পুলিশসহ আহত ১২, গ্রেপ্তার ১৭- বাঁশখালীতে শিবিরের গুলি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে টানানো ব্যানার নামানোর ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল এলাকা।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১২ জন আহত হন। এঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন চারজন। পুলিশ চার শতাধিক গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের ৩৭টি শেল ছুড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশের ওপর ১৫-১৬টি গুলি ছোড়ে। গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ১৭ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে যে ব্যানার নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত, সেই ব্যানারটি নামানো হয়নি।
পুলিশ সূত্র জানায়, তাদের ওপর হামলার ঘটনার হুকুমদাতা হিসেবে বাঁশখালী জামায়াতের আমির জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় উপজেলার বৈলতলী এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। গতকালের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাত পুলিশ সদস্য রয়েছেন। গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন: উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান (৫২), কনস্টেবল কাসেম (৫০), আহাবুল (৪৮) ও কাদের (২২)। বাকি তিন পুলিশ সদস্য স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন। আহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন: সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নুরুল হুদা (৩০), আবদুল খালেক, বাসের লাইনম্যান আবুল কাশেম ও মো. ইব্রাহিম (২৬), আবদুল মোমেন (১৮)। এঁদের মধ্যে নুরুল হুদা, আবদুল খালেক, আবদুল মোমেন ও আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ হন।
আহত চার পুলিশ সদস্যসহ সাতজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহত নুরুল হুদার অস্ত্রোপচারও করা হয়। তাঁর অবস্থা গুরুতর। আবদুল খালেক ও আবুল কাশেম চকরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. ইলতুৎ মিশ জানান, জামায়াতের শীর্ষনেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে চাম্বলের নতুন বাজারে ব্যানার টানানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ব্যানার নামাতে গেলে পুলিশের ওপর জামায়াতের লোকজন হামলা চালান। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তিনি আরও জানান, সংঘর্ষের সময় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ১৫-১৬টি গুলি ছোড়েন। সংঘর্ষের পর এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে আহত কয়েকজনকে পুলিশ লুকিয়ে রেখেছে। নিহত হয়েছে আট-দশজন ইত্যাদি। এতে এলাকায় আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে পড়ে। পরে সন্ধ্যা সাতটায় পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে ছয় কিলোমিটার দূরের বাঁশখালী থানায় চলে যান।
ব্যানারে যা ছিল: প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, চাম্বল ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় গত রোববার একটি ডিজিটাল ব্যানার লাগানো হয়। এতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার জামায়াত নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী ও কাদের মোল্লার ছবি শোভা পাচ্ছিল। ওই ব্যানারে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আরও একটি ছবি আছে। ব্যানারে জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবির কথা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ব্যানারে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে নিজামীর করমর্দনরত আরও দুটি ছবিসহ মোট ১৪টি বিভিন্ন ধরনের ছবি আছে।
বাঁশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম বাদী হয়ে গতকাল রাতে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তির নামে মামলা করেন।
শহরে মিছিল: চট্টগ্রাম নগরের বিআরটিসি এলাকায় গতকাল সোমবার সকালে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা আকস্মিক মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারেন।
বাঁশখালীতে আজ হরতাল: গতকালের এ ঘটনার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী আজ মঙ্গলবার বাঁশখালী উপজেলায় পূর্ণদিবস হরতাল ডেকেছে।

No comments

Powered by Blogger.