আবার প্রাণ পেয়েছে 'কাউরনা'

অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের মধ্যে একসময় বহু ভাষার প্রচলন ছিল। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকলে অনেক ভাষাই ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। ১৯ শতকে বিলুপ্ত হওয়া তেমনই একটি ভাষা নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে একদল গবেষকের নিবিড় প্রচেষ্টায়।
নিজেদের দৈনন্দিন ব্যবহারে ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়ানোর মধ্য দিয়ে ভাষাটিকে অতি যত্নে লালন করছেন তাঁরা।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় 'কাউরনা' নামের ভাষাটির একসময় বেশ রমরমা ছিল। অ্যাডিলেইডের আদিবাসীদের মুখের ভাষা ছিল এটি। কিন্তু এর বিলুপ্তির শুরু হয় ১৮৬০-এর দশকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায়। ধারণা করা হয়, কাউরনা ভাষায় স্বচ্ছন্দভাবে কথা বলা সর্বশেষ মানুষটির নাম ইভারিটজি। তিনি মারা যান ১৯২০-এর দশকে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভাষাটিও পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়। ৮০ বছরেরও বেশি সময় পরে 'কাউরনা' আবারও মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।
কাউরনা ভাষাকে পুনর্জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে গবেষকরা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক আর্কাইভ ও ঔপনিবেশিক আমলের দলিল-দস্তাবেজের আশ্রয় নেন। তা করতে গিয়ে জানা যায় ভাষাটিকে সযত্নে বাঁচিয়ে রাখতে দুই জার্মান ধর্মপ্রচারকের অবদানের কথা। তাঁদের নাম ক্রিস্টিয়ান টিকেলম্যান ও ক্লামোর শ্যুরম্যান। এ দুজন ১৮৩৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর ১৮ মাসের মধ্যেই ভাষাটিকে সংরক্ষণের কাজ হাত দেন। তাঁরা এর প্রায় দুই হাজার শব্দের একটি শব্দকোষ গড়ে তোলেন। এ ভাষায় প্রায় ২০০ বাক্য অনুবাদ করেন এবং ব্যাকরণের প্রধান প্রধান নিয়মগুলো তৈরি করেন। তাঁরা সেখানে একটি স্কুলও খোলেন এবং ওই স্কুলে কাউরনা ভাষায়ই পড়ানো হতো। ছয় বছর চলার পর ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ ইংরেজির বাইরের কোনো ভাষাকেই তখন সহ্য করতে পারত না।
অ্যাডিলেইডের ভিনসেন্ট জ্যাক বাকস্কিন আদিবাসী ও বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য এ ভাষা শিক্ষার দুটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করেছেন। তিনি বলেন, 'এটা আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়সংশ্লিষ্ট একটা বিষয়। প্রথম দিকে এটা শেখা একটু কঠিন এবং আমাদের অভ্যাসের ইংরেজি ভাষা থেকে আলাদা।' অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনডিজেনাস স্টাডিজের গবেষক ড. বিল ফগারটি বলেন, 'ঔপনিবেশিক শাসনামলে এসব আদিভাষা ধ্বংসে সুনির্দিষ্ট তৎপরতা চালানো হতো।' ওই সময়ে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ দেশি ভাষা ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। এর প্রায় অর্ধেকেরই পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটেছে। বাকস্কিন ও তাঁর সঙ্গীরা আশা করছেন, অল্প কিছু ছাত্রছাত্রী সাবলীলভাবে এ ভাষায় কথা বলতে পারলেই এর ভবিষ্যৎ উজ্জল হবে।
তিনি বলেন, 'আমার দেড় বছরের একটি মেয়ে আছে। আমি ওর সঙ্গে শুধু এ ভাষাটিতেই কথা বলি। সে হবে আধুনিক বিশ্বে জন্মের পর থেকেই কাউরনা ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলা প্রথম মানুষ।' সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.