জনগণ চাইলে সরকার জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করবে সংবাদ সম্মেলনে by হানিফ

 স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে জনমতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন বলে মনে করে শাসক দল আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে সরকারী দলের অবস্থান হচ্ছে- জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। জনগণ চাইলে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা বাস্তবে রূপ দেবে সরকার।
মঙ্গলবার সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের তা-বের পর দেশব্যাপী উগ্র এই সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলটির রাজনীতি বন্ধের প্রবল দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চাইলে সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারী দলের এমন অবস্থান তুলে ধরেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের তা-বের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাহবুব-উল-আলম হানিফ জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি, সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণী-পেশার সর্বস্তরের জনগণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যাপকভাবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
জামায়াত-শিবির সৃষ্ট অস্থিতিশীল অবস্থায় জনগণের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ কিনা- এমন প্রশ্নে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। তারা কঠোর হলে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারত। তাই তারা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে।
বর্তমান সরকারের সময়ে হিযবুত তাহরির মতো ছাত্রশিবিরকে কেন নিষিদ্ধ করছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, দেশের প্রধান বিরোধী দল যদি এ ধরনের ফ্যাসিস্ট সংগঠনকে উস্কানি দেয়, তাদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালায় সে ক্ষেত্রে এদের নিষিদ্ধ করতে সরকারকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই এ সমস্ত বিল সংসদে পাস করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জামায়াত-শিবিরের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মুহ’র্তে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে চাই। পরে জামায়াত-শিবিরসহ সকল জঙ্গী সংগঠনগুলোর অর্থদাতা, ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত সোমবার সচিবালয়ে জামায়াত-শিবিরের তান্ডবের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ নয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বলেন, এ ধরণের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলা যাবে না। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শিবিরের কর্মীরা সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কিছু ব্যর্থতা থাকতে পারে।
জামায়াতের ডাকা আজ বুধবারে বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয়া ঠিক হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনা কারণে তারা রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর এবং সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে। এই মুহূর্তে এই ফ্যাসিষ্ট সংগঠনকে রাজপথে নামিয়ে জনগণের সম্পদ ধংসের অনুমতি দেয়া উচিত নয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শেষ পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত তাদের সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় যতই শেষের দিকে এগোচ্ছে, ততই বিএনপি-জামায়াত জোট এ বিচার বানচালের জন্য অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশসহ আইনস শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের যে সকল কর্মকর্তা, সদস্য, নিরীহ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন তাঁদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং তাদের আশু আরোগ্য কামনা করা হয়। এ ছাড়াও যাঁরা গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়েছেন, সম্পদ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতিও সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি এ ধরনের চোরাগুপ্তা হামলার নিন্দা জানিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. বদিউজ্জমান ভূঁইয়া ডাব্লু, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আসীম কুমার উকিল, উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য একেএম এনামুল হক শামিম, সুজিত রায় নন্দী উপ-কমিটির সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.