অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে ১৩ ইন্টারনেট গেটওয়েতে অভিযান- বৈধপথে কলরেট অনেক বেড়ে গেছে by ফিরোজ মান্না

 অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য সোমবার রাতে ১৩টি আইজিডব্লিউতে অভিযান চালানো হয়েছে। এতে মঙ্গলবার বৈধ পথে কলরেট অনেক বেড়ে গেছে। অবৈধ ভিওআইপি করার ক্ষেত্রে আইজিডব্লিউই (ইন্টারনেট গেটওয়ে) হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য এক হাজার ৪টি ভিএসপি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়ার পর বিটিআরসি এই অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, ২৬টি আইজিডব্লিউসহ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে কম বেশি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিটিআরসি মাঝে মধ্যে অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও কখনও আইজিডব্লিউর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালায়নি। এবার বিটিআরসি আইজিডব্লিউগুলোতে অভিযান পরিচালনা করায় ভিএসপি লাইসেন্সপ্রাপ্তরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে সরকারী মোবাইল অপারেটর টেলিটক অবৈধ ভিওআইপি অপ্রতিরোধ্য। গত ২৩ জানুয়ারি মালয়েশিয়া থেকে এক ব্যক্তি তার এক আত্মীয়ের কাছে বেশ কয়েক দফা ফোন করে। প্রতিটি ফোনই টেলিটকের বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইল স্কিনে ভেসে উঠে। টেলিটকের নম্বরগুলো হচ্ছে- ০১৫৫৪৯২৪৯৫৭, ০১৫৫৪১৫৯৭২৮, ০১৫৫৪৭১৯০৫১, ০১৫৫৪৮০৫০৬, ০১৫৫৪০৭৪৯৬, ০১৫৫৪০৭৪২৯৬, ০১৫৫৪৭১৯০৫৪, ০১৫৫৪১৪৪৭০। এক দিনেই একই নম্বরে টেলিটকের এতগুলো নম্বরের মাধ্যমে মালয়েশিয়া প্রবাসী তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। অবৈধ ভিওআইপির জন্য টেলিটক বহু আগে থেকেই একটা বদনাম ঘাড়ে নিয়ে চলছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন জনকণ্ঠকে জানান, কোন প্রকার অবৈধ ভিওআইপি করতে দেয়া হবে না। ভিওআইপির বিরুদ্ধে (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) বন্ধ করার জন্যই আমরা ভয়েস সার্ভিস প্রোবাইডরের এক হাজার ৪টি (ভিএসপি) লাইসেন্স দিয়েছি। রাষ্ট্রের ক্ষতি করে অনেকে টাকার পাহাড় গড়ে তুলবে তা হবে না। অবৈধ ভিওআইপি যেই করুক তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে বহু প্রভাবশালী ‘টাকার পাহাড়’ গড়ে তুলেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা টেলিযোগাযোগ খাত থেকে দেশে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এর আগে বিটিআরসি নামমাত্র অভিযান চালিয়ে দু’একজন অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে ধরে আইনের আওতায় নিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাবান প্রভাবশালীরা কেউ ধরা পড়েনি। এখনও এ ব্যবসা করে রাতারাতি সোনার হরিণের মালিক হচ্ছেন অনেকেই। তাদের হাতে প্রতিদিন হাওয়ায় আসছে কোটি কোটি টাকা। হাওয়ার টাকায় পাহাড় গড়েছেন। সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির পাল্লায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ভিওআইপিকে উন্মুক্ত করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিটিআরসি ভিওআইপি লাইসেন্সের আবেদনপত্র জমা নিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাইসেন্স দেয়া হবে।
বিটিআরসি গঠিত কমিটি গত বছরের ডিসেম্বরে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য একটি শক্তিশালী ‘অবৈধ ভিওআইপি অনুসন্ধান’ নামে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি দীর্ঘ তিন মাস বিটিসিএল ও টেলিটকের তদন্ত শেষে অবৈধ ভিওআইপি করার ১৩টি কারণ খুঁজে পান। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল। বর্তমানে ওই সুপারিশগুলো চাপা পড়ে গেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে সেখানেও তদন্ত রিপোর্ট চাপা পড়ে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনিল কান্তি বোসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), অত্যাধুনিক সফটওয়ার, রেডিও লিঙ্ক ব্যবহার, কললিস্ট মুছে ফেলাসহ মোট ১৩টি কারণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে। এগুলো বন্ধ হলে অবৈধ ভিওআইপি বহু গুণে কমে যাবে। গত বছরের এই সময়েও প্রতিদিন বৈধ পথে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল দেশে আসত। বর্তমানে তা ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মিনিটে দাঁড়িয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মিনিট কল অবৈধ পথে যাচ্ছে। এই কল থেকে সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। একটি নির্দিষ্ট চক্র অনেক দিন ধরেই ওই ব্যবসা করে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.