কৃষিকার্ড-কৃষকের দিন বদলের নবদিগন্ত- দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

 প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারী সহায়তার সুযোগ নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশব্যাপী সেচ কাজে ডিজেল ক্রয়ে নগদ অর্থ সহায়তা ও কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বালিকান্দি গ্রামের মাঠে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই মতায় এসেছে তখনই কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে। গতবার দায়িত্ব পালনের সময় কৃষকদের মঙ্গলের জন্য আমরা সার, বীজ, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণে ভতর্ুকি চালু করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পদপে নিয়েছিলাম। এর ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট মতায় এসে আমাদের সব অর্জনকে একের পর এক ধ্বংস করে দেয়। দেশে ১ কোটি টন খাদ্য শস্যের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই আগের ধারাবাহিকতায় আমরা এবারও কৃষকদের মঙ্গলের জন্য কৃষিবান্ধব ও যুগানত্মকারী পদপে নিয়েছি। কৃষকরা যাতে কৃষি উপকরণসহ সকল সরকারী সহায়তা সহজভাবে পেতে পারেন সেজন্য আমরা কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রবর্তন করেছি। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশের ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষককে কৃষিকার্ড দেয়া হবে। ডিজেল ব্যবহারকারী বোরো চাষীদের কৃষি কার্ডের ভিত্তিতে ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। এ জন্য শুধুমাত্র ১০ টাকা দিয়ে কৃষকদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দেয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই কৃষিকার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য সম্ভাবনার এক নতুন দিগনত্ম উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। ুদ্র, প্রানত্মিক ও মাঝারি কৃষকদের ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন পরিচালনা, সঞ্চয় ও আর্থিক কর্মকা- বা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুগানত্মকারী পরিবর্তন আনবে। খাদ্যের জন্য দেশকে যেন আর অন্যের কাছে হাত পাততে না হয় সেজন্য কৃষকদের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন _ স্থানীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশী, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের মহা পরিচালক মোঃ সাঈদ আলী, কৃষক আব্দুল হান্নান প্রমুখ। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন_ আশরাফ আলী খান খসরম্ন এমপি, রেবেকা মমিন এমপি, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এমপি, মোসত্মাক আহমেদ রম্নহী এমপি, অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি, প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনকি সম্পাদক আহমদ হোসেন, বাহাউদ্দিন নাছিম, অসীম কুমার উকিল, শফি আহমেদ ও মতিয়র রহমান খান প্রমুখ। উদ্বোধনী বক্তৃতার পর প্রধানমন্ত্রী আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলার ২০ জন কৃষক-কিষানির হাতে কৃষিকার্ড তুলে দেন। হাজার হাজার কৃষক-কিষানি ও সাধারণ জনতার উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বিশাল এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা সোয়া ১১ টায় প্রধানমন্ত্রী মঞ্চের অদূরে একটি হেলিকপ্টার থেকে নেমে এলে একদল উপজাতীয় তরম্নণী নৃত্য পরিবেশন করে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়।
অনুষ্ঠানে সরকারের কৃষিবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচীর বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তির আগেই সারের দাম দু'দফা কমানো হয়েছে। এখন আর সারের জন্য কৃষকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। এছাড়া সেচ কাজে সহায়তার জন্য ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২ টাকা করে কমানো হয়েছে। এ বছর সেচ কাজে ডিজেল খরচ বাবদ নগদ সহায়তার জন্য ৭ শ' ৫০ কোটি টাকা, এবং বর্গাচাষীদের ঋণের আওতায় এনে তাদের মাঝেও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য ৫শ' কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কৃষি ঋণের আওতা বৃদ্ধি ও ঋণ প্রাপ্তি সহজতর করা হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬শ' কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব পদেেপর ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে ৩ কোটি ২১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে।
বিদু্যত সঙ্কটের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৯৬ এ মতায় আসার পর আমরা বিদু্যত উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলাম। এর পর বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে একটুও উৎপাদন বাড়ায়নি। ফলে এবারও আওয়ামী লীগ মতায় এসে বিদু্যত ঘাটতি মোকাবেলার কাজ করতে হচ্ছে। শুধু বিদু্যত নয়, গ্যাস সঙ্কটের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিদু্যত উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু পদপে নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল গ্রামে গ্রামে বিদু্যত পেঁৗছে দেয়া হবে। যেখানে বিদু্যত নেই সেখানে ডিজেল ব্যবহারের সুযোগও নিশ্চিত করা হবে।
গত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা মতায় আসে নিজেদের আখের গোছাতে, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করতে। সেবা করতে নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান লংঘন করে, অবৈধভাবে মতা দখল করে বিভিন্ন সরকার দেশের মানুষ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষকে বঞ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ কৃষক-শ্রমিক মেহনতি সকল মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। সকলের জীবনযাত্রা যাতে সুন্দর হয়- সে ল্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে আধুনিক বিজ্ঞান শিায় শিতি হতে পারে সেজন্য আমরা শিা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছি। কৃষকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী কৃষি বিভাগ ও ব্যাংকের সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে গিয়ে কেউ কোন রকম নয় ছয় করলে তা বরদাশত করা হবে না।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশী প্রধানমন্ত্রীর কাছে আটপাড়া-কেন্দুয়া নির্বাচনী এলাকাসহ নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী ওই এলাকার মগড়া, সুতি সাইডুলি এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদী খননের প্রতিশ্রম্নতি দেন। এছাড়াও তিনি এলাকার বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, কেন্দুয়া-নান্দাইল রাসত্মা উন্নয়ন, প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদর এবং উপজেলা সদর থেকে জেলা সদর পর্যনত্ম রাসত্মা নির্মাণ ও সংস্কারের প্রতিশ্রম্নতি ব্যক্ত করেন। বক্তব্যের আগে ও পরে প্রধানমন্ত্রী হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাত নেড়ে উপস্থিত জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

No comments

Powered by Blogger.