আমন সংগ্রহ অভিযানে গতি নেই, টার্গেট পূরণে শঙ্কা- তিন লাখ টনের বিপরীতে এ পর্যন্ত ৮৮ হাজার টন সংগ্রহ by তৌহিদুর রহমান

 সরকারের আমন সংগ্রহ অভিযানে গতি নেই। ধীর গতিতে চলছে আমন সংগ্রহ অভিযান। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই আমন মৌসুমে তিন মাসে তিন লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৯০ হাজার টন চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদফতর। চলতি মাসের মধ্যে আরও দুই লাখ ১০ টনের বেশি চাল সংগ্রহ করতে হবে। গত দুই মাসে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তবে খাদ্য অধিদফতরের দাবি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিন লাখ টন চাল সংগ্রহ করা হবে।
চলতি আমন মৌসুমে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হয়। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত চাল কিনবে সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য অধিদফতর ৮৮ হাজার ১২৮ টন চাল সংগ্রহ করেছে। এই সংগ্রহের পরিমাণ মোট লক্ষ্যমাত্রারা মাত্র ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ চাল এখনও সংগ্রহ করা হয়নি। সূত্র মতে, তিন লাখ টন চাল সংগ্রহের জন্য মিলারদের সঙ্গে এখনও সব চাল কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। মিলারদের সঙ্গে মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৭ টন চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। এখনও প্রায় ২৫ হাজার টন চাল সংগ্রহের চুক্তি বাকি রয়েছে। তবে এই চুক্তিও এই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
জানা গেছে, তিন লাখ টন চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হয়। এই চুক্তির পরে মিলাররা গুদামে নকট চাল সরবরাহ করে। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝি শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে বিঘœ ঘটে। এই সময়ে অনেক মিলার চাল সরবরাহ করতে পারেনি। সে কারণে চাল সংগ্রহ কাজে বিলম্ব হয়েছে।
অপরদিকে চালের দাম বাড়ায় মিলাররা এখন চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। কেননা সরকার থেকে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি করা যাচ্ছে। তাই মিলাররা এখন সরকারকে না দিয়ে বাজারে চাল বিক্রির দিকে ঝুঁকছে।
তিন লাখ টন চাল সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক বদরুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার থেকে তিন লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল সংগ্রহ অভিযান চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তিন লাখ টন চাল সংগ্রহ করা হবে। তবে চাল সংগ্রহ অভিযানে মাত্র ৯০ হাজার টন সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শৈত্যপ্রবাহের ফলে চাল সংগ্রহ অভিযানে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। তবে ফেব্রুয়ারি মধ্যেই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
গত ২ ডিসেম্বর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে তিন লাখ টন চাল কেনা হবে। এর মধ্যে দুই লাখ ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার টন আতপ চাল। প্রতিকেজি সিদ্ধ চালের দাম ২৬ টাকা এবং প্রতি কেজি আতপ চালের দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সে অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর থেকে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ সংগ্রহ অভিযান চলবে। এ বছরে প্রতিকেজি আমন চাল উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ২৪ টাকা ৭৬ পয়সা।
সরকারের খাদ্য সংগ্রহ বিভাগ জানায়, চলতি আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য মিলারদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মেয়াদ ছিল গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এই সময়ের মধ্যে পৌনে তিন লাখ টন চাল সরবরাহ চুক্তি করা হয়েছে। খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী এই চাল সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়। চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মিলারদের প্রদেয় বস্তার জামানত মূল্য হিসেবে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ৮০ টাকা ও ৮৫ কেজির বস্তাপ্রতি এক শ’ টাকা করে রাখারও নির্দেশনা দেয় অধিদফতর।
আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলা থেকে ১১ হাজার ৯৪৩ টন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা থেকে ১২ হাজার ৭২১ টন, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলা থেকে ৭৪ হাজার ৬৩৪ টন, রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে ৮১ হাজার তিন শ’ টন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে ২২ হাজার ৩৫৭ টন, বরিশালের ৬ জেলা থেকে এক হাজার ৪৫৯ টন, সিলেট বিভাগের ৯ জেলা থেকে এক হাজার ৩২১ টন চাল সংগ্রহ করা হবে।
সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ১১৩ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বর্তমান সময় পর্যন্ত ৮৮ হাজার ১২৮ টন আমন সংগ্রহ নিয়ে এই অর্থবছরে মোট চাল সংগ্রহের পরিমাণ ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৪১ টন।
খাদ্য অধিফতর জানায়, সরকারী খাদ্যগুদামে বর্তমানে ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭২ হাজার টন চাল এবং এক লাখ ৮৩ হাজার টন গম। বর্তমানে সরকারী গুদামের মোট ধারণক্ষমতা ১৭ লাখ টন। গুদামের ধারণক্ষমতা সীমিত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার বেশি পরিমাণ ধান-চাল কিনতে পারে না। ফলে বাজারে খুব বেশি প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না। সরকার কৃষককে উৎসাহ দিতে এবং আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্যশস্য কিনে থাকে। গত দু’বছর বিদেশ থেকে চাল আমদানি না করায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.