জিয়া বদলে শাহজালাল- মন্ত্রিসভায় জোট আমলের সব স্থাপনার নাম বদলে আগের নাম পুনর্স্থাপনের সিদ্ধান্ত

ঢাকায় জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহজালাল (রহ.) আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর, করা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ঢাকার আনত্মর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তনের প্রসত্মাব চূড়ানত্ম অনুমোদন দেয়া হয়।
একই সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় বরিশাল এর নাম পরিবর্তন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধানত্ম হয় যে, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সম্পর্কিত রায় অনুসারে কোন অবৈধ স্বৈরশাসকের নামে কোন স্থাপনার নাম থাকতে পারে না। এ ছাড়া ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ৰমতায় আসার পর যে সকল স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল তা পুনঃস্থাপন করা হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রসত্মাবে বলা হয়, বহু সুফি, সাধক ও ধর্ম প্রচারকদের স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যভূমি এই বাংলাদেশ। তাঁদের উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এদেশের জনগোষ্ঠীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। সে কারণে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের স্মৃতি রৰার্থে বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইতোপূর্বে সিলেটে ওসমানী বিমান বন্দর, চট্টগ্রামে শাহআমানত বিমান বন্দর, খুলনায় খানজাহান আলী বিমান বন্দর, রাজশাহীতে শাহ মকদুম (রা.) বিমান বন্দর নামকরণ করা হয়েছে সুফি, সাধক ও ধর্ম প্রচারকদের নামে। এরই ধারাবাহিকতায় জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহজালাল আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা নামকরণ করা যেতে পারে। এই প্রসত্মাবের প্রেৰিতে সোমবার মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহজালাল আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকা করার প্রসত্মাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
১৯৭৯ সালে তেজগাঁওয়ের কুর্মিটোলা থেকে বিমানবন্দরটি উত্তরায় স্থানানত্মর করে এর নামকরণ করা হয় ঢাকা আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর। ১৯৮১ সালে ঢাকা আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে এর নামকরণ করা হয় জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর।
জিয়াউর রহমানের মৃতু্যর পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার ঢাকা আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করেন। এর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তখন এর নাম জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে থাকে। এর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই নাম পরিবর্তন করে আবার ঢাকা আনত্মর্জাতিক বিমান বন্দর নামকরণ করে। কিন্তু ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ৰমতায় এসে দ্রম্নততার সঙ্গে এই বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে আবার জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমান বন্দর নামকরণ করে। মহাজোট সরকার ৰমতায় এসে এবার এর নাম হযরত শাহজালাল আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা নামকরণ করা হলো। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন নিয়ে মন্ত্রিসভায় ব্যাপক আলোচনা হয়। সভায় মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য বলেন, আদালত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সম্পর্কিত যে রায় দিয়েছে, সে রায় অনুসারে কোন অবৈধ স্বৈরশাসকের নামে কোন স্থাপনার নাম থাকতে পারে না। মন্ত্রিসভায় আরও সিদ্ধানত্ম হয় যে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ৰমতায় আসার পর যে সকল স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল তা পুনঃস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধানত্ম হয়, বিগত জোট আমলে দেশের ৫০টিরও বেশি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেগুলো সব আগের নামে ফিরিয়ে আনা হবে। বিগত আমলে অন্যায়ভাবে নাম পরিবর্তন করা স্থাপনাগুলো ধারাবাহিকভাবে আগের নামে ফিরিয়ে আনা হবে।
এদিকে বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করায় সোমবার বিএনপি সংসদ অধিবেশন থেকে ১০ মিনিটের জন্য ওয়াক আউট করে। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নক বিবিসিকে বলেন, সরকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে, ৰমতার জোরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম বিমানবন্দর থেকে মুছে ফেলতে চায়। এই নাম পরিবর্তনের কারণে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রতিবাদস্বরূপ আমরা ১০ মিনিটের জন্য সংসদ অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেছি। এর প্রতিবাদে কঠিন কর্মসূচী দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন বলেন, বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের তাগিদ এখনই অনুভব করছি ঠিক তা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছিলেন অথবা যারা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, তাদের নামে নামকরণ করা বিভিন্ন স্থাপনাগুলোর নাম ২০০১ এর নির্বাচনের পর ২০০৬ সাল পর্যনত্ম সময়ে বদলে ফেলা হয়েছে। এই নামকরণগুলো সব যে সরকার করেছিল তা ঠিক নয়, অনেক ৰেত্রে দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামকরণ করেছিল। জোট সরকার জনগণের এই ইচ্ছাকে তোয়াক্কা না করে, বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা না দেখিয়ে এ স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে। এমনকি মেঘনা নদীর ওপরে একটি ব্রিজ সৈয়দ নজরম্নল ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু জোট আমলে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রয়াত সাইফুর রহমান বলেছিলেন, কোথাকার কোন নজরম্নল ইসলামের নামে এটি করা হয়েছে। এমন কথা বলে, এই নেতার নামও পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, আমরা একটি নীতি নিয়েছি, তারা যে নামগুলো পরিবর্তন করেছে তার সব আমরা প্রতিস্থাপন করব।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন ২০১০ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এই আইনের আওতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইপিজেড শ্রমিক কল্যাণ সমিতি আইন ২০১০, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০, কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এবং চার্টার্ড সেক্রেটারি আইন ২০১০-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, প্রতিমন্ত্রীগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংশিস্নষ্ট সচিবগণ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব।

No comments

Powered by Blogger.