ভুলে যাওয়া রোগীদের দাঁতের চিকিসা

এ্যালজাইমারস রোগে মানুষ ধীরে ধীরে সব কিছু ভুলে যায় যা তার জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। আলয়েস অ্যালজাইমার নামে একজন জার্মান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সর্ব প্রথম অ্যালজাইমারস রোগের নিউরোপ্যাথলজি অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় ব্রেন সেল নষ্ট হয় তা পর্যবেক্ষণ করেন।
১৯০৬ সালে আলয়েস অ্যালজাইমারের নামানুসারে রোগের নামকরণ করা হয় অ্যালজাইমারস। উল্লেখ্য, প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান একজন অ্যালজাইমারস রোগী ছিলেন। অ্যালজাইমারস রোগ মস্তিষ্কের আগ্রাসি ডিসঅর্ডার বা অচলাবস্থা যা ধীরে ধীরে একজন মানুষের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে অ্যালজাইমারস রোগ চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ।
এ্যালজাইমারস রোগের চিকিৎসা: অ্যালজাইমারস রোগের এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে কোন কার্যকর চিকিৎসা নেই, যদিও এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো রোগের লক্ষণের অবসানে কিছু উপকারে আসে। আশার কথা হলো, চিলেটিং পদার্থ ডেসফেরিঅক্সামিন অ্যালজাইমারস রোগের অগ্রগতি কিছুটা হলেও রোধ করতে পারে।
এ্যালজাইমারস রোগীর দাঁতের সমস্যা ও চিকিৎসা: বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা ৭৫ ভাগ অ্যালজাইমারস রোগীর দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় দাঁতের যতেœ প্রদেয় নির্দেশাবলী রোগী ভুলে যায়। পরবর্তী সময়ে অ্যালজাইমারস রোগীদের দাঁতের পরিচর্যার অবহেলা বাড়তে থাকে। কারণ দাঁতের পরিচর্যা কেন প্রয়োজন সেটাই তারা ভুলে যায়। এমনকি কিভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে বা কৃত্রিম দাঁত পরিষ্কার করতে হবে তাও ঠিকমতো মনে থাকে না। কৃত্রিম দাঁত হারিয়ে ফেলে অথবা মুখে লাগিয়ে রাখতে পারে না। দাঁতের পরিচর্যার অবনতি এবং লালা নিঃসরণ কম হওয়ায় দন্তক্ষয়ের মাধ্যমে দাঁতের ক্ষতি হয় অথবা পেরিওডেন্টাল রোগের মাধ্যমে। এসব রোগীর সমস্যা সমাধান করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় খাবার সমস্যার কারণে এবং মুখে দুর্গন্ধের কারণে। খাবারে স্বাদ না পাওয়া সচরাচর একটি অভিযোগ। অ্যালজাইমারস রোগীদের ব্যবহারগত সমস্যা দূর করার জন্য ফেনোথিয়াজিনস ব্যবহার করা হয়: কিন্তু এ কারণে রোগীর মুখে শুষ্ক হয়ে যায়। লালা নিঃসরণ কম হলে মুখে জীবাণু দ্বারা প্ল্যাক গঠন হয় এবং মাড়ি রোগ ও দাঁতের ক্ষয় হয়। মুখে যদি লালা কমে যায় তাহলে অ্যালজাইমারস রোগীদের কৃত্রিম লালা দেয়া যেতে পারে।
দাঁতের চিকিৎসা: অ্যালাজাইমারস রোগীদের দাঁতের চিকিৎসা সকালবেলা করা উচিত। কারণ সাধারণত দেখা যায় অ্যালজাইমারস রোগীদের দাঁতের চিকিৎসায় সকালবেলা বেশি সহযোগিতা করে থাকেন। অপারেশনের আগে নিদ্রা উদ্দীপক হিসেবে হ্যালোপেরিডল প্রয়োজন হতে পারে। অ্যালজাইমারস রোগীদের দাঁতে কোন সমস্যা দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। কারণ দেরি হলে লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিচিত পরিবেশে অ্যালজাইমারস রোগীদের দাঁতের চিকিৎসা করতে হবে। চিকিৎসার প্রতি ধাপের আগে রোগীকে তা ব্যাখ্যা করে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাল হয় যাতে রোগীর কোন অসহযোগিতা না থাকে এবং রোগী যেন কোন অস্বস্তিতে না ভোগে। অ্যামালগাম ফিলিং মানদেহে মারকারি বা পারদ নিঃসৃত হওয়ার একমাত্র প্রধান উৎস। অ্যালজাইমারস রোগীদের স্থায়ী ফিলিং দেয়ার সময় কোনভাবেই অ্যামালগাম ফিলিং দেয়া ঠিক নয়। কারণ এমনিতেই অ্যালজাইমারস রোগীদের ব্রেনে মারকারি ও অ্যালুমিনিয়াম বেশি পাওয়া যায়।
অ্যালজাইমারস রোগীদের মৃত্যুর প্রধান রোগ সংক্রামণ । শারীরিক স্থবিরতা ও অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার কারণে দাঁতে এবং মুখের অভ্যন্তরে অ্যালজাইমারস রোগীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়; কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মুখে যে কোন ধরনের সংক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে জীবনহানি ঘটাতে পারে। অতএব দাঁতে যেন কোনভাবেই সংক্রমণ দেখা না দেয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। অ্যালজাইমারস রোগীদের দাঁতের চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য থাকবে পুনরায় যাতে দাঁতের কোন অসুখ না হয়।
ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ

No comments

Powered by Blogger.