যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার রাজধানীতে ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে ভাষণ দানকালে বলেছেন,
‘জানোয়ারদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে যেমন নিরপেক্ষতা রাখা যায় না; তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষতার কোন স্থান নেই।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সমগ্র জাতি পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; সে সময় হানাদারদের দালাল জামায়াত ও তাদের সহেযাগীরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য রাজাকার, আলবদর আল ও শামস বাহিনী গঠন করেছিল। তাদের সেদিনের সেই ধ্বংসযজ্ঞের কথা এ দেশের মানুষ কখনোই বিস্মৃত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতারে একটি জনপ্রিয় সেøাগান ছিল, ‘পাকিস্তানী পশুরা বাংলাদেশে মানুষ হত্যা করছে; আসুন আমরা পশু হত্যা করি।’ যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের সহযোগীদের বিষয়ে এটাই ছিল সংগ্রামী বাঙালীর মনের একান্ত উচ্চারণ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হন। এরপর স্বাধীনতাবিরোধীরা মূলত ক্ষমতা দখল করে। এরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। খন্দকার মোশতাক ও জেনারেল জিয়ার শাসনামলে দেশে সর্বস্তরে সুকৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল করা হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো হয়। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশে মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রতিশ্রুতি রেখেছে; একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তারা ‘যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি যথার্থই বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশের তরুণ সমাজ য্দ্ধুাপরাধীদের বিচারের পক্ষে রায় দিয়েছে। সুতরাং এই বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব করলে চলবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়, তারা দেশের শত্রু। দেশে আইনের শাসন বজায় রাখতে হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই করতে হবে।
যারা বিচারকার্যকে বিলম্বিত করতে চায় তাদেরকেও শনাক্ত করা দরকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকরের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ শোধের সুযোগ পাবে ও দায়মুক্ত হতে পারবে। তবে জামায়াত চক্র বেশ কিছুকাল ধরে দেশে বিশৃঙ্খলা ও অচলাবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে তৎপর। তাদের মূল লক্ষ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করা। এ সেমিনারে বক্তৃতাকালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘যারা এ বিচার বানচাল করবে তাদের রাজনীতি থেকে বিদায় জানাতে হবে।’
২০১৩ সাল জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। গত ২১ জানুয়ারি যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ ঘোষিত হয়েছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়ে গেল। অপরাপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় শিগগির ঘোষণা করা হবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

No comments

Powered by Blogger.