ওবামার শপথগ্রহণ

বারাক ওবামা দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোমবার শপথ নিয়েছেন। আমেরিকার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা এটাই ছিল এবারের শপথ গ্রহণের সেøাগান।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দু’বার হয়েছে। সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার জন্য দু’বার শপথ নিতে হলো। ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের পর এই প্রথমবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে নতুন প্রেসিডেন্টকে দু’বার শপথ নিতে হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ২০ জানুয়ারি অবশ্যই শপথ নিতে হবে। এ জন্যই তাঁকে ২০ তারিখে হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিতে হয়। এ অনুষ্ঠান ছিল অনেকটাই ব্যক্তিগত। রবিবার সে দেশে ছুটির দিন হওয়ায় অফিস-আদালত বন্ধ থাকার কারণে প্রচলিত রীতি মেনে উৎসবমুখর পরিবেশে ওইদিন শপথগ্রহণ সম্ভব হয়নি। তাই সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ার। সামরিক, অর্থনৈতিক-সকল দিক থেকেই দেশটির অবস্থান সবার উপরে। কিন্তু তারপরও দেশটিতে বিশেষ করে অর্থনৈতিক সঙ্কট অনেকটাই ব্যাপক। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে অন্য অনেক সমস্যার মধ্যে অর্থনৈতিক সমস্যারও মোকাবেলা করতে হবে। এবারও তাঁর সামনে রয়েছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। এই অর্থনৈতিক সঙ্কট দেশে ব্যাপক বেকারত্ব এবং দেশের ভেতরে বিপজ্জনক অস্ত্রের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংস্কার সাধন করতে হবে। দেশে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, বেকারদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। কতটা দক্ষতার সঙ্গে তিনি এসব সমস্যার মোকাবেলা করবেন, কতখানি যোগ্যতা ও পরিদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারবেন। সেদেশের নাগরিকরা সেটাই দেখবেন। এসব সমস্যার মোকাবেলা তিনি ভালভাবেই করতে পারবেন সেটা তাঁর বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। মার্কিন নাগরিকরা সেই আস্থা নিয়েই তাঁকে দ্বিতীয়বারের জন্য হোয়াইট হাউসে পাঠিয়েছে। ওবামা যে এসব সমস্যা বিষয় ভালভাবেই সচেতন সেটা বোঝা যায়।
এখানে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য শপথগ্রহণকারী মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে। ওবামার নিজের জীবনও অত্যন্ত সংগ্রামী। ওবামা কৃষ্ণাঙ্গ। ওবামার মা শ্বেতাঙ্গিনী, কানসাসের মেয়ে। বাবা কৃষ্ণাঙ্গ, কেনিয়ার। ওবামার বয়স যখন দু’বছর তখন বাবা তাদের ছেড়ে যান। মা তাঁকে নিয়ে চলে যান ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে তিনি আবার বিয়ে করলে ওবামা চলে যান নিজ জন্মস্থান হাওয়াইতে। সেখানে তরুণ বয়স পর্যন্ত কাটান নানা-নানির সঙ্গে। তিনি পড়াশোনা করেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড ল’ কলেজে। এরপর নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তাঁর উত্থান।
যে পরিবর্তনের কথা বলে তিনি প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন, দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে পারলে সেই পরিবর্তন তিনি সম্পূর্ণরূপে আনতে পারবেন বলে আমেরিকানদের কথা দিয়েছিলেন। ভোটাররা তার প্রতি আস্থা রেখেছে। এখন তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণের পালা। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও হানাহানিমুক্ত একটি কল্যাণময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা হোক ওবামা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.