ডায়মন্ড গার্ল রত্নার টার্গেট ২০১২ অলিম্পিক- দিলরুবা কোহিনূর সুইটি

 এসএ গেমসে মঙ্গলবার বাংলাদেশের জন্য দিনটি ছিল যথার্থ অর্থেই মঙ্গলময়। দুপুরের মধ্যেই একে একে দু'টি স্বর্ণ জয় করে দেশবাসীকে আনন্দে মাতানোর উপলৰ এনে দেন বাংলাদেশের মহিলা শূটাররা।
প্রথম স্বর্ণটি আসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল (দলীয়) ইভেন্ট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় স্বর্ণ জেতেন শারমীন আক্তার রত্না, সৈয়দা সাদিয়া পারভীন ও তৃপ্তি দত্ত। তার পরেরটি একই ইভেন্টে এককে। সোনার পদক গলায় ঝোলানোর অধিকারী হন ২১ বছর বয়সী রত্না। রত্নার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর স্বর্ণজয়ের দু'দিন আগে, পদকজয়ের পরের দিন ও গেমস শেষে বাংলাদেশ শূটিং ফেডারেশনের পৰ থেকে অন্যান্য পদকজয়ী শূটারসহ সংবর্ধিত ও পুরস্কৃত হবার পরদিন। তিন দফার সেই আলাপচারিতাকে একসঙ্গে যোগ করে পাঠকদের জন্য পরিবেশিত হলো রত্নার এক্সকুসিভ সাৰাতকারটি।
প্রশ্ন : সম্প্রতি শূটিং ফেডারেশন থেকে এসএ গেমসে আশাতীত নৈপুণ্যের জন্য নগদ অর্থ পুরস্কার পেয়ে কেমন লাগছে?
উত্তর : চেষ্টা করেছিলাম ভাল কিছু করার। ফেডারেশনের প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী পুরস্কার পেয়েছি। তাই তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এভাবে যদি সব সময়ই এ্যাথলেটদের সামনে টার্গেট সেট করে দেয়া হয়, তাহলে ক্রীড়াবিদরা অবশ্যই ভাল করার চেষ্টা করবেন।
প্রশ্ন : এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের স্বর্ণজয়ীদের বেশিরভাগই মহিলা। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কি?
উত্তর : একজন মহিলা হিসেবে এটা আমার জন্য অবশ্যই আনন্দের। এটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই ইতিবাচক। আগে যেখানে খেলাধুলার জন্য মেয়েদের খুঁজেই পাওয়া যেত না, এখন সেখানে তাদের উলেস্নখযোগ্য হারে অংশ নেয়া ও সাফল্যের বিষয়টা এটাই প্রমাণ করে_ যুগ বদলাচ্ছে।
প্রশ্ন : আপনার ডাকনাম তো রত্না। ধরম্নন, একদিন শূটিংয়ে আপনার যদি আকাশচুম্বী খ্যাতি আর সাফ্যল্যের কারণে আপনাকে 'বাংলাদেশের শূটিংয়ের রত্ন' হিসেবে অভিহিত করা হয়, তাহলে কেমন লাগবে আপনার? এ নিয়ে কি কোন স্বপ্ন দেখেন?'
উত্তর : আমার পূর্বসুরিদের অনেকেই কিংবদনত্মি। জানি না একদিন তাঁদের সমকৰ বা তাঁদের ছাড়িয়ে যেতে পারব কিনা, তবে সেই স্বপ্ন যে দেখি না, এটা বললে মিথ্যা বলা হবে। নিজেকে রত্ন হিসেবে ভাবলে কার না ভাল লাগবে?
প্রশ্ন : কোথায় জন্ম হয়েছে আপনার?
উত্তর : মাগুরায়।
প্রশ্ন : বাবা-মা সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : বাবা মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার (সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার)। মা আঞ্জুমান আরা। সাধারণ গৃহিণী।
প্রশ্ন : শৈশব কেটেছে কোথায়, মাদারীপুরেই?
উত্তর : না। বাবার চাকরির সুবাদে কয়েক বছর সাভার সেনানিবাসে থাকতে হয়েছিল। সেখানেই মনোরম পরিবেশে শৈশব কেটেছে আমার।
প্রশ্ন : কয় ভাইবোন আপনারা?
উত্তর : আমার কোন ভাই নেই। চার জনই বোন। আমি সবার বড়।
প্রশ্ন : পড়াশোনা?
উত্তর : এসএসসি পর্যনত্ম পড়ার পর আর পড়াশোনা করিনি।
প্রশ্ন : বলা যাবে কারণটা?
উত্তর : কারণ অবশ্যই শূটিং। তাছাড়া পড়তেও আর ভাল লাগছিল না।
প্রশ্ন : আপনি ছাড়া আপনার পরিবারের আর কেউ কি খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত?
উত্তর : না। আমি ছাড়া পরিবারের কেউই খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই।
প্রশ্ন : স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এমন সাদামাটা ফ্যামিলি থেকে কিভাবে এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট হলেন?
উত্তর : সাভার ক্যান্টনমেন্টে শূটিংয়ের ওপর একবার অনুর্ধ-১৬ ট্যালেন্ট হান্ট শূটার সার্চ হয়। আমার পরিচিত অনেকেই নাম দেয়, আমিও কোনকিছু না ভেবেই নাম জমা দেই। বলতে পারেন, অনেকটা ঝোঁকের মাথায় বা শখের বসেই এটা করি। এভাবেই খেলাটিকে ভাল লেগে যায়।'
প্রশ্ন : কবে থেকে শূটিং ভুবনে পদার্পণ ঘটে আপনার?
উত্তর : ২০০৪ সালে।
প্রশ্ন : শুরম্নতে থেকেই পরিবারের সমর্থন বা উৎসাহ পেয়েছিলেন?
উত্তর : ঠিক সেভাবে নয়। প্রথমে এ খেলা সম্পর্কে তেমন সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় বাবা-মা আমাকে শূটিংয়ে দেবেন কিনা, সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে মোটামুটি আশ্বসত্ম হবার মতো তথ্য পেয়ে আর আপত্তি করেননি। তবে তাঁদের কাছে থেকে অনুপ্রেরণা যেভাবে পাবার কথা, সেভাবে না পেলেও তাঁদের কাছ থেকে নিরম্নৎসাহিতও হইনি।
প্রশ্ন : আপনার প্রথম আনত্মর্জাতিক টুর্নামেন্ট কোন্টি?
উত্তর : ২০০৭ সালে জাতীয় পর্যায়ের পর প্রথম আনত্মর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে কাতার এশিয়ান এয়ারগান টুর্নামেন্টে।
প্রশ্ন : আপনার আদর্শ শূটার কে বা কারা?
উত্তর : (অনেক ভেবেচিনত্মে) বাংলাদেশের সাবরিনা সুলতানা ও ভারতের গগন নারায়ণ।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে কি শূটিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার ইচ্ছে আছে?
উত্তর : বাংলাদেশে শূটিংয়ের অবস্থা ধীরে ধীরে ভাল হলেও এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার মতো এখনও অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শূটিংকে পেশা হিসেবে নেব কি না, তা এখনও সেভাবে ভাবিনি।
প্রশ্ন : শূটিং নিয়ে ভবিষ্যত লৰ্য কি? ১০ বছর পর নিজেকে কোন্ অবস্থানে দেখার অভিলাষ?
উত্তর : এতদূর পর্যনত্ম পস্ন্যান করিনি। আপাতত সব ভাবনা ২০১২ লন্ডন অলিম্পিককে নিয়ে।
প্রশ্ন : শূটিং নিয়ে কোন মজার বা স্মরণীয় ঘটনা আছে?
উত্তর : শূটিংয়ে এখনও তেমন মজার ঘটনা না ঘটলেও স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে এবারের গেমসে সাফল্য পাওয়াকেই চিহ্নিত করতে চাই আমি।
প্রশ্ন : অবসর নেয়ার পর কি কোচিং পেশায় আসতে চান?
উত্তর : না। অবসর নেয়ার পর অন্যদের মতো কোচ হবার কোন স্বপ্ন নেই আমার। কেননা কোচিং খুব কঠিন মনে হয় আমার। আমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না।
প্রশ্ন : এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ের পেছনে কোচের অবদান কতটুকু?
উত্তর : অবশ্যই তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। একজন কোচের দিকনিদের্শনা ও প্রশিৰণ ছাড়া কোন এ্যাথলেটই সাফল্য পেতে পারে না। আমার সাফল্যের পেছনে আমার ব্যক্তিগত কোচ আনোয়ার হোসেন ইকবাল ও ফেডারেশনের কোচ শোয়েব-উজ-জামানের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতেই হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের শূটিংয়ের ভবিষ্যত কেমন বলে মনে হয়?
উত্তর : বাংলাদেশের শূটিং অত্যনত্ম সম্ভাবনাময়। এখন যারা আছে, তারা সবাই ইয়ং। তাদের কাছ থেকে সাফল্য পেতে হলে তাদের বেশি করে আনত্মর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে তাদের নার্ভাসনেস কমবে ও চাপ নেয়ার ৰমতা বাড়বে। কেননা এটা পুরোপুরি মেন্টাল গেম।
প্রশ্ন : শূটিংয়ে সাফল্যের জন্য চাই একাগ্রতা। এর জন্য কিসের বিকল্প নেই?
উত্তর : একাগ্রতার জন্য নিবিড় অনুশীলনের বিকল্প নেই।
প্রশ্ন : ভাল শূটার হতে গেলে সবার আগে কি থাকা উচিত?
উত্তর : জিদ। তবে সেটা পজেটিভ অর্থে। সেই সঙ্গে পরিশ্রম করার মানসিকতা।
প্রশ্ন : মনোসংযোগ বৃদ্ধির জন্য কি কোন ধ্যান বা যোগ ব্যায়াম করতে হয় আপনাদের?
উত্তর : এটা যার যার ব্যাপার। তবে আমি কোয়ান্টাম মেথডের মেডিটেশন কোর্স করেছি।
প্রশ্ন : আগামী ২০১২ সালের এসএ গেমস হবে ভারতে। এবারের সাফল্য কি সেখানেও ধরে রাখতে পারবেন?
উত্তর : ২০১২ সালের এসএ গেমস নয়। আমি ভাবছি ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমস নিয়ে। যে কোন মূল্যেই সেখান থেকে একটি পদক অর্জন করতে চাই আমি।
প্রশ্ন : সোনাজয়ের পর ক্যাম্পে ফিরে কেমন উলস্নাস করেছেন?
উত্তর : সেভাবে করা হয়নি। আসলে ভেতরে খুব আবেগ কাজ করলেও সেভাবে প্রকাশ করতে পারিনি।
প্রশ্ন : আপনার শখের বিষয় কি?
উত্তর : একটাই, গল্পের বই পড়া।
প্রশ্ন : প্রিয় লেখক কে?
উত্তর : হুমায়ূন আহমেদ (সঙ্গের ব্যাগ খুলে ৪/৫টা বই বের করে নগদ প্রমাণও দিলেন)।
প্রশ্ন : এছাড়া অবসর কাটে কিভাবে?
উত্তর : মুভির পোকা আমি। টিভিতে বাংলা, ইংরেজী ও হিন্দী মুভি (অবশ্যই ভাল মানের) দেখি সুযোগ পেলেই।
প্রশ্ন : প্রিয় নায়ক-নায়িকা কারা?
উত্তর : নায়কদের মধ্যে শাহরম্নখ খান, টম ক্রুজ; নায়িকা হিসেবে পছন্দ কাজল আর এ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে।
প্রশ্ন : গান শোনার অভ্যাস কেমন? প্রিয় গায়ক-গায়িকা কারা?
উত্তর : হ্যাঁ শুনি। দেশে নতুন যাঁরা গাইছেন, তাঁদের সবার কণ্ঠই ভাল লাগে।
প্রশ্ন : শূটিং ছাড়া আপনার অন্য প্রিয় খেলা কি?
উত্তর : ক্রিকেট।
প্রশ্ন : দেশে-বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটার কারা?
উত্তর : বিদেশে শচীন তেন্ডুলকর। দেশে শাকিবের খেলা খুুব ভাল লাগে।
প্রশ্ন : প্রিয় খাবার?
উত্তর : যে কোন টাইপের খিচুড়ি। তবে জগাখিচুড়ি নয়!
প্রশ্ন : প্রিয় রং, ফুল, ফল, মাছ সম্পর্কে বলুন।
উত্তর : রং_ বস্ন্যাক, ফুল_ ঘাসফুল, ফল_ লিচু, মাছ_ সব ধরনেরই প্রিয়।
প্রশ্ন : প্রিয় পারফিউম? প্রিয় পোশাক?
উত্তর : হাতের কাছে যা পাই, সেটাই প্রিয় পারফিউম। আর থ্রি-পিস পরতে ভাল লাগে। শাড়ি পরার অভ্যাস নেই আমার।
প্রশ্ন : এমন ৩টি জিনিসের নাম বলুন, যেগুলো ছাড়া আপনি অচল?
উত্তর : মোবাইল, রাইফেল আর ঘুম!
প্রশ্ন : কিসে বা কাউকে ভয় পান?
উত্তর : এমন কিছু নেই।
প্রশ্ন : মেজাজ খারাপ হয় কখন?
উত্তর : যদি বুঝতে পারি কেউ চিটিং করেছে, তখন ভীষণ রাগ হয়।
প্রশ্ন : আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে?
উত্তর : আমার মা।

No comments

Powered by Blogger.