৯ আগস্ট জ্বালানি দিবস ঘোষণার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

 স্বাধীন দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপকে স্মরণীয় করে রাখতে ৯ আগস্টকে জ্বালানি দিবস হিসাবে ঘোষণার প্রস্তাব করেছে সংসদীয় কমিটি।
১৯৭৫ সালের ওই দিনে শেল কোম্পানির কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে প্রথমবারের মতো মালিকানা পায় বাংলাদেশ। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার মাত্র ৬ দিন আগে শেলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সূত্র জানায়, অনুমিত হিসাব কমিটির এক বৈঠকে ৯ আগস্টকে জ্বালানি দিবস হিসাবে ঘোষণার প্রস্তাব করেন কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান।
এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনাটি কারও জানা ছিল না। ঘটনাটি জানার পর কমিটির তরফ থেকে ৯ আগস্টকে এনার্জি ডে বা জ্বালানি দিবস হিসাবে ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়। আমরা প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছি। মন্ত্রণালয় তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরই তা দিবস হিসাবে পালনের স্বীকৃতি পাবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও বিপ্লবাত্মক সিদ্ধান্তকে স্মরণীয় ও জনসম্মুখে আনার জন্য এ দিনটিকে জ্বালানি দিবস হিসাবে পালন করা উচিত।
সূত্র মতে, কমিটি বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিটির এক বৈঠকে বলা হয়, যে কোনভাবে দেশকে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে প্রাণে বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন। যে কারণে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তাঁর স্বল্পতম শাসনামলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও পরিচালনা করেছিলেন। যার সুদূরপ্রসারী ফল আজও আমরা ভোগ করতে পারছি। কিন্তু জাতির পিতার মৃত্যুর পর জ্বালানি বিষয়ে তাঁর প্রদর্শিত পথ থেকে সরে আসার কারণে দেশ আজ জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে। বিদু্যত ও সার কারখানাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বন্ধ হয়েছে। বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
বৈঠকে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট একটি ঐতিহাসিক দিন। ওই দিনে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুদূরপ্রসারী ও অসীম দূরদৃষ্টিতে মাত্র ১৭ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বিদেশী প্রতিষ্ঠান শেল কোম্পানির কাছ থেকে সমসত্ম শেয়ার কিনে নেন। ওই দিন এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাৰরিত হয়। ওই চুক্তির ফলে লিজে থাকা ৫টি গ্যাসৰেত্র হবিগঞ্জ, তিতাস, বাখরাবাদ, কৈলাসটিলা ও রশিদপুর এবং তিতাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মালিকানা লাভ করে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান আরও বলেন, ওটা ছিল আমাদের কাছে একটি আলাদীনের চেরাগ। সেই সময়ে ওই গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে প্রমাণিত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৩৩৫ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট বা টিসিএফ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি পেট্রোবাংলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত ৩৫ বছরে প্রমাণিত গ্যাস ১৩ দশমিক ৩৩৫ টিসিএফ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ টিসিএফ গ্যাস খরচ হয়েছে। বাকিটাসহ বাঙ্গুরা গ্যাসৰেত্রের পুনর্মূল্যায়নের কারণে কিছুটা বাড়তি গ্যাসসহ মোট প্রমাণিত গ্যাস ৭ দশমিক ২ টিসিএফ ধরা হচ্ছে। এছাড়াও হিসাবে বিবিয়ানার প্রায় সাড়ে ৪ টিসিএফ গ্যাস ধরে দেশে প্রমাণিত ও উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ১১/১২ টিসিএফের কম নয়। ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ও আবাসিক খাতে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেশি বাড়লেও আরও কমপৰে ১০ বছর নিশ্চিন্তে গ্যাস ব্যবহার করা যাবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রমাণযোগ্য গ্যাস উত্তোলনে কোন ধরনের দ্বিধা বিভক্তি না করে এখনই পদৰেপ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.