ভারতের অর্থনীতি উন্নয়নশীল থেকে প্রথম বিশ্বে- কুন্তল রায়

'আগামী চার বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হবে। আমরা প্রবৃদ্ধির হারকে অত্যন্ত দ্রুত দুই সংখ্যায় পরিণত করতে চাই'_অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর এই বক্তব্যই প্রমাণ করে ভারত সরকার তাদের প্রবৃদ্ধির হারকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।
উচ্চাভিলাষী মনে হলেও এটাই সত্য যে ভারত পরিকল্পনা করছে তাদের প্রবৃদ্ধির হারকে চীনের ওপরে নিয়ে যাওয়ার। উৎপাদন ও রফতানি প্রক্রিয়াকে গতিবৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব উত্তরণে বদ্ধপরিকর। ভারতের অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরাও মনে করেন, ভারতের সুবিশাল কর্মৰম জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে উৎপানদশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো কঠিন কোন কাজ হবে না। কিন্তু সমস্যা হলো চীন ও ভারতের ব্যবসায়িক নীতির ভিন্নতা। চীনের উৎপাদনশীলতার সঙ্গে ভারতের বড় পার্থক্য হলো এখানে ছোট, মাঝারি বা বড় শিল্প কারখানায় আমলা ও সরকারী হসত্মৰেপের প্রবণতা অনেক বেশি। গত পাঁচ বছরে ভারতে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ হলেও অনত্মত ৪৫ কোটি মানুষ দৈনিক ১.২৫ ডলারের কম আয় করে। স্পষ্টতই বণ্টন ব্যবস্থায় ত্রম্নটি ভারতে বিশাল আয় বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তবে ২৬ ফেব্রম্নয়ারি ভারতের নতুন বাজেটের চিত্র সেখানকার ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের ইঙ্গিত বহন করে। সামাজিক প্রোগ্রাম এবং অবকাঠামো নির্মাণই যার মূল লৰ্য। পরবর্তী অর্থবছরে ভারত সরকার সামাজিক প্রকল্পে ৩০০০ কোটি রম্নপি ব্যয় করবে। বাজেটের এই চিত্র বলে দেয় বর্তমান কংগ্রেস সরকার বাজারভিত্তিক নীতি প্রণয়ন এবং সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, ভতর্ুকি প্রদান এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রভৃতি কর্মকা-ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তবে পণ্য রফতানির ৰেত্রে ভারতের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। চীনের ওপর গোটা বিশ্ববাজার যেখানে নির্ভরশীল, সেখানে ভারতের বিশ্ববাজার দখল করা কখনোই সহজ কাজ হবে না। এজন্যই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য ভারত সরকার কৃষকদের ১৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। ধান এবং গম উৎপাদনের ৰেত্রে এই ঋণ সাহায্য গত বছর জাতীয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় এই কৃষকরাই উৎপাদনব্যবস্থার ঢাল হিসেবে কাজ করেছে বলে মনত্মব্য করেন জওহরলাল নেহরম্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিমাংশু। গ্রামীণ জনগণের আয় না বাড়লে প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়বে মনে করে হিমাংশু বলেন, আমাদের ৬০ শতাংশ জনগণ এখনও কৃষিতে নির্ভর। এমনকি কর্পোরেট সেক্টরও অভ্যনত্মরীণ উৎপাদনের ওপর গুরম্নত্বারোপ করে গ্রামীণ উৎপাদশীলতা বৃদ্ধি করতে চাইছে। ভারতে গ্রামীণ উৎপাদনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য আগামী দশকে বিদু্যৎ উৎপাদন দ্বিগুণ করতে প্রায় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। এছাড়া তাদের রাসত্মা-ঘাট, রেলওয়ে, বিমান ও নৌবন্দর এবং সেচ প্রকল্প বৃদ্ধি করতে হবে। এ পরিমাণ অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করাই হবে ভারতের জন্য প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। দিলস্নী স্কুল অব ইকোনমিকসের জরিপে দেখা গেছে, ১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যনত্ম ভারতে ৮৯৪টি অবকাঠামো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ প্রকল্প বিদু্যত খাতে এবং ১০০ ভাগ রেলওয়ে, স্বাস্থ্য ও পরিবার খাতে। সরকারী প্রশাসনের দুর্বলতাই এসব প্রকল্প ঠিক সময়ে সম্পাদন না হওয়ার কারণ। তবে প্রণব মুখাজর্ীর সাম্প্রতিক বাজেট নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী থেকে শুরম্ন করে বিশেস্নষকরা মনে করছেন, সরকার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উচ্চাভিলাষী পদৰেপ নিচ্ছে। এখন এটাই দেখার বিষয় কংগ্রেস সরকার তাদের লৰ্য অর্জনের জন্য গৃহীত পদৰেপ বাসত্মবায়নে কতখানি মনযোগী হয়।

No comments

Powered by Blogger.