খুলনাতেও সেই দর্শক-খরা by তারেক মাহমুদ

টিকিটের দাম কমিয়েও লাভ হচ্ছে না। দর্শক টানতে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ব্যর্থ দ্বিতীয় বিপিএল। ব্যর্থতা আরও প্রকটভাবে ধরা পড়ল খুলনা পর্বে। ঢাকার বাইরে ক্রিকেট হলেই দর্শক উপচে পড়ে।
এবারের বিপিএল সেই ধারণাকেও মিথ্যা প্রমাণ করে দিল। একচিলতে ক্রিকেটের সঙ্গে চিয়ার লিডারদের রঙিন নাচ, লাউড স্পিকারে ধুমধাড়াক্কা গান, গ্যালারিভর্তি দর্শক—এই হলো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যঞ্জন। কিন্তু এবারের বিপিএলে দর্শকখরা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি রাঁধুনীদের নতুন করে ভাবাতে পারে। ২০ ওভারের ক্রিকেটের স্বাদটা যে ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না জিবে! কোথাও কিছুর কমতি রয়ে যাচ্ছে কি? নয়তো টক-ঝাল-মিষ্টির টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিপিএল এত পানসে হবে কেন! বিপিএলের দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়েরাও এই প্রসঙ্গ উঠলেই হা-হুতাশ করছেন। ঢাকায় বরিশাল বার্নার্সের অধিনায়ক ব্র্যাড হজ তো বলেই ফেলেছিলেন, দর্শকপূর্ণ গ্যালারিতে গত বিপিএলের ফাইনাল খেলার মজাটাই ছিল অন্য রকম। এবার সেই মজা নেই।
দর্শকখরা প্রথম বিপিএলের শুরুর দিকেও ছিল। কিন্তু টিকিটের দাম কমানোর পর গ্যালারি আস্তে আস্তে ভরে উঠতে থাকে। সেটি চট্টগ্রামে গিয়ে পেয়েছিল পূর্ণতা। এবারের বিপিএলের ঢাকা পর্বের অবস্থাও হয়েছে গতবারের শুরুর মতোই—গ্যালারি ফাঁকা। দাম কমানো হলো এবারও। এরপর যেহেতু খেলাটা খুলনায় চলে এল, আশা করা হচ্ছিল, এবার দর্শকের ঢল নামবে। খুলনায় এমনিতে খেলা-টেলা কম হয় বলে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ম্যাচ দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দর্শক। দেশি-বিদেশি মিলে বিপিএলেও অনেক তারকা। দর্শকেরা আসতেই পারত মাঠে। অথচ মাঠে আসা দূরের কথা, মাঠের বাইরের আলোচনায়ও পিছিয়ে বিপিএল। এখানকার মানুষ বরং বেশি ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রীর আগামীকালের খুলনা সফর নিয়ে।
শহরে আলোকসজ্জা হয়েছে, কাল সকালে খুলনা রয়েল বেঙ্গলস গানটান বাজিয়ে একটা র্যালিও করল শহরে। কিন্তু সেটাও যে নগরে বিপিএল-উত্তাপ ছড়াতে পারেনি, তার প্রমাণ গ্যালারির ভাঙা হাট। কাল প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসের শেষ দিকেও সব মিলিয়ে হাজার খানেক দর্শক হয়নি গ্যালারিতে। এই দর্শকদের মধ্যেও আবার ‘বৈষম্য’ করা হয়েছে এবং সেটার শিকার পূর্ব গ্যালারির দর্শকেরা। তারা টিকিট কিনেছে ২০০ টাকা দিয়ে, পশ্চিম গ্যালারির টিকিটের দামও একই। অথচ পশ্চিম গ্যালারির দর্শকেরা বসল চেয়ারে, পূর্ব গ্যালারির দর্শকেরা চেয়ারবিহীন গ্যালারিতে!
অন্যান্য স্টেডিয়ামের মতো ২০১১ বিশ্বকাপে নতুন করে সাজে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামও। নতুন গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড, নতুন প্রেস বক্স, গ্যালারিতে বসেছিল চেয়ার। কিন্তু গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সময় দেখা গেল পূর্ব গ্যালারির অনেক চেয়ারই ভেঙে গেছে। নষ্ট চেয়ারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় বিপিএলের আগে তুলে ফেলা হয়েছে ওই গ্যালারির সব চেয়ার। সংখ্যাটা প্রায় চার হাজারের মতো বলে জানালেন এখানকার ভেন্যু ব্যবস্থাপক কাজী আবদুস সাত্তার। পূর্ব গ্যালারির দিকে তাকিয়ে এখন আর বোঝার উপায় নেই, এটা বিশ্বকাপের বিকল্প ভেন্যু শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেরই একটা অংশ।
সব চেয়ার একসঙ্গে তুলে ফেলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভেন্যু ব্যবস্থাপক বলেছেন, ‘সব চেয়ারই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কোনোটা ফেটে গেছে, কোনোটা ভেঙে গেছে, কোনোটা উঠে গেছে। সেগুলো থাকলে দর্শক বসতে পারত না। সে জন্য বিপিএলের আগে সব চেয়ার তুলে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ ভবিষ্যতে এই গ্যালারিতে আবার চেয়ার বসানো হবে বলে আশা দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু একই সঙ্গে বসানো পশ্চিম গ্যালারির চেয়ার এখনো ঠিক থাকলেও পূর্ব গ্যালারির চেয়ার কেন মাত্র দুই বছরের মধ্যে বসার অযোগ্য হয়ে পড়ল? এমন নয় যে, চেয়ার বসানোর পর এ মাঠে খুব বেশি খেলা হয়েছে আর সেসব দেখতে উপচে পড়া দর্শক হয়েছে মাঠে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ বলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি টেস্ট আর দুটি ওয়ানডে। এ ছাড়া মহিলা ক্রিকেট আর জাতীয় লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া গত দুই বছরে বলতে গেলে খেলাই হয়নি এ মাঠে। দর্শক ঠিকমতো বসার আগেই চেয়ার ভেঙে যাওয়ার কারণ গুণগত মান। ‘চেয়ারগুলো খুবই বাজে ছিল। রোদের তাপে সব ফেটে গেছে কিংবা ফ্রেম থেকে উঠে চলে এসেছে’—জানিয়েছে বিসিবির একটি সূত্র।
চেয়ারবিহীন গ্যালারিতে দর্শকশূন্য বিপিএল যেন পুরো আয়োজনেরই প্রতীকী চিত্র।

No comments

Powered by Blogger.