কুরুচির বক্তব্য সামাল দিতে জেরবার স্পীকার

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বাকযুদ্ধে জমে উঠেছিল সংসদের বৈঠক। বৈঠকে বিরোধী দল দু'দফা ওয়াকআউট করেছে।
সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার পরিবর্তে পরস্পরকে ঘায়েল করতে প্রয়োগ করা নানা অসংসদীয়, কুরম্নচিপূর্ণ ও ব্যক্তি আক্রমণাত্মক বক্তব্য সামাল দিতে গলদঘর্ম অবস্থা হয় স্পীকার এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের। কার্যপ্রণালী বিধি লঙ্ঘন না করার জন্য স্পীকার বার বার অনুরোধ করলেও সেদিকে কেউ কর্ণপাত করেননি। দু'পৰের শাণিত ব্যক্তি আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান থেকে শুরম্ন করে দুই দলের শীর্ষ দুই নেত্রী। সোমবার প্রথম রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নেয় বিরোধী দল। সরকারী দলকে ঘায়েল করতে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারের ফলে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। শেষ পর্যায়ে সরকারী দলের নজরম্নল ইসলাম বাবুর একটি মনত্মব্যের প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে বিরোধী দল ফাইল ছুড়ে আবারও সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে। ওয়াকআউটের মাত্র ২ মিনিট পরেই সংসদের বৈঠক মুলতবি করেন স্পীকার। ওয়াকআউটের পর সরকারী দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, বিরোধী দল যতৰণ তাদের এমপিদের বক্তব্য ছিল ততৰণ থেকেছে। যখনই শেষ হয়েছে তখন বিনা ইসু্যতে ওয়াকআউটের নাটক করে চলে গেল।
জমজমাট বাকযুদ্ধে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিটি সদস্যের দেয়া অসংসদীয় ও অশালীন বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে করতে এক পর্যায়ে ৰুব্ধ হয়ে স্পীকার বলেন, 'আমি তো কারোর টুটি চেপে রাখতে পারি না। ফোর দেয়ার পর কে কী বলবেন, ত তো আমার জানা থাকে না। সরকার ও বিরোধী দল যে পৰই কুরম্নচিপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন তা এক্সপাঞ্জ করা হবে। দয়া করে শালীনতার মধ্যে থেকে কথা বলুন।'
শেষ পর্যায়ে বিরোধী দলের ওয়াকআউটের পর দুঃখ প্রকাশ করে স্পীকার বলেন, এক পৰ আক্রমণ করলে অন্য পৰ উৎফুলস্ন হয়। আক্রমণাত্মক কোন বক্তব্য, অসংসদীয় ভাষা _এগুলো এক্সপাঞ্জ হবে, তা সত্ত্বেও ওয়াকআউট করা উচিত হয়নি বলেই আমি মনে করি। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রাণবনত্ম, কার্যকর সংসদ। দীর্ঘদিন পর সরকার ও বিরোধী দল একজন বলছে, অন্য পৰ শুনছে। এতে উভয় পৰের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। উভয় পৰের মধ্যে ধৈর্য, সহিঞ্চুতা বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনই অবনতি হয়েছে যে, এখন দেশে নুনের চেয়ে খুনের দাম কম। দেশকে ক্যান্সার রোগীতে পরিণত করেছে। দেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করতে গোপন চুক্তি করেছে। জবাবে সরকারী দল বলেছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্নীতি-সন্ত্রাস আর দুঃশাসনের জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন হওয়ায় তাদের আজ মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সংসদে দাঁড়িয়ে আরেকটি ১৫ আগস্টের হুমকি দিচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে হুমকি দাতাকে আইনে সোপর্দ করার দাবি জানান তাঁরা।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আলোচনার জন্য স্পীকার এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ দিনের কার্যসূচীতে থাকা প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপন এবং জনগুরম্নত্বসম্পন্ন নোটিস স্থগিত করেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের হুইপ শেখ আবদুল ওহাব, খান টিপু সুলতান, প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান, মুরাদ হাসান, মোলস্না জালাল উদ্দিন, আবদুলস্নাহ-আল-ইসলাম জ্যাকব, মকবুল হোসেন, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ডা. আনোয়ার হোসেন, টিপু মুন্সী, নজরম্নল ইসলাম বাবু, বিএনপির সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি, জয়নাল আবেদীন, জেড আই এম মোসত্মফা আলী ও জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম।
সরকারী দলের হুইপ শেখ আবদুল ওহাব বলেন, মোশতাক ইনডেমনিটি জারি করে আর জেনারেল জিয়া সংসদে ইনডেমনিটি বিল পাস করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রম্নদ্ধ করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে নিজামী-মুজাহিদরা ফেঁসে যাবেন। তাই তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জনগণ তাঁদের কোন ষড়যন্ত্রই বাসত্মবায়ন হতে দেবে না। বিএনপির সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণকে 'আওয়ামী লীগের লিফলেট' মনত্মব্য করে বলেন, বিএনপির বিরোধিতা করাই আওয়ামী লীগের ধর্ম। ৰমতায় এসেই আওয়ামী লীগ টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, জিয়ার মাজার নিয়ে ষড়যন্ত্র, নাম পরিবর্তন, বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করতেই ব্যসত্ম রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার ফসল উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার খেসারত এখনও দিতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। তাঁর দু'সনত্মানকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে বাধ্য করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.