সিরিয়ায় ইসরায়েলের বিমান হামলা

সিরিয়ার একটি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিমানবিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রের একটি গাড়িবহরের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এসব হামলায় মারা গেছে দুইজন। আহত হয়েছে পাঁচজন।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, অস্ত্রের চালানটি লেবাননের কট্টর শিয়াপন্থী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কাছে যাচ্ছিল। হামলার আগে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছিল বলেও স্বীকার করেছে ওয়াশিংটন। তবে হামলার ব্যাপারে মুখ খোলেনি ইসরায়েল।
তবে সিরীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত মঙ্গলবার রাতে কেবল রাজধানী দামেস্কের উত্তর-পশ্চিমে জামরায়ায় অবস্থিত একটি 'সামরিক গবেষণাকেন্দ্রে' হামলা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনেও বুধবার এ হামলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। সিরিয়া-লেবানন সীমান্ত এলাকায় অস্ত্রবাহী গাড়িবহরে হামলার কথা অস্বীকার করেছে তারা।
সিরিয়ার দাবি, ইসরায়েলের হামলায় দুইজন শ্রমিক মারা গেছে। আহত হয়েছে অন্তত পাঁচজন। তুরস্ক ও কাতারের সঙ্গে ইসরায়েল জোট বেঁধে স্থানীয় 'সন্ত্রাসীদের' মদদ দিচ্ছে উল্লেখ করে দামেস্ক জানিয়েছে, এ ধরনের 'অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের' মাধ্যমে সিরিয়াকে দুর্বল করা যাবে না।
রাশিয়া এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে। কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে 'উসকানি ছাড়া' এ ধরনের হামলার নিন্দা জানায় তারা। হিজবুল্লাহও গতকাল ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত গোষ্ঠীটির দাবি, 'আরব বিশ্ব ও মুসলমানদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে' প্রতিহত করতেই এ হামলা করা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কাছে স্বীকার করেছে, হামলার ব্যাপারে তাদের আগেই জানানো হয়েছিল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি অস্ত্রবাহী গাড়িবহরেও হামলা হয়েছে। আরেক প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, দুই জায়গায়ই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন এক কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানান, তাঁদের ধারণা, ওই গাড়িবহরে রাশিয়ার তৈরি এসএ-১৭ মডেলের বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, 'এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।'
২০০৭ সালে সিরিয়ার আরেকটি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। জাতিসংঘ মনে করত, ওই স্থাপনায় পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চলছিল। যদিও সিরিয়া ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর সিরিয়ায় এটাই ইসরায়েলের প্রথম বিমান হামলা। আর এটি এমন সময় ঘটল, যখন ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা শাখার পরিচালক আভিভ কোচাভি ওয়াশিংটন সফর করছেন। গত মঙ্গলবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মার্টিন ডেম্পসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গোয়েন্দা শাখার প্রধানের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা আছে।
লেবাননের সামরিক বাহিনী বুধবার জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতভর ইসরায়েলি কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে লেবাননের আকাশে ঢুকে চক্কর দিয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকটি বিমান মাটির খুব কাছ দিয়েও উড়েছে। তবে বিমান হামলার ব্যাপারে কিছু জানায়নি তারা।
হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলের চুপ থাকা প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসের মত হলো, এই মৌনতা তেল আবিবের কৌশলগত অবস্থান। সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রসহ অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম স্থানান্তরিত হতে পারে_এমন আশঙ্কায় কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিরাপত্তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন। তখন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, হিজবুল্লাহর হাতে অস্ত্র পেঁৗছানোর চেষ্টা হলে তার উচিত জবাব দেওয়া হবে। গত দুই দিনে ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্যাস-মাস্কও বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত রবিবার উত্তরাঞ্চলের হাইফাতে 'আইরন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়োজিত করেছে ইসরায়েল। এই হাইফাতেই ২০০৬ সালে লেবাননের সঙ্গে দেশটির যুদ্ধে ব্যাপক বোমা হামলা হয়েছিল।
এদিকে সৌদি পত্রিকা আল-ওয়াতান গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গত বছরের গোড়ার দিকে হিজবুল্লাহর কাছে দুই টন মাস্টার্ড গ্যাস পাচার করেছে সিরিয়া।
নাম উল্লেখ না করে আসাদবিরোধী এক সূত্রের বরাত দিয়ে সৌদি রাজতন্ত্রের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত পত্রিকাটি জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ পর্যন্ত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও হিজবুল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছে আসাদ সরকার। সূত্র : এএফপি, এপি।

No comments

Powered by Blogger.