এবার মার্চেই খরার আশঙ্কা- বৈরী আবহাওয়া by মহসিন চৌধুরী

এবার গ্রীষ্ম কাটতে পারে আবহাওয়ার বৈরী আচরণের মধ্য দিয়ে। গ্রীষ্মের খরতাপ চলতি মার্চেই অনুভূত হতে পারে। খরার মুখে পড়তে পারে সারাদেশ। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ছাড়িয়ে যেতে পারে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
প্রাক গ্রীষ্মের মার্চ মাসেই সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া তপ্ত হয়ে ওঠার পূর্ভাবাস দিয়েছেন ঝড় সতকর্ীকরণ কেন্দ্র। তিন মাস ও মাসব্যাপী দীর্ঘমেয়াদী পূর্ভাবাসে আবহাওয়াবিদরা এমন আশঙ্কা করেছেন। এ ছাড়া আগামী এপ্রিলেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে। চলতি মাসেই দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহ ছাড়াও সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এ ছাড়া মার্চেই বেশ কয়েকটি ঝড়ঝঞ্ঝা ও কালবৈশাখী আঘাত হানারও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই গ্রীষ্মের আগেই আবহাওয়া এমন বৈরী আচরণের মুখে পড়েছে।
ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মাসব্যাপী দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দু'থেকে তিনটি কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে। এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী থেকে ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যনত্ম উন্নীত হতে পারে। সাগরে সৃষ্টি হতে পারে একটি নিম্নচাপ। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ছাড়াও অস্বাভাবিক বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া তপ্ত হয়ে উঠবে। এ মাসে সিলেটে সর্বোচ্চ ১৩০ মি.মি. বৃষ্টিপাত হতে পারে। অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বৃষ্টি হবে অনিয়মিত। এক থেকে দু'দিন বৃষ্টিময় দিন থাকতে পারে।
জলবায়ু ও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে গবেষণারত আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র অনেকেেত্র অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। গত বর্ষায় শেষ মুহূর্ত পর্যনত্ম কেটেছিল খরায়। তবে শেষ কয়েকদিনে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পুষিয়ে দেয়। কিন্তু বৃষ্টিহীনতার কারণে মৎস্য উৎপাদনে যে সঙ্কট সৃষ্টি করেছিল তা আরও পুষিয়ে যায়নি। পরবর্তীতে শীতেও ছিল আবহাওয়া বৈরী আচরণ। তবে জানুয়ারিতে পশ্চিমা লঘুচাপ দুর্বল ছিল। পুবালী লঘুচাপের সঙ্গে সংযোগ না ঘটায় জানুয়ারিতে ছয় বিভাগীয় শহরে গড়ে স্বাভাবিক ১০ মি.মি. বৃষ্টির কথা থাকলেও বাসত্মবে হয়নি। বরং বাতাসের নিচু সত্মরে জলীয়বাষ্প বেশি থাকায় শেষ জানুয়ারিতে কুয়াশার প্রাদুর্ভাব ছিল। সূর্য কিরণ জলীয় বাষ্পের কারণে সূর্যকিরণ শীতল হয়ে পড়ে। ফলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়। ফেব্রম্নয়ারিতেও আবহাওয়ার ছিল বৈরী আচরণ। মাসের শুরম্নতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হঠাৎ করে নেমে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল। মধ্য ফেব্রম্নয়ারি থেকেই গরমের দাপট শুরম্ন হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। আশানুরূপ বৃষ্টিপাতও হয়নি। কম বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। মাসের শেষ কয়েকদিনে বেশ কয়েক দফা ঝড়ো বৃষ্টিও হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণে ওজন সত্মরের অস্বাভাবিক তির ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। নিয়মিত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। আবহাওয়ার কোন ধারাবাহিকতা নেই। মরম্ন অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী।

No comments

Powered by Blogger.