নির্মাণসামগ্রীর ভাগাড়, হারিয়ে যাচ্ছে নিসর্গের নান্দনিক রূপ- পর্যটন নগরী কক্সবাজার-২

পর্যটন নগরী নয়, যেন নির্মাণসামগ্রীর ভাগাড়। ঝাউবনের নীরবতা ভেঙ্গে, সাগরের গর্জন ছাপিয়ে ক্রাশ মেশিনের বিদারী শব্দেই প্রতিনিয়ত ঘুম ভাঙছে পর্যটকদের।
পথের দু'ধারে ইট, বালু, সুরকির সত্মূপ। নির্মাণ শ্রমিক আর ঠিকাদার -কর্মচারীদের হুড়োহুড়ি-ব্যসত্মতা। এভাবেই ইট-কাঠের আড়ালে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে নৈসর্গের নান্দনিক রূপ। সাগরপারে দাঁড়িয়ে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি দেখার সুযোগটাও দিন দিন হারাচ্ছেন পর্যটকরা। অপরিকল্পিত বহুতল স্থাপনার ঘিঞ্জি নগরীতেই যেন পরিণত হচ্ছে নামেই পর্যটননগরী কক্সবাজার। এ বিষয়ে স্বয়ং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ৰুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এ অবস্থা বিরাজ করলে ২/৩ বছর পর কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন পর্যটকরা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পরিকল্পনার যে ছিটেফোঁটাও নেই কোথাও, তা দেখে হতাশ পর্যটকরা। দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে ভূমিখেকোদের হাতও। আর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট নির্মাণেও চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। খুব কম সংখ্যকই ভাবছেন ভবিষ্যতের কথা, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রেখে স্থাপনা নির্মাণের কথা। পর্যটন বোর্ড না থাকা এবং পর্যটন করপোরেশনের খুব একটা মাথা ব্যথা না থাকায় অনেকটা বল্গাহীনভাবেই চলছে অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা। পরিস্থিতি গুরম্নতর বিবেচনা করে আগামী ১৭ ফেব্রম্নয়ারি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌরসভার চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ীসহ সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে জরম্নরী বৈঠক ডেকেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের জনকণ্ঠকে জানান, পুরো কক্সবাজারকে শীগ্রই একটি মাস্টারপস্ন্যানের আওতায় নিয়ে আসা হবে। মাস্টারপস্ন্যান তৈরির কাজ শুরম্ন হয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যটন নীতিমালা ও পর্যটন বোর্ড গঠন করা সম্ভব হলে মাস্টারপস্ন্যানের বাইরে কেউ কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না।
অবশ্য এ জন্য বোর্ড গঠন পর্যনত্ম অপেৰা করতে হ্েব তেমনটা নয়, এখনও আমরা মন্ত্রণালয় থেকে এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কক্সবাজারকে সত্যিকারের পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। তিনি বলেন, কক্সবাজারে স্থাপনা নিমর্াণসহ বিভিন্ন ৰেত্রে পুরো বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। নূ্যনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই হোটেল, মোটেল ও ভবন নির্মাণ চলছে। মাস্টারপস্ন্যান তৈরির আগেই এ পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়া যায়, সেটা ঠিক করতেই সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে ১৭ ফেব্রম্নয়ারি জরম্নরী বৈঠক হবে।
যাঁরা দু'বছর আগেও কক্সবাজার গেছেন, তাঁরা আজকের এ পর্যটন কেন্দ্র দেখলে বেশ চমকে উঠবেন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পাশে অনেকখানি বেমানান এ দৃশ্য। সবাই একবাক্যে বলছেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর পরিকল্পনার অভাবে নষ্ট হচ্ছে কক্সবাজারের সহজাত রূপ। সবার মধ্যে যেন কোন রকমে একটি অবকাঠামো গড়ে তুলে স্থানটি দখলে রাখার ভাবনাটি বেশি কাজ করে।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আবিদ হোসেন বললেন, আগেও কক্সবাজার এসেছি। তবে স্ত্রী ও সনত্মান নিয়ে এবারই প্রথম। এখানের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু দুঃখ পাচ্ছি, এই সৌন্দর্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। আমরা, পর্যটকরা আসছি বলে এভাবে যেখানে-সেখানে হোটেল, মোটেল নির্মাণ করলে তো নিরিবিলি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
সংশিস্নষ্টরা জানান, কক্সবাজারকে ঘিরে বড় ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়নি কখনও। কক্সবাজারের ৪শ' হোটেল-মোটেল থাকলেও নিবন্ধন আছে মাত্র ৬০টির। নিবন্ধিত হোটেল, মোটেলও নিয়মিত কর দেয় না। এমনও দেখা যায়, ৬০ রম্নমের হোটেলে একটিও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এদিকে জোট সরকারের আমলে হোটেল-মোটেল জোনে দলীয় সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের নামে পস্নট বরাদ্দ জন্ম দেয় কেলেঙ্কারির। এছাড়া বিমানবন্দরের ৬০ একর জমি দখল এবং কলাতলীতে পাহাড় কেটে ৫১ একর জমিতে সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণের পদৰেপ নিয়েও আছে নানা অভিযোগ।

No comments

Powered by Blogger.