটতে হাঁটতে ইঙ্গিত করে দেখান, স্যামুয়েলসের মাথায় সমস্যা আছে।
পরে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সাড়ে চার হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা গুনতে হয় ওয়ার্নকে। কিন্তু স্যামুয়েলসকে কোনো শাস্তি দেননি আচরণবিধি কমিশনার জন প্রাইস। ‘তীব্র উসকানি’ পেয়েই অশোভন আচরণ করেছিলেন যুক্তি দেখিয়ে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার পার পেয়ে যান স্রেফ তিরস্কার শুনেই।
ঘটনার পর এই প্রথম মুখ খুললেন স্যামুয়েলস। দি এজকে শোনালেন তাঁর কিংবদন্তি-তত্ত্ব, ‘মাঠে সেদিন অনেক বাচ্চা ছিল, টি-টোয়েন্টি মানেই পারিবারিক একটা ব্যাপার। আমি তাই খুব বাজেভাবে প্রতিক্রিয়া জানাইনি। সে যেমন আচরণ করছিল, আমিও ঠিক তেমন আচরণ করে জিতে গেছি। শুনেছি অস্ট্রেলিয়ায় সে কিংবদন্তি। আমার সঙ্গে ওই আচরণ করে সে মর্যাদাটা আমাকে দিয়ে দিয়েছে। এখন তাই আমিও কিংবদন্তি!’
স্যামুয়েলসের দাবি, ওয়ার্নই সেদিন বাড়াবাড়ি করেছেন, ‘মাঠে কথা বলে প্রতিপক্ষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা ঠিক আছে, তাই বলে শরীর পর্যন্ত গড়ানো ঠিক নয়। কিন্তু সে এটাই করেছে। ব্যাপারটাকে আরেক ধাপ নিচে নামিয়েছে সে, যেটা ছিল বাড়াবাড়ি। বেপরোয়া হয়ে সে যা ইচ্ছা করছিল। টুর্নামেন্টের প্রতীক হয়ে বাচ্চাদের সামনে এমন কিছু করা ঠিক হয়নি।’
ওই ম্যাচেই পরে লাসিথ মালিঙ্গার বলে চোখে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন স্যামুয়েলস। দুই সপ্তাহ ধরে চিকিত্সা নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়াতেই। সেদিন চোখে আঘাত পেয়ে কাতরানোর সময় বোলার মালিঙ্গা ছাড়া আর কেউ এগিয়ে যাননি তাঁর পাশে। এটা নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েননি এই জ্যামাইকান, ‘এটা তো যুদ্ধ নয়, স্রেফ একটি খেলা। আমাদের কাজ মানুষকে বিনোদন দেওয়া, একই সঙ্গে অন্য ক্রিকেটারদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোও। এই টুর্নামেন্টটা দারুণ, কিন্তু আয়োজকদের উচিত শৃঙ্খলার দিকে আরেকটু নজর দেওয়া। এটা বক্সিং তো নয়।’
আঘাত পাওয়ার পর স্যামুয়েলসের পাশে না যাওয়া নিয়ে অবশ্য ন্যূনতম দুঃখবোধ নেই প্রতিপক্ষের সহ-অধিনায়ক ক্যামেরন হোয়াইটের, ‘আমার মনে হয় না ওকে সবাই খুব একটা পছন্দ করে। শুধু মেলবোর্ন স্টারসে নয়, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটেই। লোকের ধারণা, ওর একটু ভাব আছে। ওর কাছে না যাওয়ার সম্ভবত বেশ কিছু কারণ আছে, আমরা বেশ ব্যস্তও ছিলাম।’
শুধু তিরস্কার শুনেই স্যামুয়েলস পার পেয়ে যাওয়াতেও বিস্মিত হোয়াইট, ‘উসকানি কোনো অজুহাত হতে পারে বলে আমি মনে করি না। এটা অনন্য একটা ব্যাপার, তাই না? ক্রিকেট মাঠে ব্যাট ছুড়ে দিয়েও উসকানি ছিল বলে পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা কটি আছে! আমি তো আগে কখনো দেখিনি!’ ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.