মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড ॥ কর্তৃত্বে বাংলাদেশ- * জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের পরিবর্তে শর্ত সাপেৰে কর্তৃত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ- * উন্নয়ন সহযোগীরা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বলেছে- * পিপিপি বাস্তবায়নে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত

 অধিক সাহায্য প্রদানের আশ্বাসের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক শেষ হয়েছে। দীর্ঘ বাহাসের পর দাতারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গঠিত মাল্টিডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের কর্তৃত্ব শর্তসাপে েবাংলাদেশের হাতে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে।
তবে বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে কারিগরি সহায়তা দেবে। বৈঠকে প্রকল্পের পরিবর্তে খাতভিত্তিক সাহায্য প্রদানের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এর ফলে উন্নয়ন সহযোগীরা বর্তমান প্রকল্পের পরিবর্তে শিা, স্বাস্থ্যের মতো পুরো খাতের উন্নয়নের জন্য সাহায্য প্রদান করবে। বৈঠকে তাদের দেয়া বৈদেশিক সাহায্য কার্যকর করার জন্য সরকার ও দাতাদের সমন্বয়ে জয়েন্ট কোঅপারেশন স্ট্র্যাটেজি (জেসিএস) প্রণয়নের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এ জেসিএসের গাইডলাইনের ভিত্তিতেই দাতাদের অর্থায়নে প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে।
দু'দিনের বৈঠকে দাতারা দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা, রাজস্ব আদায় ও প্রকল্প বাসত্মবায়নের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দুর্নীতিকে উন্নয়নের জন্য প্রধান বাধা হিসেবে উলেস্নখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অধিক শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতির তাগিদ দিয়েছে। এ সময় তারা মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তথা সংসদীয় কমিটিগুলোকে আরও কার্যকর এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে বলেছে। মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার তাগিদ দিয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে উন্নয়ন সহযোগী ও সরকার একযোগে কাজ করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। গ্যাসের ওপর চাপ কমাতে তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শ দিয়েছে। সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য খাদ্যনীতি বাসত্মবায়নের।
বৈঠকে দাতারা বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা সরকারের জন্য জরম্নরী ইসু্য। তারা জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কাইমেট এ্যাকশন পস্ন্যান প্রণয়নের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এ পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের জন্য সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীরা একযোগে কাজ করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। তবে মাল্টিডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের কর্তৃত্ব নিয়ে সরকার ও দাতাদের মধ্যে দীর্ঘ দরকষাকষি হয়েছে। দাতারা চাইছে এ তহবিলের কর্তৃত্ব বিশ্বব্যাংকের কাছে থাকুক। কিন্তু সরকার এর কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে চায়। এ নিয়ে দীর্ঘ বাহাসের পর দাতারা এ তহবিলের কর্তৃত্ব শর্তসাপে েসরকারের হাতে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে। তবে অর্থ ব্যবহারের েেত্র বাংলাদেশের সমতা ও দতা দুর্বল হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে সরকারকে কারিগরি সহায়তা দেবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি জীবনত্ম বিষয়। তাই এর প্রভাব মোকাবেলায় দাতাদের দেয়া অর্থ নিয়ে গঠিত মাল্টিডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে থাকবে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই একটি চুক্তি স্বারিত হবে।
উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি দু'দিনের কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এ.কে. খন্দকার, অর্থ উপদেষ্টা একেএম মশিউর রহমান, ডিএফআইডির কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস অস্টিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
জেসিএস প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দাতাদের প্রদত্ত সাহায্যের কার্যকর ব্যবহারের জন্য জয়েন্ট কোঅপারেশন স্ট্র্যাটেজি করার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এ কৌশলের ভিত্তিকে একটি এ্যাকশন পস্ন্যান গ্রহণ করা হবে। এটা অনুসরণ করে প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে। এর কাজ হবে বিভিন্ন দাতার দেয়া সাহায্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
তিনি বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের পরিবর্তে খাতভিত্তিক কার্যক্রমের সংখ্যা বাড়বে। বর্তমান দাতারা প্রকল্পের ভিত্তিতে সাহায্য দিয়ে থাকে। এখন থেকে প্রকল্পের পরিবর্তে তারা খাতভিত্তিক সাহায্য দেবে। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আমাদের ঐকমত্য হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দাতারা আমাদের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম দুর্বল হিসেবে উলেস্নখ করেছে। আমিও মনে করি, আমাদের অভ্যনত্মরীণ সম্পদ সংগ্রহ খুবই দুর্বল। এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের ব্যয় বর্তমানে ১৬ শতাংশ। এটাকে আমাদের মেয়াদ শেষে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। এজন্য আমাদের অভ্যনত্মরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে। মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তথা সংসদীয় কমিটিগুলোকে কার্যকর এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। দাতারা এসব প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী ও কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা আনতে বলেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিকে তার কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকতে এবং জবাবদিহি করতে হবে। তারা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার তাগিদ দিয়েছে। সরকার তাদের এ প্রসত্মাব সমর্থন করেছে।
বৈঠকে দাতারা উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও দ্রম্নততর করতে বলেছে। এজন্য তারা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে। তা না হলে সরকারের সেবাসমূহ তৃণমূল মানুষের কাছে পেঁৗছে দেয়া যাবে না। এজন্য প্রশাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রসত্মাব করেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রশাসনিক সেবা জনগণের কাছে পেঁৗছে দিতে সিভিল সার্ভিস এ্যাক্ট করতে যাচ্ছি। দাতারা এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। আমরা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) বিষয়টি দাতাদের অবহিত করেছি। যদিও এর অগ্রগতি ভাল নয়। একে অগ্রসর করতে উন্নয়ন সহযোগী ও সরকার একযোগে কাজ করবে। আমরা ২০১৩ সাল নাগাদ সাত হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এজন্য ৯৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এর বড় অংশ আসবে বেসরকারী খাত থেকে। সরকার এবং দাতারাও এ খাতে অর্থায়ন করবে। এ বিষয়টি দাতারা অনুমোদন করেছে।
বৈঠকে দাতারা গ্যাসের ওপর চাপ কমাতে জ্বালানি বহুমুখীকরণ করতে বলেছে। কয়লানীতি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিনীতি প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য তারা একটি সংস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে। এ ব্যাপারে দাতারা সহায়তা দেবে। একই সঙ্গে দাতারা জ্বালানি খাতের দতা বাড়াতে গ্যাস ও বিদু্যতের দাম বাড়াতে বলেছে। যাতে গ্যাসে ও বিদু্যতের দাম আনত্মর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। সরকার দাতাদের আশ্বসত্ম করেছে যে, গ্রাহকদের ক্রয়মতা বিবেচনা করে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ এনার্জি রিফর্ম কমিশনের মতা বৃদ্ধি করা হবে।
জনাব মুহিত বলেন, দাতারা বহুপাকি পরিবহন নীতি প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে। তারা রাজপথ, রেলপথ, পানিপথ ও আকাশপথ সমহারে ব্যবহার করতে বলেছে। রাসত্মা মেরামতের ব্যাপারে আমরা একটি তহবিল গঠনের প্রসত্মাব করেছি। তারা সেটি অনুমোদন করেছে। এ তহবিলে সরকারী-বেসরকারী ও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণ থাকবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, উন্নয়ন ফোরামের দুই দিনের বৈঠককে সফল হিসেবে উলেস্নখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুই দিনে ছয়টি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের কর্মকা-ের চুলচেরা বিশেস্নষণ করেছেন। আমরা দাতাদের কাছে দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল উপস্থাপন করেছি। এটা দাতারা সানন্দে গ্রহণ করেছে। তারা অনেক সময় নিয়ে এর ওপর আলোচনা করেছে। আমরা তাদের কাছে দ্রম্নত ও অধিক অর্থ সাহায্য চেয়েছি। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ডিএফআইডি, জাপানসহ অনেক দেশ বৈঠকেই আরও বেশি সাহায্য প্রদানের ইঙ্গিত দিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন থেকে নিয়মিতভাবে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরের জুন মাসে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ানত্ম হবে। ওই পরিকল্পনা চূড়ানত্ম হওয়ার পর আগামী বছরের উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক হবে। দাতাদের স্থানীয় পরামর্শক গ্রম্নপের সঙ্গে আরও ঘন ঘন বৈঠক হবে। বছরে একাধিকবার তাদের সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে আলোচনা করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ.কে. খন্দকার বলেন, দাতারা আমাদের দুর্নীতির কথা বলেছে। তারা দুর্নীতি পরিস্থিতি আরও উন্নতি করতে বলেছে। বলেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে। তারা শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করতে বলেছে।
ডিএফআইডির কাণ্ট্রি ডিরেক্টর এবং স্থানীয় কনসালটেটিভ গ্রম্নপের কো-চেয়ার ক্রিস অস্টিন বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল গ্রহণ করেছে। তারা সম্পদকে আরও কার্যকর করতে জয়েন্ট কোঅপারেশন স্ট্র্যাটেজি করার প্রসত্মাব করেছে। মাল্টিডোনার ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে বিভ্রানত্মির সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি এ বৈঠকের মাধ্যমে দূর হয়েছে।

সড়ক যোগাযোগে
সহায়তা কামনা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম বাংলাদেশের সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সবচেয়ে সহজশর্তে আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর সহায়তায় শুরম্ন হয়েছে পদ্মাসেতুর ফিজিবিলিটির কাজ। এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কিয়ারেন্স পাওয়ার পর যত শীঘ্রই সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। এছাড়া সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে বলে পরিবহন ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে দাতাদের কাছে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদৰেপ তুলে ধরা হয়। সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা তাকে সমর্থন জানান।
পদ্ম্নাসেতু বাসত্মবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থেরও সংস্থান হয়েছে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে ১২০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ডলার, জাপান থেকে ৩০ কোটি ডলার, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ডলার এবং আবুধাবী থেকে ৩ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ সরকার বহন করবে।
প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ঢাকায় একটি মেট্রোরেল হবে। এতে ব্যয় হবে ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার। এ ব্যাপারে জাপান ফিজিবিলিটি করছে। তাই সরকার জাপানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম অভিমুখে ছয় লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেস ওয়ে হবে। ইতোমধ্যে এর টেন্ডার হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস করা যায় কিনা তা নিয়ে পরীৰা-নিরীৰা চলছে। উড়াল সেতুর মতো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নির্মিত হবে ২২৫ কিলোমিটারের এই এক্সপ্রেস।
এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য দাতাদের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ৰমতা গ্রহণের আগে সাত বছর সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। অনেক ৰেত্রে বরং রেলের রাসত্মা তুলে ফেলা হয়েছে। তাই আমাদের অনেক সংস্কার করতে হবে। এ ব্যাপারে ক্যাবিনেটের অনুমোদন পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর রেললাইন ছাড়াও রেলব্রিজ করার পরিকল্পনা হচ্ছে। নতুন নতুন আরও রেলব্রিজ হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আঞ্চলিক হাইওয়ে করার জন্য পদৰেপ নিয়েছে সরকার। সড়ক ও যোগাযোগ খাতে হাতে নেয়া প্রকল্পগুলোর বাসত্মবায়নের জন্য সরকার যেসব প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে তাতে দাতারা কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে।

নদীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের দুরবস্থা দূর করা যাবে না
উন্নয়ন ফোরামের এ বৈঠকে এদিন পানিসম্পদের উন্নয়ন নিয়েও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পরে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে পানিসম্পদ নিয়েও কথা বলেছি। বাংলাদেশে ৩১০টি নদী প্রবাহিত। এর মধ্যে কয়েকটি বড় নদী হুমকির মুখে রয়েছে। এসব নদীর নাব্য বাড়ানো দরকার। নদীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের দুরবস্থা দূর করা যাবে না।
নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে গড়াই নদীর ৩ কিলোমিটার নাব্য বাড়ানোর কাজ চলছে। যমুনা নদীতেও কাজ শুরম্ন হবে। ভারত ও কাতার থেকে ড্রেজার আনা হচ্ছে। নদীগুলোর নাব্য থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনের ৰতিকর প্রভাব এড়ানো যাবে। অনেক প্রশসত্ম জায়গাও বের হয়ে আসবে। দেশে যে হারে বাড়ছে মানুষ সে হারে জায়গা কম। তাই নদীগুলোর নাব্য বাড়লে কিছু বাড়তি জায়গা পাওয়া যাবে।

ঋণ নয়, অর্থ আসবে
সম্পূর্ণ অনুদান হিসেবে
উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপরও সরকার দাতাদের সঙ্গে গুরম্নত্বপূর্ণ আলোচনা করে। এ সম্পর্কে বর্তমান সরকার যেসব পদৰেপ গ্রহণ করেছে তারও প্রশংসা করেছে দাতারা। বৈঠক শেষে পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে হুমকির মুখে আছে বাংলাদেশ। এ পরিবর্তন ঠেকাতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা তাকে প্রশংসা করেছে। বিদেশী পরামর্শ ছাড়া সরকার ইতোমধ্যে মাল্টিডোনার ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দাতারা।
বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ২ দশমিক ৫ ভাগ হচ্ছে বাংলাদেশে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এদেশের মানুষ মারাত্মক ৰতির মুখে পড়বে। তাই দাতারা আর্থিক সহায়তা দিতে চেয়েছে। এসব সাহায্য আসবে ঋণ হিসেবে নয়। এ অর্থ আসবে সম্পূর্ণ অনুদান হিসেবে। প্রথমদিকে মাল্টিডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের দায়িত্ব নিয়ে দাতাদের সঙ্গে কিছু ফারাক ছিল। এ দূরত্ব পূরণ করা হয়েছে। এখন এ তহবিলের দায়িত্ব সরকারের হাতেই থাকবে। অন্যদিকে সরকার এ তহবিলে দাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণও করতে আগ্রহী।

No comments

Powered by Blogger.