বিক্ষোভে উত্তাল বলাকা ভবন, বিমান ওঠানামা বন্ধের শঙ্কা- শ্রমিক ধর্মঘটে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে না ॥ দাবি করলেন এমডি

দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশ বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের কর্মচারীদের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভকারীরা আজ ভোর ৬টা থেকে লাগাতার ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বিমানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে না বলে দাবি করেছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ। কয়েক দিন ধরেই বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিমান কর্তৃপক্ষের আনা নানা অভিযোগ প্রত্যাহার, আহার ভাতা ও ইউনিফর্ম প্রদান, ভারত থেকে আনা বিমানের সেটআপ বাস্তবায়ন, কর্মচারীদের ব্যক্তিগত টিপি বাস্তবায়ন, এক শ’ ভাগ চিকিৎসা ভাতা প্রদান এবং ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা কর্মচারীদের স্থায়ী করার দাবিতে নানা আন্দোলন কর্মসূচী চালিয়ে আসছে বিমান শ্রমিক লীগ নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকে আমলে নিচ্ছিলেন না।
গত রবিবার অব্যাহত আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বলাকা ভবনে বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদকে অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। প্রায় ১১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় রবিবার রাত ২টার দিকে মুক্ত হন তিনি। মুক্ত হওয়ার আগে এবং পরে আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার বিষয় নিয়ে একাধিকবার বিমান কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকে কোন সুরাহা হয় না। কয়েক দফা আলোচনার পর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্দোলনকারীদের জানিয়ে দেন, এসব দাবি মেনে নেয়া অসম্ভব।
এ ঘোষণার পর সোমবার সকাল ৯টার দিকে বলাকার সামনে হাজির হয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে দাবিদাওয়া মেনে নেয়ার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেয়। এর আগে সকালে বিমানের কর্মকর্তারা কার্যালয়ে ঢুকতে গিয়ে আন্দোলনরতদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বিক্ষোভকারী বিমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। নানা ধরনের কটূক্তির মধ্যে পড়েন বিমান কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের মূল গেট থেকেই ফেরত পাঠায় আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীরা ৫টার মধ্যে দাবিদাওয়া মেনে নিতে সময় বেঁধে দেয়। এ অবস্থার মধ্যে বিকেল ৪টার দিকে বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) রাজপতি সরকারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বলাকা ভবনের সামনে যায়। প্রতিনিধি দলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিমানের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আতিক সোবহান ও উপ-প্রধান (প্রশিক্ষণ) ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল। তিনজনই আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে তাঁরা বলাকা ভবনে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। বেরিয়ে এসে বিমান কর্মকর্তারা অবশ্য জানান, সব দাবিদাওয়া মেনে নেয়া সম্ভব হবে না। এ ঘোষণার পর আবার আন্দোলনমুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এ সময় আন্দোলন-কারীদের তোপের মুখে পড়েন বিমান কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের সামনেই আন্দোলনকারী সংগঠনের সভাপতি মশিকুর রহমান উত্তেজিত কণ্ঠে আজ ভোর ৬টা থেকে বিমানে লাগাতার অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তাঁর দাবি, তাঁরা আন্দোলন করতে চায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় তাঁরা দাবিদাওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিমানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও বিমান কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি মেনে নেয়নি। তাঁদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর পেছানোর কোন সুযোগ নেই।
বিমান কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলে আরেক দফায় বিমানের এ তিন কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই আবারও লাগাতার ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, বিমানমন্ত্রী গত মার্চে আমাদের চারটি দাবি মেনে নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা কোন দাবি পূরণ না করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। তাই দাবি পূরণে আমরা কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি।
প্রসঙ্গত গত বছর মার্চে বিমান কর্মীদের একটি সংগঠন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। মানববন্ধন, সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচীর পর একপর্যায়ে তাঁরা সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয়। পরে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে ধর্মঘট স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে অব্যাহত আন্দোলনের মুখে এবং শ্রমিক ধর্মঘটের ফলে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম দারুণ ব্যাহত হবে। এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে আন্দোলনের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের প্রধান কার্যালয় অচল হয়ে পড়েছে। তবে শ্রমিক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচীর কারণে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও বিমান ওঠানামায় কোন অসুবিধা হবে না বলে দাবি করেছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ।
এদিকে যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বলাকা ভবন ও হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.