বিশেষ সাক্ষাৎকার : এম হাফিজউদ্দিন খান-আলোচনার মাধ্যমেই সংকট উত্তরণের পথ বের করতে হবে

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মহাজোট সরকারের চার বছরের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন  
কালের কণ্ঠ : সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কি গণতন্ত্র-সহায়ক বলে আপনি মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বিরাজ করছে। পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা-হানাহানি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ ও ফায়দা প্রদানের অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই সমাজজীবনে এর কুপ্রভাব পড়ছে। বাড়ছে অস্থিরতা।
কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের দিনবদলের সনদ তথা নির্বাচনী ইশতেহারে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ছিল। তা কি পূরণ হয়েছে?
এম হাফিজউদ্দিন খান : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন কতগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, ন্যায়পাল এবং নাগরিক সংগঠন। যেমন- জাতীয় সংসদ, আদালত, স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, রাজনৈতিক দল ও সংঘবদ্ধ নাগরিক সমাজ ইত্যাদি। এগুলোকে বলা হয় গণতন্ত্রের পিলার। এই পিলারগুলোর অবস্থা মূল্যায়ন করলেই বোঝা যাবে, মহাজোট সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সফল হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : দেশে নির্বাচিত সংসদ আছে। কিন্তু তা এখনো কার্যকর নয়। কেন এমন হচ্ছে?
এম হাফিজউদ্দিন খান : একানব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে তিন জোটের রূপরেখা প্রণীত হয়েছিল। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন ও সংসদকে কার্যকর করার অঙ্গীকার করেছিল রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৯১ সালের পরবর্তী সরকারগুলো সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া শাসন কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরিবর্তন আনেনি। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সুপরিবর্তন আনার পরিবর্তে প্রতিটি কাঠামোকে দুর্বল করার জন্য চরম অগণতান্ত্রিক আচরণ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে হলে সংসদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রয়োজন। বিগত সময়ে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং তাদের সংসদে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা, বিরোধী দলের একগুঁয়েমি এবং অযৌক্তিক মনোভাব কিংবা অনীহা দেখে সংসদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রদ্ধাবোধ কিংবা আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে সংসদ এবং গণতন্ত্রের সব কাঠামোই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
কালের কণ্ঠ : জাতীয় সংসদকে কার্যকর করার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
এম হাফিজউদ্দিন খান : নারী সদস্যসংখ্যা বাড়াতে হবে। সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন তাদের জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে। তাদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের বিধান করতে হবে। আর্থিকভাবে লাভজনক, দলীয়করণের সুযোগ আছে- এমন পদ থেকে সংসদ সদস্যদের বিরত রাখতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি, প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ কিংবা এ ধরনের বিতর্কিত সুবিধা প্রদান বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে প্রত্যেক কর্ম-অধিবেশনের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ কর্মদিবসে উপস্থিত থাকতে হবে। স্পিকারের অনুমতি ছাড়া একনাগাড়ে ৩০ কর্মদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সংসদ সদস্যপদ বাতিলের বিধান করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দীর্ঘসময় ধরে সংসদে অনুপস্থিতি বন্ধ করতে হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে। সংসদের কোরাম নিশ্চিত করার প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। সংসদ সদস্যদের গুণগত মানের উন্নতি হয় এমন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি কি পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনকে তার নিজস্ব পথে চলার সুযোগ দিতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলীয় কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থ প্রতিষ্ঠার মানসিকতা থাকলে কখনো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকলে ঢালাওভাবে মামলা প্রত্যাহার করা হতো না। আজকে রাজনৈতিক বিবেচনাকে গুরুত্ব দিয়ে হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। উপরন্তু দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্য, দখলদারিত্ব এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে, যা দেখে সরকারের অর্জনগুলোকে ফিকে মনে হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসাটা গণতন্ত্রের একটি মাধ্যম মাত্র। কিন্তু গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে ক্ষমতা লাভের এই কৌশলকে ইজারাতন্ত্র মনে করলে সুশাসন কোনোভাবেই আসতে পারে না।
কালের কণ্ঠ : প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারের বড় একটি অংশজুড়ে থাকে দুর্নীতি প্রসঙ্গ। ক্ষমতায় আসার পর তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উচ্চারিত হয় জোরালোভাবে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
এম হাফিজউদ্দিন খান : শেয়ারবাজারে যে কেলেঙ্কারি হলো, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শেয়ারবাজারের মতো একটি একটি করে বড় ঘটনার জন্ম হয়ে চলেছে দেশে। আজ প্রশাসনকে গ্রাস করেছে দুর্নীতি। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা আজকে প্রশ্নের মুখে। সাধারণ মানুষের চোখের সামনেই ঘটছে সব। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি দেশকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছে। পদ্মা সেতুর বিষয়টি তো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের নগ্ন প্রকাশ আর কিভাবে হতে পারে! অন্যদিকে দুর্নীতি দমনে সরকারের বলিষ্ঠ কোনো উদ্যোগও লক্ষ করা যায় না। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের প্রতিশ্রুতি ছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটা হলে দুর্নীতি দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করত।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে কলুষিত হওয়ার পেছনে কী কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : রাজনীতি ক্ষমতাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হওয়া দোষের কিছু নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনি কোন পথ বেছে নিচ্ছেন। আবারও প্রশ্ন করা যায়, রাজনীতি কি রাজনীতিবিদদের হাতে আছে সর্বাংশে? রাজনীতিবিদরা তো রাজনীতিতে এখন সংখ্যালঘু। অনেক অবাঞ্ছিত ব্যক্তির দখলে চলে গেছে এখনকার রাজনীতি। জাতীয় সংসদ এখন ব্যবসায়ীদের দাপটের মুখে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আস্তে আস্তে হ্রাস পেয়ে চলেছে। জনগণের অনুপস্থিতির কারণে রাজনীতি লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে বিভিন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণী। শ্রেণীস্বার্থ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দলগুলো হয়ে পড়ছে দুর্নীতিনির্ভর।
কালের কণ্ঠ : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কি সেই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম?
এম হাফিজউদ্দিন খান : নির্বাচন কমিশনকেই তার স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে ভোটারদের যে সংখ্যা দেখা যায়, তাকে প্রশ্নাতীত বলার সুযোগ নেই। যেমন- গত চার বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। কিন্তু সেখানে বার্ষিক ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ ভোটার বৃদ্ধি পায় কী করে? বাড়তি এই ভোটাররা কোথা থেকে এলো? ভোটারদের ঠিকানা পরিবর্তনের হারেও অসংগতি রয়েছে।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জন করতে হলে কি ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৃহৎ ভূমিকা পালন করে থাকে। তারা ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংসদীয় উপনির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সম্পন্ন করেছে তারা। সেখানে কিছুটা কাজ চোখে পড়েছে। যদিও সংসদীয় নির্বাচন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক নয়। কিংবা জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এর পার্থক্যও রয়েছে। জনসম্পৃক্ত হওয়ার জন্য এই মুহূর্তে খসড়া ভোটার তালিকায় যে অসংগতিগুলো আছে, তা নিরসন করতে হবে সর্বাগ্রে। সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সুষ্ঠুভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে কমিশনকে।
কালের কণ্ঠ : সব সময়ই বলা হয়, নির্বাচনকে কালো টাকার কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। এর জন্য কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : আমাদের গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হওয়ার যে কয়টি কারণ আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার। নির্বাচন কমিশন এই প্রবণতা হ্রাস করতে বড় একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। নির্বাচনী ব্যয় কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্ধারিত ব্যয়সীমা যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। নিরীক্ষার মাধ্যমে তা জনসমক্ষে প্রকাশেরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নির্বাচনী শোডাউন, তোরণ নির্মাণ, দেয়াল লিখন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়ে থাকে- এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
এম হাফিজউদ্দিন খান : সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আগামী দুই টার্ম নির্বাচনকালে দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যে নিরপেক্ষ, সেই বিশ্বাস স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ডামি বা ভুয়া প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ নির্বাচনে একই ব্যক্তি একাধিক আসনে নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বিধান প্রণয়ন করতে হবে। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ছয় মাসের মধ্যে কোনো দল কিংবা প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না। মোটামুটি এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হতে পারে।
কালের কণ্ঠ : প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের অঙ্গীকার ছিল। অঙ্গীকার পূরণ হয়নি, তা অনেকেই বলছেন। এ ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুপারিশ করবেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : মহাজোট সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি এ ক্ষেত্রে। তবে সামনের দিনগুলোতে তারা কিছু কাজ করতে পারে। গণমুখী ও দলনিরপেক্ষ প্রশাসনব্যবস্থা চালু করা অপরিহার্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এটা দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত বলে মনে করি। বিচার বিভাগের সত্যিকারের পৃথক্করণ করতে হবে। পাশাপাশি তাকে কার্যকরভাবে স্বাধীন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানবাধিকার কমিশনকে কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে কার্যকর তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে। ন্যায়পাল নিয়োগের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সমাপ্ত করতে হবে। এটা বর্তমান জোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও বটে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির মতো কার্যাবলি স্বচ্ছ নীতিমালার ভিত্তিতে কার্যকর করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কী কী করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : এখন দেশে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে, এটা রাজনীতিবিদরাই সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা যেভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, সেটা তাঁরা ভালোভাবেই জানেন। সুতরাং এই পথ সুন্দর করতে হলে তাঁদেরই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।
কালের কণ্ঠ : এ ক্ষেত্রে আপনি কি সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : নিশ্চয়ই। অচলাবস্থা নিরসন করতে হলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়ই এগিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে আনতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো তেমন উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
কালের কণ্ঠ : বিকল্প পথ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
এম হাফিজউদ্দিন খান : রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সংশোধন করতে না পারলে জনগণকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নেওয়ার কাজটি করবে কিভাবে? গণতন্ত্র হলো জনগণের সম্মতির শাসন। সেই সম্মতির মাধ্যমে তারা ভোটের দিন প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেয় ঠিকই; কিন্তু তারপর গণতন্ত্র কায়েম হয় না। সে জন্য আমি মনে করি, জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। নাগরিকরা যত সোচ্চার হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যত বেশি প্রতিবাদী হবে, সেখানে গণতন্ত্র তত শক্তিশালী হবে। গণতন্ত্র সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে জনসচেতনতা এবং তাদের সক্রিয় হওয়া খুবই জরুরি বলে মনে করি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
এম হাফিজউদ্দিন খান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.