সংসদে ১০ মিনিটের ওয়াকআউট বিএনপির

 অধিবেশনে যোগদানের ২৩ মিনিটের মাথায় আবারও সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করেছে বিরোধী দল। যদিও ১০ মিনিট পরই তারা ফিরে আসেন অধিবেশনে। এ নিয়ে গত তিন দিনই সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করলেন তারা।
তবে গত দু'দিনের মতো ফ্রি-স্টাইলে একে অপরকে ঘায়েল করে অধিবেশন উত্তপ্ত করার সুযোগ দেননি স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।
তবে কোন ইসু্যতে বিরোধী দল হঠাৎ করে ওয়াক আউট করল তা স্পষ্ট না হলেও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনাকালে বিএনপির পৰ থেকে বলা হয়- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ফোর না দেয়া এবং জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করার কারণে তাঁরা প্রতীকী ওয়াক আউট করেছেন।
বিকাল সোয়া তিনটায় সংসদ অধিবেশন শুরম্ন হয়। শুরম্নতেই স্পীকার তাঁর কঠোর অবস্থানের কথা জানান। বলেন, প্রতিদিন একই চিত্র পুনরাবৃত্তি ভাল নয়। সরকার ও বিরোধী দলের একজন করে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেব। এর বাইরে কাউকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। এ সময় স্পীকার সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একে অপরকে ঘায়েল করতে অসংসদীয় ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেবেন না। অযথা সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। গত দু'দিনে যারা কটূক্তি ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন এর সবই এক্সপাঞ্জ করা হবে।
পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সরকারী দলের চীফ হুইপ উপাধ্যৰ আবদুস শহীদ বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্রই বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ পয়েন্ট অব অডর্ারে ফোর চাইলে তা নাকচ করে দিয়ে স্পীকার বলেন, আমি আগেও বলেছি, আজ সরকারী ও বিরোধী দল থেকে একজন করে বক্তব্য রাখার সুযোগ পাবেন। আমি শুরম্নতেই এ কথা বলেছি। এটা স্পীকারের রম্নলিং। আপনি আগামীকাল (মঙ্গলবার) বক্তব্য রাখার সুযোগ পাবেন বা রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় নাম দিলে আমি ফোর দেব।
এ অবস্থায় বিরোধী দল ওয়াক আউটের সিদ্ধানত্ম নিলে স্পীকার বলেন, আপনাদের ইচ্ছে চলে যেতে পারেন। একই দৃশ্য প্রতিদিন ঘটা উচিত নয়। স্পীকার পরবর্তী কার্যসূচী হিসাবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য রাখার জন্য বিএনপির সংরৰিত নারী আসনের সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফীকে ফোর দিলেও বিএনপি ওয়াকআউট করে। মাত্র ১০ মিনিট পর বিরোধী দল সংসদে ফিরে এসে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের বিরম্নদ্ধে বিষোদগার করেন।
বিরোধী দলের পৰে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে 'খুনী' বললে সংসদে উত্তেজনা দেখা দেয়। সরকারী দলের সদস্যরা একযোগে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তীব্র হৈ-চৈ, টেবিল চাপড়িয়ে ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানালে স্পীকার বলেন, কেউ যদি সংসদে কোন অসংসদীয় বা অসাংবিধানিক সব বক্তব্য এক্সপাঞ্জ হয়ে যাবে। স্পীকার এ সময় কঠোরভাবেই সংসদ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন।
বিএনপির শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে চায় বিরোধী দল। কিন্তু সংসদে জাতীয় নেতাদের চরিত্রহনন করা হচ্ছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে 'খুনী' বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, '৭১ থেকে '৭৫ সাল পর্যনত্ম প্রায় ৪০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। তাই জিয়াকে খুনী বলা হলে তাহলে বলতে হবে শেখ মুজিবও খুনী ছিলেন। এ সময় সরকারী দলের তীব্র প্রতিবাদের মুখে এ্যানি আরও বলেন, জাতীয় নেতাদের নিয়ে একজন কটূক্তি করলে অন্যজনকেও কটূক্তি করার বিষয় চলে আসে। সংসদে যখন শিৰাঙ্গনের সন্ত্রাস, ছাত্র হত্যা, ভর্তি বাণিজ্য চলছে, বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কাযর্ালয়ে বোমা পাওয়া গেছে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করার কথা। সেখানে জিয়াউর রহমানের মতো জাতীয় নেতার লাশ নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তনয় ও এক উপদেষ্টার বিরম্নদ্ধে ৫ মিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়েও সংসদে আলোচনা করতে চাই।
জবাব দিতে গিয়ে সরকারী দলের চীফ হুইপ উপাধ্যৰ আবদুস শহীদ বলেন, সংসদে না এলে সরকারের সমালোচনা করা যায় না। বিনা ইসু্যতে বিরোধী দল কটূক্তিমূলক মিথ্যা ও বিভ্রানত্মিকর বক্তব্য দিয়ে সংসদকে উত্তপ্ত করতে চায়। বিরোধী দল সুশাসন, সংসদ ও গণতন্ত্র কী তা জানলে এসব বক্তব্য রাখতেন না। তিনি সংসদ সদস্য এ্যানির সকল অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুর্নীতি-সন্ত্রাস, হত্যাযজ্ঞের কথা জনগণ ভুলে যায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলা করে অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকা-, গাজীপুর সংসদ সদস্য আহসানউলস্নাহ মাস্টারকে হত্যা, সারাদেশে একযোগে বোমা হামলার সময় কে ৰমতায় ছিল? সংসদে তখন এসব নিয়ে কী তৎকালীন সরকারী দল একটি কথাও বলেছেন? কারণ বিএনপি-জামায়াত জোটই এসব হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী ক্যান্টনমেন্টের সংরৰিত এলাকায় ৮৮ একর জায়গার ওপর বিশাল সরকারী বাড়িতে বাস করেন। অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন, তখন আহতদের হাসপাতালে দেখতে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা ক্যান্টনমেন্টের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় বিশাল এলাকা নিয়ে বসবাস করার ঘটনা পৃথিবীতে নজির নেই। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে তাঁর আগেই ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে বাইরে আসা উচিত ছিল। সংসদে যেভাবে বিরোধী দলের সদস্যরা ফাইল ছুড়ে মারছে, অসংযত আচরণ করছে_ দেশের মানুষ তা দেখছে। জনগণই এর মূল্যায়ন করবে।

No comments

Powered by Blogger.