হংকং অভিমুখে আশি হাজার গৃহকর্মী

বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির এক নতুন দ্বার উন্মেচিত হয়েছে। যখন জনশক্তি রফতানির প্রচলিত দেশগুলোয় দ্বার প্রায় রূদ্ধ তখন হংকংয়ে আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় আশি হাজার গৃহকর্মী নেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
হংকং বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নেয়ার ব্যাপারে খূবই আগ্রহী। খবরটি আমাদের দেশের জন্য সুখবরই বটে। নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আশাজাগানিয়া। বাংলাদেশের অনেক নারী শ্রমিকই বিদেশে কাজ করে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিসহ নিজ নিজ পরিবারকে সচ্ছল রাখতে ভূমিকা রাখছে। তবে নারী শ্রমিক প্রেরণের হার অত্যন্ত কম। এই ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক বাধা যেমন অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে তেমনি বিদেশে নারীর নিরাপত্তাসহ বিভিন্নমুখী সমস্যা ও সরকারী উদ্যোগের অভাব অনেকটাই দায়ী। গৃহকর্মী বা শ্রমিক হিসেবে বিদেশে বাংলাদেশের নারীরা সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু দালালের খপ্পওে পরে অনেক নারী শ্রমিককেই বিদেশের মাটিতে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। এমনকি কারও কারও জায়গা হচ্ছে পতিতালয়গুলোতে। এই সব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন এনজিও কাজ করলেও প্রতিকারের তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
তবে এবার নারী শ্রমিকদের হংকংয়ে প্রেরণ করা হবে সরকারী তত্ত্বাবধানে। আর এর ফলে নারী শ্রমিকদের কোন দালালের কবলে পড়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করতে হবে না। সরকারীভাবে নিবন্ধন করেই নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ হংকং গমনেচ্ছুদের অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে এর ফলে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মাঝে স্বচ্ছতা থাকবে। কেননা নিবন্ধনের পর লটারীর মাধ্যমে কর্মী নির্বাচন করা হবে। হংকং রিক্রুটিং এজেন্সির চৌদ্দ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এই রকমই এক সিদ্ধান্ত হয়। মালয়েশিয়ার মতোই সরকারীভাবে নিবন্ধন করে কর্মী পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের দিক থেকে কোন খরচই করতে হবে না। তাছাড়া সরকারী খরচে নির্বাচিত নারীদের দুই মাসের ট্রেনিং দেয়া হবে; যা নারী গৃহকর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হবে। হংকংয়ে গমনকারী নারী গৃহকর্মীদের সর্বনিম্ন বেতনও নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন ৪৯০ ইউএস ডলার (প্রায় ৪০ হাজার টাকা) হবে।
হংকং যাওয়ার বিমান ভাড়ার আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা পরবর্তীতে বেতন থেকে কিস্তিতে কেটে নেয়া হবে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে হংকংয়ে গৃহকর্মী হিসেবে গমেনেচ্ছুদের তেমন কোন খরচ করতে হচ্ছে না। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের জন্য এটি সুখবর। কিন্তু হংকংয়ে নারী শ্রমিকদের পাঠানোর প্রক্রিয়া কতটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হয় এটাই এখন দেখার বিষয়। যদি ঘোষিত প্রক্রিয়ানুযায়ী গৃহকর্মী পাঠানো যায় তাহলে আরও অনেক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান যেমন হবে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও বাড়বে নারীর অবদান।
আনোয়ার হোসেন

No comments

Powered by Blogger.