স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বাড়িভাড়া চিকিসা ভাতা বাড়ল

 বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫ গুণ করে ১০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ভাতাও ১৫০ টাকার স্থলে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ল। চলতি জানুয়ারি থেকেই এই সুবিধা পাবেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের এসব আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দেন।
তবে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারী শিক্ষক সংগঠনগুলো শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বাস্তবতার নিরিখে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৫০০ টাকা কোন বাড়িভাড়া হতে পারে না। এই টাকায় দেশের কোথাও একটি কক্ষও ভাড়া পাওয়া যাবে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আজ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিজীবনের একটি ঐতিহাসিক দিন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরাধীন (মাউশি) ২৬ হাজার ৪৭টি বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯০ জন এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরাধীন ১ হাজার ৬০০টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ১৩ হাজার ২৫৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতার বৃদ্ধির এই সুবিধা পাবেন।’
বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৯৮০ সালে প্রথম এমপিওভুক্ত হন বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, তাঁরা সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ১০০ টাকা হিসেবে বাড়িভাড়া পাচ্ছেন। তাঁদের চিকিৎসা ভাতা প্রথমে মাসিক ৬০ টাকা, পরে ১০০ টাকা এবং ১৫০ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়, যা খুবই অপ্রতুল। এ টাকার পরিমাণ যথেষ্ট বাড়ানোর প্রয়োজন। প্রয়োজন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানো। প্রয়োজন সহকারী গ্রন্থাগারিকদের এমপিওর ব্যবস্থা করা। নানা আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকার শিক্ষকদের বিষয়গুলো অত্যন্ত সহৃদয়তার সঙ্গে বিবেচনা করে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা সংস্থান করেছে। সে টাকা দিয়ে সরকার বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীর এসব বুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির ক্ষেত্রে এটি বিশাল প্রাপ্তি।
শিক্ষকতাকে একটি ‘ব্রত’ অভিহিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়। আদর্শ, নৈতিকতা, সৃষ্টিশীলতা এ পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিবেদিতপ্রাণ দক্ষ শিক্ষক সবার শ্রদ্ধেয়। এদের যোগ্য মর্যাদা ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা এখনও আমরা যথেষ্ট উন্নত করতে সক্ষম হইনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সব সময় আন্তরিক। তার বহু প্রমাণ আমরা দেখেছি। আমরা শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টায় রত।’
‘মাসে ৫০০ টাকায় বর্তমানে বাসা ভাড়া পাওয়া অসম্ভব হলেও ভাতা বৃদ্ধির ফলে শিক্ষকরা খুশি হবেন’ বলে আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ভাতা বাড়ানোর ফলে শিক্ষকরা খুশি হবেন এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে তাঁরা উৎসাহ পাবেন।’
সহকারী গ্রন্থাগারিকেরাও এমপিওভুক্ত ॥ শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ প্যাটার্নভুক্ত থাকলেও কখনও এমপিওভুক্তি করা হয়নি। এবারই প্রথম (চলতি মাস থেকেই কার্যকর) তাদেরকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে।
স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ভাতা দ্বিগুণ ॥ মন্ত্রী বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পেয়ে আসছেন, যা খুবই অপ্রতুল। এদের ভাতা দ্বিগুণ করে অর্থাৎ ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা হলো। দেশের ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ৬ হাজার ৭৬ জন শিক্ষক চলতি জানুয়ারি থেকেই এ সুবিধা পাবেন বলেও তিনি জানান।
এছাড়াও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরাধীন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তকরণ, এমপিওর আওতাভুক্ত শূন্যপদে কর্মরত ইনডেক্সবিহীনদের এমপিও, টাইমস্কেল, বিএড/কামিল স্কেল, উচ্চতর স্কেল প্রদান করা হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার জন শিক্ষক-কর্মচারী চলতি জানুয়ারি থেকে এ সুবিধা পাবেন বলেও শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাসচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ও মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য ॥ জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণায় আমরা খুশি হতে পারিনি। এ ধরনের ঘোষণা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। কারণ ৫০০ টাকা কোন বাড়িভাড়া হতে পারে না। আমরা মূল বেতনের পার্সেন্টেজ অনুযায়ী বাড়িভাড়া চেয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। তবে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা ধর্মঘটের বাইরে থাকবে’।
জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের আহ্বায়ক অধ্যাপক আসাদুল হক শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে কোন সামঞ্জস্য নেই শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণায়। শিক্ষকদের দাবি ছিল ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন-স্কেল অনুযায়ী বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা বৃদ্ধি করা। কিন্তু সরকার নামকাওয়াস্তে পিয়ন, শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা করেছে, যা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি জানান, শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) সারাদেশে জেলা ও থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। পরবর্তীতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান।
শিক্ষামন্ত্রী চলমান আন্দোলন বানচালের জন্য যতসামান্য বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ করে তাঁর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে জোটের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতি, মহাসচিব মুহম্মদ জাহাঙ্গীর খান ও অন্য নেতারা বলেন, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না দিলে মহাসমাবেশ করে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারী স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ হারে সর্বনিম্ন চার হাজার টাকার মতো বাড়িভাড়া ও ৪৫০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।

No comments

Powered by Blogger.