কোন পথে পিপিপি by রাশেদ রাব্বি

২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়টি ছিল পিপিপি বা পাবলিক এ্যান্ড প্রাইভেট পার্টনারশিপ। মাননীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষিত পিপিপি শুধু চমকই সৃষ্টি করেনি, দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চারও করেছিল।
সরকারী- বেসরকারী খাতের সমন্বয়ে দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন সাধন। বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০১৩ সালে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করার লৰ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এ লৰ্যমাত্রা অর্জনে নিয়মিত বিনিয়োগের বাইরেও অনত্মত ২৮ বিলিয়ন অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন; যা সরকারের পৰে যোগান দেয়া এক প্রকার অসম্ভব। এজন্য বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণে ব্যক্তি খাতকে সম্পৃক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। ঘোষিত পিপিপি উদ্যোগে বাসত্মবায়নযোগ্য প্রকল্পের একটি প্রাথমিক তালিকাও প্রণয়ন করা হয়েছিল। যেখানে যোগাযোগ, বিদু্যত ও জ্বালানি, নৌ-পরিবহন, শিৰা প্রকল্পের আওতাধীন ছিল। এর মধ্যে ৩০২ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে নির্মাণ, ২৮০ কোটি ডলার ব্যয়ে ঢাকা মহানগর ঘিরে আকাশ-রেল নির্মাণ, ৩১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ঢাকা মহানগরে পাতাল রেলপথ নির্মাণ, ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ঢাকা মহানগর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ৪৫০ মেগাওয়াট ৰমতাসম্পন্ন ৪টি বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণ, ১ হাজার ৩৮৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। এছাড়াও মানসম্পন্ন হাসপাতাল, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। প্রাথমিক সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা প্রণয়নের পরে পিপিপি বাসত্মবায়নে নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়। এ সময় অর্থনীতিবিদগণও পিপিপি বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে একটি জাতীয় কমিটিও করার কথা হয়। যদিও সরকারের এ উদ্যোগকে নেতিবাচকভাবে না নিলেও বাসত্মবায়ন করা খুব কঠিন হবে বলে জানায় আইসিসিবি। এৰেত্রে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের পৰ থেকে পাঁচ ধরনের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার সুপারিশ দিয়েছে। আইসিসিবি মনে করে রাজনৈতিক এবং আমলাতান্ত্রিক, আইনকানুন এবং বিধিবিধান, অর্থনৈতিক, পদ্ধতিগত এবং বাসত্মবায়ন পদ্ধতি এ বিষয়গুলো সরকার এবং সংশিস্নষ্ট সকলকেই যথেষ্ট গুরম্নত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং নিরাপত্তার বিবর্তনও জরম্নরী। নিরাপত্তা বলতে শারীরিক বা মানসিক নিরাপত্তা নয়। নিরাপত্তায় অবশ্যই আর্থিক, মুনাফা বিনিয়োগের নিরাপত্তা, এমনকি শ্রমের নিরাপত্তাও অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পিপিপি বাসত্মবায়ন করতে পারলে রাষ্ট্রীয় সার্বিক উন্নয়ন দ্রম্নততার সঙ্গে বাসত্মবায়ন সম্ভব। কিন্তু বেশিরভাগ ৰেত্রেই দেখা যায় অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতির তীব্রতা থাকায় এবং বিনিয়োগ ঝুঁকি সর্বোচ্চ থাকায় এ ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাসত্মবায়ন এক প্রকার দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই পাবলিক ও প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম বাসত্মবায়নের মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে সফলতার সাৰর রাখতে সৰম হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের দিকে তাকালেই দেখা যায়, তারা এ ধরনের প্রকল্প বাসত্মবায়নের মাধ্যমে দেশে অনেক বড় বড় অবকাঠামো, স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাকে দ্রম্নততর করতে পেরেছে। অবশ্য তাদের কঠোর নীতিমালা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, সেই সঙ্গে উন্নয়নের প্রতি তীব্র আকাঙ্ৰা কাজকে দ্রম্নততর ও সহজ করে দিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, চেক প্রজাতন্ত্র, গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি এসব উন্নত রাষ্ট্রে পিপিপির জন্য গঠিত হয়েছিল বিশেষ সেল। বিশেষজ্ঞদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসব রাষ্ট্র যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশকে নিয়ে গেছে উন্নতির চরম শিখরে। আমাদের দেশেও এবারের বাজেটের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় ছিল, মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় পিপিপির ঘোষণা এবং বাসত্মবায়নের কথা। তিনি তাঁর বিচৰণতা, অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পিপিপি হতে পারে অন্যতম উপায়। কেননা ঘাটতি বাজেট বা ঋণ বাজেটের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নসাধন অত্যনত্ম মন্থর গতির হয়ে থাকে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর আনত্মরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থবছরের শেষ প্রানত্মে এসে দেখা গেল কাগজপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে, বাসত্মবায়নের মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী নিজেই ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই পিপিপি বাসত্মবায়ন করা সম্ভব হলো না।

No comments

Powered by Blogger.