বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হত্যাকাণ্ড-বন্ধ হোক এই নিষ্ঠুরতা

আমরা কি সভ্যতার বিপরীতে হাঁটছি? তা না হলে প্রকাশ্যে একের পর এক এমন বর্বর ঘটনা ঘটে কিভাবে? গাজীপুরে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দুই নারী ও এক যুবককে পিটিয়ে, পুড়িয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
কিছু লোক পৈশাচিক মনোবৃত্তি নিয়ে এদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে আর শত শত লোক অদূরে দাঁড়িয়ে এই নিষ্ঠুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। আনন্দে হাততালি দিয়েছে কেউ কেউ। ভাবতেও লজ্জা হয়, আমরা এই সমাজেরই অংশ। এসব ঘটনার সময় আশপাশে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষ থাকলেও হামলাকারীদের উন্মত্ততার সামনে তাঁরা এগিয়ে যাওয়ার কিংবা প্রতিরোধ করার সাহস পাননি। তাঁদের কেউ কেউ মোবাইল ফোনে এই নৃশংস ঘটনার দৃশ্য ধারণ করে পত্রিকা অফিসগুলোতে পাঠিয়েছেন। আবার দু-একজন প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহতও হয়েছেন। কিন্তু যে বিষয়টিকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা উচিত, তা হলো পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঘটনাস্থলের অদূরে পুলিশবাহিনীর কিছু সদস্য উপস্থিত থাকলেও তাঁরা ছিলেন একেবারেই নির্বিকার। আক্রমণকারীদের বাধা দেওয়ার কিংবা পৈশাচিকতার শিকার হওয়া নারী-পুরুষদের জীবন রক্ষার জন্য তাঁরা কোনো চেষ্টাই করেননি। দায়িত্ব পালনের অদ্ভুত দৃষ্টান্ত বটে!
প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায়। মর্জিনা বেগম নামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক নারীকে পিটিয়ে মারা হয়। জানা যায়, সেখানে নাকি কিছুদিন ধরেই ব্যাপকভাবে 'ছেলেধরার' গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এ ধরনের গুজব ছড়িয়েছে, সেটা জানা না গেলেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি প্রথম ঘটনার পরই সতর্ক হতো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো সোমবারের দুটি ঘটনা এড়ানো যেত। এখনো যদি প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে অচিরেই এ ধরনের আরো অনেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্রয়োজনে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং স্বেচ্ছাসেবী ও অন্যান্য সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ-জাতীয় ঘটনা প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি একজন মানুষকে জবাই করা, গলায় বাঁশ দিয়ে চেপে ধরে হত্যা করা কিংবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার মতো অমানবিক অপরাধ করতে যারা কুণ্ঠিত হয় না, সেই জঘন্য অপরাধীদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে কারা কী উদ্দেশ্যে সমাজের স্থিতি নষ্ট করার জন্য এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, তাও খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের অপচেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে।
সমাজে নানা ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে। কিন্তু সেসব অতিক্রম করে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা এ ধরনের অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির এবং অমানবিক ঘটনার দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আমরা চাই, এ ধরনের আরেকটি হত্যাকাণ্ডও যাতে না ঘটে, সে জন্য অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.