নরওয়ে হত্যাকাণ্ড-শান্তির দ্বীপে বিভীষিকা

৯৩ জন মানুষের প্রাণ সংহার ও শতাধিক মানুষকে আহত করার পর খুনি যখন বলে এ হত্যাকাণ্ড 'বিভীষিকাময় হলেও প্রয়োজনীয়', বিস্ময়ের সব সীমারেখা তাতে ধসে পড়ে। নতুন করে মানুষের মধ্যে এ উপলব্ধি জাগ্রত হয় যে, কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠার নামে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড কতটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় হতে পারে।


নরওয়ের রাজধানী অসলোতে বোমা হামলা এবং উটোয়া দ্বীপে গুলি করে বিপুল প্রাণ সংহারের পর অভিযুক্ত খুনি অ্যান্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক সম্পর্কে যা জানা গেল তাতে স্পষ্ট যে, এই তরুণটি ঘৃণা ও বিদ্বেষের দর্শনের শিকার। ধর্মকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার দর্শন কতটা ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকর হতে পারে তা আমরা ইতিমধ্যে আল কায়দাসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি। তাদের হামলায় বিশ্বজুড়ে বহু নিরপরাধ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ প্রাণহানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু আশার কথা, খোদ মুসলমানদের মধ্যেই সন্ত্রাস ও ঘৃণার মধ্য দিয়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠার এ চর্চা কোনো সমর্থন পায়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় দেশগুলোতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে একই ধরনের হিংসার রাজনীতি পল্লবিত হয়েছে। এ হিংসা তরুণদের বিপথগামী করে তুলছে। ব্রেইভিক ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড চান, আর এ কাজে সমাজকে সচেতন করতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন হাতে। হিংসা মানুষকে কতটা যুক্তিহীন করে তুলতে পারে তার ন্যক্কারজনক উদাহরণ এটি। আশার কথা, ব্রেইভিকের হিংসার দর্শন মানুষকে উল্টো হিংসার বিরুদ্ধে সরব করে তুলেছে। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ এক বাক্যে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যে আদর্শ এবং যে আদর্শের ধারক শান্তির দেশ নরওয়েকে অশান্তিময় ও রক্তাক্ত করে তুলল, তারা কারও সহানুভূতি বা অনুকম্পা পাবে না বলেই আশা করা যায়। তবে ইউরোপের দেশগুলোকে এখনই সচেতন হতে হবে। মুসলিম সম্প্রদায় অনেক দেরিতে তাদের সমাজে গজিয়ে ওঠা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। নরওয়েসহ ইউরোপের দেশগুলো যেন দেরি না করে ঘৃণা ও বিদ্বেষের আদর্শকে সমূলে উৎপাটনের উদ্যোগ নেয়, নইলে আরও অনেক রক্তপাত পৃথিবীকে কলঙ্কিত করবে।
 

No comments

Powered by Blogger.