সহজিয়া কড়চা-জনসভা ওরফে মহাসমাবেশের উপকথা by সৈয়দ আবুল মকসুদ

হোসেন শাহি বাংলায় জনসভা হতো না, মহাসমাবেশ তো নয়ই। তবে ধর্মসভাগুলোতে বহু মানুষের সমাগম হতো বলে ধারণা করি। আলিবর্দীর শাসনামলে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় মহাসমাবেশের রেওয়াজ ছিল বলে কোনো বইয়ে পাইনি। হোসেন শাহি রাজত্বে ও নবাবি আমলের বাংলায় গণতন্ত্র ছিল না।

গণতান্ত্রিক রাজনীতির যেদিন থেকে সূচনা, সেদিন থেকে জনসভা ওরফে মহাসমাবেশেরও জন্ম। কুড়ি শতক পর্যন্ত যা ছিল জনসভা ও সমাবেশ, একুশ শতকে এসে তা প্রমোশন পেয়ে হয় জনসমুদ্র ও মহাসমাবেশ।
আঠারো শতকে মজনু শাহরা, ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নায়কেরা, হতদরিদ্র কৃষক-তাঁতিদের নিয়ে জনসমাবেশ করেছেন। তাঁদের যে ব্রিটিশ শাসক ও জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, সে কথা তাঁদের ডেকে বুঝিয়েছেন। মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর দরিদ্র কৃষক প্রজাদের নিয়ে সমাবেশ করে থাকবেন। হাজি শরীয়তুল্লাহ খাজনা বন্ধের আগে মুসলমান প্রজাদের নিয়ে সমাবেশ অবশ্যই করেছেন। তবে তিতুমীর ও শরীয়তুল্লাহর সমাবেশের জন্য খুব বড় মঞ্চ, লাখ লাখ চাররঙা পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন অথবা অগণিত মাইকের প্রয়োজন হয়নি।
কংগ্রেসের প্রথম আঠারো বছর জনসভার কোনো বালাই ছিল না। বছরে একবার বার্ষিক অধিবেশন বা সম্মেলন করতেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সারা দেশ থেকে সেজেগুজে আসতেন। সম্মেলন সাধারণত ঘরের মধ্যেই হতো। কখনো বাইরে প্যান্ডেল করে নেতারা ইংরেজিতে বক্তৃতা করতেন। প্রধান দাবি সরকারি চাকরি-বাকরিতে উচ্চশিক্ষিত হিন্দুদের কোটাটা বাড়ানো। নেতাদের কাছে জনগণের সমস্যার কোনো মূল্য ছিল না।
শতাব্দীর শুরুতে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠনের ঘোষণা আসতেই কংগ্রেসের নেতাদের তন্দ্রার ভাবটা কেটে যায়। গা ঝাড়া দেন। সরকারি চাকরি তো দূরের কথা, এবার পূর্ব বাংলার জমিদারিটাও বুঝি হাতছাড়া হয়ে যায়। রাতারাতি নেতারা রাস্তায় নামেন। শুধু নেতাভিত্তিক আন্দোলনে সুবিধা হবে না, সরকারের টনক নড়বে না। হিন্দু প্রজাদেরও সঙ্গে না রাখলে কাজ হবে না। শুরু হলো জনসভার আনুষ্ঠানিক জয়যাত্রা। দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ। তবে মহাসমাবেশ নয়। শুধু জনসভার জয়যাত্রা নয়, শুরু হলো নেতা-পূজাও। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়িতে নয়, কর্মীদের কাঁধে চড়ে সভাস্থলে যাওয়াটাই পছন্দ করতেন। দ্বিতীয় দশকে গান্ধী রাজনীতিতে প্রবেশ করে মানুষের কাঁধে চড়ার প্রথা বাতিল করলেন। নেতাকে কাঁধে বহনের রেওয়াজ এখনো থাকলে মারাত্মক সমস্যা হতো। কারণ, নেতৃত্ব আর একচেটিয়া পুরুষের হাতে নেই।
মাইক-পূর্ব জনসভায়ও হাজার হাজার মানুষ হতো কুড়ি শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত। কোনো কোনো নেতার কণ্ঠস্বর ছিল বাঘের মতো। বস্তুত, যাঁর গলায় যত জোর, তিনি তত বড় নেতা। তবে খালি গলায় বক্তৃতা যত জ্বালাময়ীই হোক, তা সব শ্রোতার কান পর্যন্ত পৌঁছাত না। তাহলে উপায়? সামনের দিকে যেসব শ্রোতা নেতার কথা শুনেছেন, তাঁরা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের শ্রোতাদের তা বলে দিতেন। এভাবে একেবারে পেছন পর্যন্ত বক্তব্য পৌঁছে যেত।
জনসভা গণতান্ত্রিক রাজনীতির অপরিহার্য অংশ। জনসভা নেই তো তাদের রাজনীতিও নেই। একদিক থেকে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে বিপ্লবীরা ভালো। জনসভার নাম-গন্ধ তাঁদের অভিধানে নেই। তাঁদের অতি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং তাঁরা করেন ঘরের মধ্যে নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তায়। অথবা কোনো গহিন অরণ্যে, যার পাঁচ মাইলের মধ্যে কোনো মানুষের ছায়াটিও নেই। গোয়েন্দাদের বাবারও সাধ্য নেই যে তাঁদের সভার বিষয়বস্তু নোট করেন। নেতা এক বাক্য বলে চোখ নিমীলিত করেন। তারপর তিন মিনিট নীরবতা। পরবর্তী বাক্যের অর্ধেক বলে মার্ক্স ও মাওয়ের ছবির দিকে তাকান। যেন সেখান থেকে কোনো নির্দেশ আসবে। কিন্তু ছবি কোনো কথা বলে না। এক দিন এক রাত দুই-তিনটি ‘তত্ত্ব’ নিয়ে আলোচনা হয়। শেষটায় একপক্ষ বলে, সোজা সশস্ত্র বিপ্লব। আরেক পক্ষ থিসিস দেয়—বিপ্লবের স্তর আসে নাই। গেল পার্টি ভেঙে। বিপ্লবের রূপরেখা হয়ে গেল। জনগণ কিছুই জানল না।
বুর্জোয়া গণতন্ত্রীদের নিয়ে সে সমস্যা নেই। দেশের লোককে ডেকে মনের কথা, দলের পরিকল্পনার কথা গলায় যত জোর আছে তা দিয়ে, দুই হাত প্রসারিত করে, জনতাকে জানিয়ে দেন। নেতা করেন দুই হাত প্রসারিত আর জনতা দুই হাত কাছাকাছি এনে মারে সজোরে করতালি। এভাবে নেতা ও জনতায় মিলে দেশ উদ্ধার। মহাসমাবেশ থেকে ঘরে ফিরে আসার আগে মানুষ বুঝতেই পারে না, নিজেদের জন্য ভালো কিছুর ব্যবস্থা করে এল, না কপালে পেরেক ঠুকে দিয়ে এল।
প্রাচীন ঐতিহাসিক নগর ঢাকাতেই বহু ঐতিহাসিক জনসভা হয়েছে গত ১১০ বছরে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তায় হয়ে গেল সর্বশেষ দুই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ। ব্রিটিশ যুগে খুব বড় জনসভা হতো করোনেশন পার্কে, বুড়িগঙ্গার তীরে। সদরঘাটের সেই পার্ক এখন উধাও হয়ে গেছে। এখন সেখানে মার্কেট প্রভৃতি। গান্ধীজিও করোনেশনে বক্তৃতা করেছেন। মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলীরাও করেছেন, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ বসুও করেছেন। সেকালে কিছু জনসভা হতো ভিক্টোরিয়া পার্ক বা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে বড় জনসভাটি হয় রেসকোর্স ময়দানে, এখন যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ওই জনসভায়ই পাকিস্তানের ললাটে পেরেক ঠুকে দিয়ে যান। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যও নির্ধারিত হয়ে যায়। পাকিস্তান আমলে বড় বড় জনসভা হতো আরমানিটোলা মাঠে, গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে এবং পল্টন ময়দানে। জীবনে প্রথম সবচেয়ে বড় যে জনসভাটিতে আমি উপস্থিত ছিলাম, সেটি ১৯৫৬-তে। ঢাকা স্টেডিয়ামের সেই সভায় চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই ভাষণ দেন। মঞ্চে ছিলেন আর দুজন নায়ক—প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
জনসভা করা কোনো ছেলেখেলা নয়। জনসভার আয়োজন করা একধরনের আর্টও বটে। নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করতে যে নৈপুণ্যের দরকার, জনসভা আয়োজন করা তার চেয়ে কম দক্ষতায় সম্ভব নয়। নেতা জনসভার স্থান, তারিখ ও সময় ঘোষণা করেই খালাস। পরের দায়িত্ব অন্য মাঝারি নেতা ও কর্মীদের। দক্ষতার সঙ্গে জনসভার ব্যবস্থা করতে করতেই অনেক পেশিবহুল কর্মী নেতা হয়ে ওঠেন।
প্রথম হলো জনসভার প্রচারের ব্যবস্থা করা। সে জন্য মাইকসহ ঘোষণাকারী ভাড়া করা হয়। জনসভার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে পাড়া-মহল্লার মানুষের দুপুরের ঘুম হারাম। বিকট জোরে মাইকে ঘোষিত হতো: ভাই সব, আগামী ২০ মার্চ রোজ মঙ্গলবার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বি-রা-ট জনসভা। প্রধান অতিথি হিসেবে ওই সভায় গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিবেন বাংলার গণমানুষের নেতা, অমুক আন্দোলনের মহান রূপকার, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের নয়নের মণি, জনগণের অধিকার আদায়ে আপসহীন কণ্ঠ ইত্যাদি ইত্যাদি...জাতীয় নাজাত পার্টির চেয়ারম্যান হিম্মত আলী তালুকদার। বক্তাদের বিশেষণ প্রভৃতি বলা যদি শুরু হতো পুরানা পল্টন থেকে, তাদের নামটি ঘোষিত হতো ফকিরাপুল বাজারে গিয়ে।
বাংলার মাটিতে সবশেষ দুটি মহাসমাবেশে যোগ না দিয়ে ঘরে বসেই উপভোগ করেছি সাত দিন ধরে। গত সপ্তাহের কথা। জীবনের বৃহত্তম জনসভাটিতে যোগ দিই আজ থেকে ৪১ বছর ১৩ দিন আগে। লাখ লাখ মানুষ রেসকোর্স ও তার আশপাশের রাস্তায়। কাউকেই গলায় গামছা দিয়ে বাড়ি থেকে টেনে আনা হয়নি। সেকালে বড় বাসও ছিল না। তাই বাস ভাড়া করার উপায় ছিল না লোক আনতে। চাররঙা পোস্টার ছিল না। ব্যানার-ফেস্টুন ছিল খুবই সামান্য। নানা কথা লেখা গেঞ্জি গায়ে দেওয়া শ্রোতাও ছিল না।
১৫ বছর যাবৎ যত জনসভা/মহাসমাবেশ হচ্ছে, তার প্রতিটি ‘স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা’। নেতাদের বক্তৃতার ভাষাও অনবদ্য। সংগত কারণে প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করা দোষের নয়। খিস্তিখেউড় কত প্রকার, তা জনসভায় গেলে শোনা যায়। অংশবিশেষ শোনা যায় টিভির পর্দায়। একালে নেতারা ভাষণ দেন জেম্স জয়েস, ভার্জিনিয়া উল্ফ বা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর চেতনাপ্রবাহ রীতিতে। কী বলছেন তাঁরাও জানেন না, শ্রোতারাও বোঝে না। কেন তাঁরা অমন ভাষা ব্যবহার করেন, তা মনোবিশ্লেষকেরা ভালো বলতে পারবেন।
বাংলার মাটিতে গত ১২ মার্চের মহাসমাবেশটি ছিল মানবেতিহাসের এক অভূতপূর্ণ সমাবেশ। মহাসমাবেশে কী ঘটবে তা রাষ্ট্রের মহাব্যবস্থাপকেরা অলৌকিকভাবে মাস দেড়েক আগেই জেনে যান। আমাদের সরকারি দলগুলোর নেতারা, পুলিশ-গোয়েন্দারা ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা সবই জানেন। যা ঘটে যায়, সে সম্পর্কে তাঁরা নীরব। তারস্বরে বলা হতে লাগল, ওই দিন অঘটন ঘটবে, নাশকতা হবে। তাই মানুষের ‘জানমাল’ বাঁচাতে মহাসমাবেশের দুই-তিন দিন আগেই বন্ধ রইল ঢাকামুখী কিছু ট্রেন। কারণ, ট্রেন চললে নাশকতাপন্থীরা উড়িয়ে দিতে পারে। বন্ধ রাখা হলো বাসসহ সড়ক পরিবহন। বাস চললে তা পুড়িয়ে দিতে পারে। সদরঘাটের ত্রিসীমানায় আসতে পারল না লঞ্চ-স্টিমার। ‘ওরা’ ডুবিয়ে দিতে পারে। যাঁরা কোনো রকমে দক্ষিণ বাংলা থেকে এসেছিলেন, তাঁরা আটকে রইলেন বুড়িগঙ্গার পচা পানিতে। যাঁরা নৌকায় নামার চেষ্টা করলেন, তাঁদের অনেকের পিঠে পড়ল লাঠির বাড়ি। পুলিশকে সহযোগিতার জন্য ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ও নদীর মধ্যে ছিলেন সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক।
মহাজোট সরকার রবিঠাকুরের অতি ভক্ত। তাই সরকার ও গোয়েন্দারা জনগণের উদ্দেশে বললেন: ‘ওগো আজ তোরা যাসেন ঘরের বাহিরে।’ মানুষের যাতায়াতের সব পথ বন্ধ রইল। কিন্তু তার পরও দেখা গেল মহাসমাবেশের দিন নয়াপল্টনে ‘তিল ঠাঁই আর নাই রে’।
প্রজাতন্ত্রের ম্যানেজাররা বুঝতে চেষ্টা করলেন না, রাজধানীতে মানুষ সুষ্ঠু জনসভায় যোগ দিতে আসে না। এখানে জীবিকাপ্রত্যাশী চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আসেন, ব্যবসার জন্য আসেন, চিকিৎসার জন্য আসেন, মরণাপন্ন রোগীকে দেখতে আসেন, প্রেমপিরিত করতেও আসেন। তাঁদের যাতায়াতে বাধা দেওয়া মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সমাবেশকে টিভি চ্যানেলে প্রচার করতে বাধা দেওয়া মতপ্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ শুধু নয়, সংবিধানের ৩৬, ৩৭ এবং ৩৯ অনুচ্ছেদকে অস্বীকার করা।
১৪ মার্চের সমাবেশটি ছিল ১২ তারিখের সমাবেশের জবাব। ঢাকায় আসার সব দরজা খুলে দেওয়া হলো। শুধু ঢাকার অল্প মানুষে কুলাবে না বলে শত শত বাসে বাইরে থেকে আনা হলো লোক। সরকারি অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেওয়া হলো সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা। সম্ভব হলে সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের রোগীদেরও অ্যাম্বুলেন্স ও স্ট্রেচারে করে আনা হতো বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে।
জনসভাকে মনে হয় রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের দেশে এখন তা অর্থনীতির বিষয়ও। জনসভা রাখছে মৃতপ্রায় অর্থনীতিকে সচল। মহাসমাবেশ নিয়েও একদিন গবেষণা হবে। বাংলা বিভাগ করবে ‘বাংলা কবিতায় জনসভা প্রসঙ্গ’ অথবা ‘জনসভা বাঙালি নেতাদের ভাষা প্রয়োগ: একটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’। ইতিহাস বিভাগ বসে থাকবে না। তারা করবে ‘বাঙালির অধঃপতনের জনসভার ভূমিকা’। অর্থনীতি বিভাগকে করতে হবে বহু গবেষণা। মাইক ভাড়ায় কত টাকা আয়-ব্যয়। মঞ্চ বানাতে বাঁশ, তক্তা, কাপড়, পেরেক, গজাল, দড়ি প্রভৃতি কেনাকাটা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, পরিবহন সেক্টরে মহাসভার প্রভাব। ক্লিনিকের মালিকদের কথাও আসবে। তাঁদের এক-একটি সমাবেশের আগে-পরে কেমন আয় হয়। রুম ভাড়া, ডাক্তারের ফি, ব্যান্ডেজ, কটন, ওষুধ প্রভৃতিতে টাকার লেনদেন অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
ছাপাখানার আয় তো সীমাহীন। চাররঙা পোস্টার বিদেশি কাগজে ছাপা। পোস্টার সাঁটাতে শত শত শ্রমিক নিয়োগ। এ কালের জনসভায় বাঁশের ভূমিকাই বেশি। মঞ্চ বানানো থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের সদ্ব্যবহারের জন্য উজাড় হয় বাঁশঝাড়। তবে প্রধান বিষয় হলো মহাসমাবেশ উপলক্ষে চাঁদা সংগ্রহ। সমাবেশ করতে যদি ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ, চাঁদা ওঠে পাঁচ কোটি।
মহাসমাবেশ নিয়ে উপাখ্যান লেখা যায়, কড়ি দিয়ে কিনলাম-এর মতো উপন্যাস লেখা যায়, গবেষণা করা যায়; কিন্তু এ কথাও কবুল করতে হবে, অর্থপূর্ণ একটি জনসভাই একটি জাতির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে। সে দৃষ্টান্ত বাঙালির ইতিহাসে আছে। অন্যদিকে অর্থহীন মহাসমাবেশ জনগণের জীবনে নিয়ে আসে মহা দুর্দশা।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.