শাহবাগ বসন্তের প্রভাব বাংলা একাডেমীতে-বই বিক্রি বেড়েছে- অমর একুশে গ্রন্থমেলা by মোরসালিন মিজান

কিছুদিন আগে কৈশোর পার করেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর এখন ভরা যৌবন। পাঠক লেখক প্রকাশকের ভরপুর উপস্থিতি মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মুখড়িত।
প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। বিক্রিও বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। তবে মেলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে শুরু হওয়া আন্দোলন। নতুন এই আন্দোলনের নানা প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে। বিশেষ করে লিটলম্যাগ চত্বরে প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে শহবাগের প্রতিধ্বনি। তরুণ লেখক কবিরা একাত্তরের ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন। মেলা শেষে সকলেই চলে যাচ্ছেন শাহবাগ। এখানেই শেষ নয়, মেলায় আসা শিশুরাও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবি করেছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত শিশু প্রহরে এ দাবি জানায় তারা। শনিবারও এসেছিল একদল শিশু। ‘শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা। সংখ্যায় তারা ছিল ২৫০ জন। প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই অনুষ্ঠিত হয় এদিন।
১৬২ নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার নবম দিনেও মেলায় এসেছে বিপুল পরিমাণ নতুন বই। শুধু বাংলা একাডেমীতে জমা পড়া বইয়ের সংখ্যা ছিল ১৬২। এগুলোর মধ্যে উপন্যাস ছিল ৩০টি। কাব্যগ্রন্থ ২৮টি। গল্পগ্রন্থ ছিল ১৫টি। ১৬টি ছিল প্রবন্ধের বই। এসবের বাইরে গবেষণা ২ টি, ছড়া ১০ টি, শিশুতোষ ৫টি, জীবনী ৩ টি, মুক্তিযুদ্ধ ৪টি, নাটক ২টি, বিজ্ঞান ৪টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস ৪টি, চিঃ/স্বাস্থ্য ৩টি, রম্য/ধাঁধা ৪টি, অনুবাদ ৩টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য বিষয়ে ২৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এদিন মেলার নজরুল মঞ্চে ৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়।
মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবর্ষে অদ্বৈত মল্লবর্মণ এবং আমাদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক শান্তনু কায়সার। আলোচনায় অংশ নেন কথাশিল্পী হরিশংকর জলদাস ও অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা সাহিত্যে নিম্নবর্গের মানুষের বিশ্বস্ত কথাকার ছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তিতাস পাড়ের অন্ত্যজ মালো জীবনের সংগ্রামী স্বরূপ বাঙময় হয়ে উঠেছে তার সৃষ্টিতে, যা ঋত্বিক ঘটক সেলুলয়েডের ফ্রেমে বেঁধে আমাদের উপহার দিয়েছেন নতুনতর ব্যঞ্জনায়। কেবল তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাস নয়, বরং তাঁর অন্যান্য উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদির মধ্যে দলিত মানুষের স্বর ভাষা পেয়েছে। অদ্বৈত-পাঠ আমাদের মূলত সমৃদ্ধ প্রাচ্যসাহিত্য আস্বাদনের সুযোগ করে দেয়। আমাদের অখ- আত্মপরিচয়ের সন্ধান পেতে অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্তিকালগ্ন সৃষ্টির কাছে ফিরে যেতে হবে। আলোচকরা বলেন, বাংলা সাহিত্যে অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্থায়ী অবদান রেখে গেছেন। শুধু বিষয় নয়; কথাসাহিত্যিক কাঠামো ও ভাষারীতির দিক থেকেও তিনি বিশিষ্টতার দাবি রাখেন। তাঁর কথাসাহিত্যে একদিকে যেমন বাংলার তৃণমূল সমাজকাঠামো উঠে এসেছে, তেমনি পৃথিবীর দিকে দিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিষয়ও তাঁর উপজীব্য হয়েছে। তাঁরা বলেন, অদ্বৈতের স্বপ্নের জাতবৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের মধ্য দিয়েই তাঁর প্রতি নিবেদন করা যাবে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা।
সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন, ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর অমর কথাকার অদ্বৈত মল্লবর্মণকে তাঁর জন্মশতবর্ষে স্মরণের মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমী একটি মহৎ কাজ সম্পাদন করেছে। অদ্বৈত নিহায়ত কল্পনাচারী শিল্পী ছিলেন না; সমাজ-বিশ্লেষণে বিজ্ঞানমনস্কতা ও বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ তাঁর সাহিত্যকর্মকে অমরত্ব দান করেছে।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন নীহার দে আকাশের পরিচালনায় সুরের আলো সঙ্গীত একাডেমী এবং মোহাম্মদ আলী হায়দারের নির্দেশনায় বটতলা পরিবেশন করে সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত নাটক ‘খনা’।
আজকের অনুষ্ঠান ॥ আজ রবিবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন এ. এম মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফজলুল আলম, আবদুস সেলিম এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করবেন কবি বেলাল চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.